আজকাল ওয়েবডেস্ক: মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলায় ২৯ বছর বয়সী এক সরকারি চিকিৎসকের রহস্যমৃত্যু ঘিরে উত্তেজনা বাড়ছে। চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার প্রশান্ত ব্যাংকার এবং এক পুলিশ সাব-ইনস্পেক্টরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে ব্যাংকারের পরিবার দাবি করেছে, তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন না, বরং স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেছিলেন।

অভিযুক্তর ভাই ও বোন জানান, ব্যাংকারকে পুনের এক ফার্মহাউস থেকে ধরা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভুল। ভাই বলেন, “আমরাই ওকে ফোন করে আত্মসমর্পণের কথা বলেছিলাম। ওর সোশ্যাল মিডিয়া রেকর্ড এবং কল ডিটেলস পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আমার ভাই কখনো ওই চিকিৎসককে ফোন করেনি; বরং তিনিই বারবার ফোন করে ওকে হয়রানি করতেন।”

পরিবারের দাবি, ওই চিকিৎসক তাদের বাড়ির ভাড়াটে ছিলেন এবং প্রায় এক বছর ধরে প্রতি মাসে ৪,০০০ টাকা ভাড়া দিতেন। ব্যাংকারের বোন বলেন, “গত মাসে ভাই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ফলটনে বিশ্রাম নিতে আসে। ওই চিকিৎসক ওকে চিকিৎসা করেছিলেন, তখনই দুজনের মধ্যে পরিচয় হয়। প্রায় ১৫ দিন আগে চিকিৎসক বিয়ের প্রস্তাব দেন, কিন্তু ভাই তা প্রত্যাখ্যান করে। দীপাবলির সময় ওকে কিছুটা অস্থির মনে হচ্ছিল, তবে আমরা ভেবেছিলাম কাজের চাপেই এমন হচ্ছে। আমাদের মা তাঁকে নিজের মেয়ের মতোই দেখতেন।”

আরও পড়ুন: ১৫ তরুণীর নগ্ন ছবি হার্ড ডিস্কে! 'আমার ছবিও ছড়িয়ে দেবে না তো?', আতঙ্কে লিভ ইন সঙ্গীকে শেষ করলেন তরুণী

অভিযুক্তের দাবি: “বিয়ে ও সম্পর্কের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন চিকিৎসক”। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত প্রশান্ত ব্যাংকার তদন্তকারীদের কাছে দাবি করেছেন যে ওই চিকিৎসক তাঁকে বিয়ের জন্য এবং শারীরিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চাপ দিচ্ছিলেন। এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “অভিযুক্ত ও মৃতার মধ্যে প্রচুর চ্যাট ও কল রেকর্ড পাওয়া গেছে, যেখানে চিকিৎসক মানসিক চাপে থাকার কথা বলেছেন।”

চিকিৎসকের মৃত্যুর পর তাঁর হাতের তালুতে লেখা একটি নোট উদ্ধার হয়েছে, যেখানে ওই টেকি ও এক পুলিশ সাব-ইনস্পেক্টরের নাম উল্লেখ রয়েছে। সেই সূত্র ধরে পুলিশের পক্ষ থেকে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (BNS)-এর ধারা ৬৪ (ধর্ষণ) ও ১০৮ (আত্মহত্যায় প্ররোচনা) অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত সাব-ইনস্পেক্টরও চিকিৎসকেরই জেলা, বিড-এর বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে আগের কোনও  সম্পর্ক ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সাতারা জেলার পুলিশ সুপার তুষার দোশি জানান, “একজন মহিলা নিজের জীবন শেষ করেছেন। তাঁর অভিযোগগুলির কিছুটা সত্যতা থাকতে পারে। তিনি আগে কোনও  লিখিত অভিযোগ করেননি, সেটাই তদন্তের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা টেকনিক্যাল প্রমাণ ও হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট যাচাই করছি। কোনও  ব্ল্যাকমেইলের দিক আছে কি না, তা তদন্তে প্রকাশ পাবে।”

মৃত্যুর পর গ্রামে উত্তেজনা, পরিবারের দাবি—ফাঁসি হোক অভিযুক্তদের। চিকিৎসকের মৃতদেহ শুক্রবার রাতে বিড জেলার ওয়াডওয়ানি গ্রামে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। পরিবারের সদস্যরা অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবি তুলেছেন। এক আত্মীয় সংবাদমাধ্যমে বলেন, “ও প্রায়ই হয়রানির অভিযোগ করত, কিন্তু কেউ গুরুত্ব দেয়নি।”

অন্য এক আত্মীয়ের দাবি, চিকিৎসককে প্রায়ই রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট বদলানোর জন্য চাপ দিতেন। তিনি বলেন, “ফলটন সাব-ডিস্ট্রিক্ট হাসপাতালে তিনি প্রায়ই অটপসি ডিউটিতে থাকতেন। স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক লোক তাঁকে রিপোর্ট পরিবর্তনের জন্য বাধ্য করতেন। তিনি বারবার অভিযোগ জানিয়েছিলেন, বিশেষত ওই সাব-ইনস্পেক্টরের বিরুদ্ধেই, কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।”

মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীস ঘটনাটিকে “অত্যন্ত দুঃখজনক ও সংবেদনশীল” বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “একজন তরুণ চিকিৎসক নিজের হাতে আত্মহত্যার নোট লিখে প্রাণ দিয়েছেন। এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের স্থগিত করা হয়েছে, এবং গ্রেপ্তারও হয়েছে। কাউকেই ছাড়া হবে না। কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমন সংবেদনশীল বিষয়ে রাজনৈতিকীকরণ করা অনুচিত।”

এদিকে আদালত অভিযুক্ত টেকি প্রশান্ত ব্যাংকারকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত চার দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে। সাব-ইনস্পেক্টরও শনিবার রাতেই আত্মসমর্পণ করেন। বর্তমানে পুলিশের তদন্তে গুরুত্ব পাচ্ছে চিকিৎসক ও অভিযুক্তদের সম্পর্কের প্রকৃতি, তাঁদের মধ্যে কথোপকথনের ডিজিটাল প্রমাণ, এবং আত্মহত্যার নোটের সত্যতা। পুরো রাজ্যে চিকিৎসক সমাজ এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের দাবি তুলেছে।