আজকাল ওয়েবডেস্ক: আগরপাড়া, দিনহাটা। দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গ। দুই জায়গায়, দুই ব্যক্তির একই পদক্ষেপের চেষ্টা। কারণ, একই। এসআইআর আতঙ্ক। দিনহাটায় আগরপাড়া কাণ্ডের ছায়া। প্রদীপ করের পর, দিনহাটার খাইরুল শেখ। পেশায় কৃষক। বুধবার জানা গিয়েছে, খাইরুল বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এসআইআর আতঙ্কে। তাঁকে তড়িঘড়ি উদ্ধার করে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে।
বুধবার তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি জানান, 'প্রদীপ বাবুর বাড়িতে থাকতে থাকতে, তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে বলতে আমার কাছে খবর এল, দিনহাটায় আরও এক ব্যক্তি এসআইআর-এর ভয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন, বিষ খেয়ে। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।'
আরও পড়ুন: 'জাস্টিস ফর প্রদীপ কর', আগরপাড়ায় অভিষেকের গলায় নয়া স্লোগান! কাল মিছিল তৃণমূলের...
দিনহাটা বিধানসভার বুড়িরহাট-২ নম্বর অঞ্চলের জিৎপুর গ্রামে এসআইআর সংক্রান্ত আতঙ্কে এক কৃষক বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে জানা গিয়েছে। বর্তমানে তিনি আশঙ্কাজনক অবস্থায় কোচবিহার এম.জে.এন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
খাইরুল শেখ (৬৫) নামে ওই কৃষকের পরিবারের অভিযোগ, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তাঁর নাম ছিল সঠিকভাবেই খাইরুল শেখ। কিন্তু এসআইআর চালু হওয়ার পর নবনির্মিত ভোটার তালিকায় তাঁর নাম ভুলভাবে লেখা হয়েছে খয়রু শেখ। এই নামের অমিলের কারণে তিনি ভয় পেয়েছিলেন ভবিষ্যতে তাঁর নাগরিকত্ব নিয়ে জটিলতা দেখা দিতে পারে এবং তিনি ভোটাধিকার হারাতে পারেন।
পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, নাম সংশোধনের জন্য বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ঘুরে বেড়াতে হবে এবং তাতে খরচও প্রচুর হবে বলে জানানো হয়েছিল। বয়সজনিত কারণে তিনি সেই ঝক্কি সামলাতে পারবেন না বলে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এরপরেই বুধবার দুপুরে তিনি ঘাস মারার বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে কোচবিহার এম.জে.এন মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালের একটি সূত্রে জানা গিয়ছে, বিষটি অত্যন্ত মারাত্মক ছিল এবং তাঁর কিডনি ও অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে তাঁর শারীরিক অবস্থা উদ্বেগজনক হলেও তিনি সংজ্ঞায় আছেন।
ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং কোচবিহারের তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি বলেন, 'যদি ভুলই থাকে তবে সেই ভুল তো করেছে নির্বাচন কমিশন। ওই ব্যক্তির দোষ কোথায়? এই এসআইআর-এর নামে একটা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে রাজ্য-সহ গোটা দেশ জুড়ে। দিশেহারা হয়ে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। ভোটের আগে এই জিনিসের অর্থ হল বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা। আমরা সর্বোতভাবে পরিবারটির পাশে আছি।'
এদিন ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে পৌঁছন কোচবিহার জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক। তিনি ওই ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সান্ত্বনা দেন এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। অভিজিৎ জানান, '২০০২ সালে তাঁর নাম ছিল খাইরুল শেখ, এখন সেটা ভুলভাবে খয়রু শেখ হয়েছে। এই ভয় ও মানসিক চাপেই তিনি বিষ খেয়ে ফেলেছেন। ডাক্তাররা বলছেন, বিষটি খুব শক্তিশালী—দুই-তিন দিনের মধ্যে কিডনি ফেল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।'
এই ঘটনায় জিৎপুর এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঘোষের কথার প্রতিধ্বনি করে স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেছেন, এসআইআর প্রক্রিয়ায় ভুলভ্রান্তি ও তথ্য বিভ্রাটের জেরে সাধারণ মানুষ ভয় পাচ্ছেন।
