আজকাল ওয়েবডেস্ক: এবার থেকে আপনার ইএমআই–এর অঙ্ক বদলাবে আগের চেয়ে অনেক দ্রুত। কারণ, ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নতুন নিয়ম কার্যকর হয়েছে। এই নতুন নির্দেশিকায় আরবিআই ঋণের ‘স্প্রেড’–এর নির্দিষ্ট অংশ পরিবর্তনের জন্য পূর্বনির্ধারিত তিন বছরের লক-ইন পিরিয়ড বাতিল করেছে।


স্প্রেড হল ব্যাঙ্কের দ্বারা ধার্য একটি অতিরিক্ত চার্জ, যা বেঞ্চমার্ক লেন্ডিং রেট–এর ওপরে ধার্য করা হয়। সহজভাবে বললে, এটি হল সেই বাড়তি শতাংশ যা ব্যাঙ্ক ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে আদায় করে তার অপারেশনাল খরচ ও লাভের মার্জিন পূরণ করতে।


আরবিআই–এর নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, “ব্যাঙ্কগুলি তিন বছরের অপেক্ষা না করেই ঋণগ্রহীতার সুবিধার্থে স্প্রেডের অন্যান্য অংশ কমাতে পারবে।” এর মানে, যদি আরবিআই তার বেঞ্চমার্ক সুদের হার কমায় বা আপনার ক্রেডিট স্কোর উন্নত হয়, তাহলে আপনি অনেক দ্রুতই ইএমআই হ্রাসের সুফল পাবেন।


এই নিয়ম কার্যকর হওয়ায়, ব্যাঙ্ক এখন থেকে যখনই তাদের ঋণের সুদের হার কমাবে, তখনই তারা নন-ক্রেডিট-রিস্ক অংশের স্প্রেডও কমাতে পারবে। ফলে ঋণগ্রহীতাদের কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে না সুদের হার হ্রাস বা ক্রেডিট স্কোর উন্নতির পূর্ণ সুফল পেতে। বিশেষ করে ফ্লোটিং ইন্টারেস্ট রেট–এর ঋণগ্রহীতারা এই পরিবর্তনের সরাসরি সুবিধা পাবেন।

আরও পড়ুন: প্রশান্ত কিশোরকে নির্বাচন কমিশনের নোটিশ, কী এমন ঘটল


ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি সাধারণত তাদের লেন্ডিং রেট নির্ধারণ করে রেপো রেটের ওপর ভিত্তি করে, যার সঙ্গে স্প্রেড যুক্ত হয়। উদাহরণস্বরূপ, বর্তমানে রেপো রেট ৫.৫%, আর স্প্রেড সাধারণত ২.৫% থেকে ৩% পর্যন্ত হয়। ফলে বাড়ি কেনার ঋণের সুদের হার দাঁড়ায় বছরে ৮% থেকে ৮.৫%। স্প্রেড নির্ভর করে ঋণগ্রহীতার ক্রেডিট স্কোর, ঋণের মেয়াদ, এবং ব্যাঙ্কের লাভের নীতি–র ওপর।


তবে, গত কয়েক মাসে আরবিআই একাধিকবার সুদের হার কমালেও সেই সুবিধা খুব ধীরে পৌঁছেছে সাধারণ ঋণগ্রহীতাদের কাছে। ২০২৫ সালে আরবিআই মোট তিনবারে ১% (১০০ বেসিস পয়েন্ট) রেপো রেট কমিয়ে বর্তমানে ৫.৫% করেছে—যা আগস্ট ২০২২–এর পর সর্বনিম্ন।


রেপো–ভিত্তিক ঋণে সাধারণত তিন মাস অন্তর সুদের হার পুনর্নির্ধারিত হয়। কিন্তু MCLR–এর ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন কার্যকর হতে ৬–১২ মাস পর্যন্ত সময় লাগে। কারণ, MCLR কেবল রেপো রেটের ওপর নয়, বরং ব্যাঙ্কের তারল্য পরিস্থিতি ও তহবিল সংগ্রহের খরচ–এর ওপরও নির্ভরশীল।


আরবিআই–এর নতুন সিদ্ধান্তে দ্রুত হারে সুদ পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি হলেও, ঋণগ্রহীতাদের সক্রিয় হতে হবে। নিজের ঋণের সুদের হার ও বর্তমান বাজারদর মিলিয়ে দেখে নিতে হবে। যদি হ্রাস ঘটে থাকে, ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করে কম সুদের দাবিতে আবেদন করতে হবে। একইভাবে, ক্রেডিট স্কোর উন্নত হলে ব্যাঙ্ককে তা জানিয়ে সুদের হারে ছাড় চাওয়া যেতে পারে।


আরবিআই আরও একবার নিশ্চিত করেছে যে, ফ্লোটিং ইন্টারেস্ট রেট–এর ঋণগ্রহীতাদের জন্য ফিক্সড রেটে বদলে নেওয়ার সুযোগ থাকবে। আরবিআই জানিয়েছে, “ব্যাঙ্ক চাইলে ঋণের রিসেটের সময় গ্রাহককে ফিক্সড রেটে পরিবর্তনের বিকল্প দিতে পারে।” এছাড়াও, ঋণের মেয়াদকালে কতবার এই পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া হবে, সেটিও ব্যাঙ্ককে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।


এই নতুন নিয়মে স্বচ্ছতা ও দ্রুত সুবিধা—দুটোই বাড়বে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে সাধারণ ঋণগ্রহীতার হাতে থাকবে আরও বেশি আর্থিক নিয়ন্ত্রণ ও স্বস্তি।