আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা সংস্থা টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (টিসিএস) তার প্রায় ৮০ শতাংশ কর্মীর বেতন বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করেছে। এই বেতন বৃদ্ধি মূলত সংস্থার জুনিয়র এবং মিড-লেভেলের কর্মীদের জন্য প্রযোজ্য হবে। এই বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা এমন এক সময়ে করা হয়েছে যখন টিসিএস ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে যে তারা আগামী এক বছরে প্রায় ১২ হাজার কর্মী ছাঁটাই করবে।
টিসিএস-এর কর্মী হ্রাসের ফলে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে সম্ভাব্য পরিবর্তন সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা শুরু হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, আউটসোর্সিং মনোভাব, মার্কিন শুল্ক নীতির প্রভাব এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
আরও পড়ুন: দল ছাড়ার কোনও প্রশ্নই নেই, রাজনীতিতে মমতা ব্যানার্জি ছাড়া আর কিছু জানা নেই: কল্যাণ
শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা প্রদানকারীরা চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে সামান্য রাজস্ব বৃদ্ধির কথা জানিয়েছে। এই পারফরম্যান্স বিশ্বব্যাপী অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রভাবকে প্রতিফলিত করেছে। যার ফলে সংস্থাগুলিকে টাকা খরচ করতে ভাবতে হচ্ছে এবং ক্লায়েন্টদের সিদ্ধান্তে বিলম্ব হয়েছে।

বুধবার কর্মীদের কাছে পাঠানো এক ইমেলে, টিসিএসের সিএইচআরও মিলিন্দ লাক্কাড এবং সিএইচআরও মনোনীত কে সুদীপ নিশ্চিত করেছেন যে নতুন এবং পরিবর্তির বেতন ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে। ইমেলে লেখা ছিল, “সি৩এ এবং সমমানের গ্রেডভুক্ত সকল কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি করা হবে। যা আমাদের কর্মীসংখ্যার ৮০ শতাংশ। ১ সেপ্টেম্বর থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।” সেটিতে আরও লেখা ছিল, “আমরা একসঙ্গে টিসিএস-এর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলিছ, আপনাদের নিষ্ঠা এবং কঠোর পরিশ্রমের জন্য আপনাদের প্রত্যেককে ধন্যবাদ।”
জুলাই মাসের শেষ দিকে ১২ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের কথা ঘোষণা করেছিল টিসিএস। একটি বার্তায় টিসিএস জানিয়েছিল, তারা তাদের মোট কর্মীর ২ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ১২ হাজার জনকে আগামী এক বছরের মধ্যে ছাঁটাই করবে। বিশ্বজুড়ে এই কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত মূলত মধ্য ও উচ্চ স্তরে কর্মরতদের প্রভাবিত করবে। টিসিএস-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত প্রযুক্তিগত রূপান্তরের ফলে ব্যবসায়িক কাঠামোয় বদল আনতে হচ্ছে। চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে টিসিএস-এর মোট কর্মী সংখ্যা ছিল ৬,১৩,০৬৯।
সম্প্রতি সংস্থাটি তাদের বেঞ্চ নীতি (bench policy) পরিবর্তন করেছে, যেখানে বলা হয়েছে কোনও কর্মী বছরে সর্বোচ্চ ৩৫ দিন প্রজেক্টে না থেকেও বসে থাকতে পারবেন। বছরে অন্তত ২২৫ দিন কাজ করতে হবে। এই নতুন শর্ত নিয়ে কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। এর পাশাপাশি, সংস্থাটি প্রায় ৬০০ অভিজ্ঞ কর্মীর নিয়োগ বিলম্বিত করেছে। এই প্রেক্ষাপটে, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ছাঁটাই এখন একটি সাধারণ প্রবণতা হয়ে উঠছে। Layoffs.fyi-এর মতে, ২০২৫ সালেই বিশ্বজুড়ে ১৬৯টি প্রযুক্তি সংস্থায় প্রায় ৮০ হাজার কর্মী ছাঁটাই হয়েছেন। শুধু মাইক্রোসফটই চলতি বছরে ১৫ হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছে, যা তাদের মোট কর্মীর প্রায় ৭ শতাংশ। মে মাসে কর্মী ছাঁটাইয়ের কথা ঘোষণা করেছে আইবিএমও। একলপ্তে আট হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছে সংস্থাটি। সবচেয়ে বেশি কর্মী ছেঁটে ফেলা হয়েছে হিউম্যান রিসোর্স বা মানবসম্পদ (HR) বিভাগ থেকে।
