আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রতি বছর দীপাবলির সময় ভারতের অসংখ্য কর্মজীবী মানুষ উৎসব বোনাস পান। গড়ে ২০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত, যা নির্ভর করে তাদের পদ, সংস্থা ও শিল্পক্ষেত্রের উপর। এই বোনাস যদি সচেতনভাবে ব্যবহার করা যায়, তবে এটি হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি। 


জরুরি তহবিল তৈরি বা বাড়ানো
বিনিয়োগ ভাবার আগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। আপনার বোনাসের ২০–৪০% রাখুন একটি উচ্চ-সুদের সেভিংস অ্যাকাউন্টে বা লিকুইড মিউচুয়াল ফান্ডে। জরুরি তহবিল ৩–৬ মাসের আবশ্যিক খরচ— যেমন ভাড়া, EMI, বাজার ও বিল— কাভার করতে হবে। এতে অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতেও আর্থিক চাপ কমে।


ঋণ পরিশোধে মনোযোগ দিন
ঋণ শোধ করাই অনেক সময় সবচেয়ে লাভজনক “বিনিয়োগ”। ক্রেডিট কার্ড বা পার্সোনাল লোন সাধারণত ১৮–৪০% পর্যন্ত সুদ নেয়— যা কোনও নিরাপদ বিনিয়োগ দিতে পারে না। ধরুন, আপনি ২০,০০০ টাকা আগাম পরিশোধ করলেন, তাতে বছরে প্রায় ৭,০০০–৮,০০০ টাকা সুদ বাঁচবে। ঋণ কমলে ক্রেডিট স্কোরও উন্নত হয়, ভবিষ্যৎ নগদ প্রবাহ বাড়ে এবং মানসিক শান্তি আসে।

আরও পড়ুন: তামিলনাড়ুতে ধরা পড়ল ‘শয়তানের মাছ’, এবার কী অপেক্ষা করে আছে


কম খরচের ইনডেক্স ফান্ডে বিনিয়োগ
নতুন করব্যবস্থায় ELSS বা NPS-এর মতো ছাড় কমেছে, তাই এখন ফোকাস হওয়া উচিত সম্পদ সৃষ্টিতে। Nifty 50, Nifty Next 50 বা Nifty 500-ভিত্তিক লো-কস্ট ইনডেক্স ফান্ডে বিনিয়োগ করুন। এগুলোর এক্সপেন্স রেশিও ০.৩%-এর নিচে, ফলে দীর্ঘমেয়াদে অনেক অ্যাকটিভ ফান্ডকেও ছাড়িয়ে যায়। পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় ধরে বিনিয়োগ রাখলে কম্পাউন্ডিং-এর শক্তি কাজে লাগবে।


অবসরকালীন সঞ্চয় বাড়ান
যারা নিশ্চিত রিটার্ন চান, তাদের জন্য PPF (Public Provident Fund) এখনও অন্যতম সেরা বিকল্প। এতে ৭–৮% হারে করমুক্ত, যৌগিক সুদে রিটার্ন মেলে এবং সরকার-নিরাপত্তা রয়েছে। নিয়মিত বছরে সামান্য পরিমাণ জমালেও ১৫–২০ বছরে তা বিশাল পরিমাণে বৃদ্ধি পায়।


সোনায় বৈচিত্র আনুন
গোল্ড ETF বা গোল্ড মিউচুয়াল ফান্ড এখন মুদ্রাস্ফীতি থেকে সুরক্ষার অন্যতম উপায়। সোনা গত দশকে গড়ে ৮–১০% বার্ষিক রিটার্ন দিয়েছে এবং বাজারে অস্থিরতার সময় পোর্টফোলিওকে স্থিতিশীল রাখে। আপনার বোনাসের ১০–১৫% সোনায় রাখলে মুদ্রা অবমূল্যায়ন ও শেয়ারবাজারের ওঠানামার বিরুদ্ধে এক ধরণের হেজ তৈরি হয়।


স্থির আয়ের উৎসে বিনিয়োগ
যারা কম ঝুঁকি নিতে চান, তারা শর্ট-ডিউরেশন ডেট ফান্ড, টার্গেট ম্যাচিউরিটি বন্ড ETF বা ফিক্সড ডিপোজিটে বিনিয়োগ করতে পারেন। এসব যন্ত্র ৬–৮% রিটার্ন দেয় এবং স্থির আয় নিশ্চিত করে। অবসর-প্রাপ্ত বা মাঝারি মেয়াদি লক্ষ্য যেমন শিক্ষা, বিবাহ বা ভ্রমণের জন্য এটি উপযুক্ত বিকল্প।
পরিবার ও নিজের উন্নয়নে ব্যয়


আপনার বোনাস কেবল ব্যক্তিগত সম্পদ নয়— এটি হতে পারে পরিবারের কল্যাণের হাতিয়ার। সন্তানের শিক্ষার জন্য SIP শুরু করা, বাবা-মায়ের হেলথ ইনস্যুরেন্স বাড়ানো, বা কোনো সামাজিক কারণে দান করা হতে পারে বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ। এছাড়া নিজের দক্ষতা বৃদ্ধিতে ১০–১৫% বরাদ্দ রাখুন — কোনও অনলাইন কোর্স, সার্টিফিকেশন বা স্কিল আপগ্রেড ভবিষ্যতে আয়ের সম্ভাবনা বাড়াবে।


এড়ানো উচিত যেসব ভুল
লাইফস্টাইল ইনফ্লেশন থেকে দূরে থাকুন — বোনাস পেয়ে খরচ বাড়ানো নয়, বরং সীমিত ১০–২০% আনন্দ খরচেই উৎসব উপভোগ করুন।
“নো-কস্ট EMI” প্রলোভনে পা দেবেন না — এতে অনেক সময় লুকানো খরচ থাকে।
বাজারের হাইপ বা “গত বছরের তারকা ফান্ডে” বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকুন। বরং একটি বৈচিত্রপূর্ণ, ইনডেক্স-ভিত্তিক পরিকল্পনা গড়ে তুলুন এবং তা দীর্ঘমেয়াদে বজায় রাখুন।


দীপাবলির বোনাস শুধু উৎসবের খুশি নয় — সঠিক পরিকল্পনায় এটি হতে পারে আপনার আর্থিক স্বাধীনতার প্রথম ধাপ।