আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থায় এখনও সবচেয়ে প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করছে ইউনিফাইড পেমেন্টস ইন্টারফেস। ইউপিআই লেনদেনের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসেই ইউপিআই লেনদেনের সংখ্যা পৌঁছেছে ১০৬.৩৬ বিলিয়নে যা ভারতের ডিজিটাল পেমেন্ট বিপ্লবের ধারাবাহিকতা বহন করছে।


ইউপিআই-এর মোট লেনদেনের আর্থিক পরিমাণও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৩.৩৪ লক্ষ কোটি টাকা। এই পরিসংখ্যান স্পষ্ট করে দেয় যে, ডিজিটাল পেমেন্ট এখন বিলাসিতা নয়, বরং দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে। রাস্তার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বড় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম পর্যন্ত— সর্বত্রই এখন ইউপিআই ব্যবহৃত হচ্ছে।


রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ইউপিআই লেনদেনের গড় পরিমাণ কমে গেছে। ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে যেখানে গড় লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১,৪৭৮, ২০২৫ সালের একই সময়ে তা নেমে এসেছে ১,৩৪৮-এ। অর্থাৎ, ছোট ও দৈনন্দিন কেনাকাটাতেও এখন ডিজিটাল পেমেন্ট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, এবং নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষও দ্রুত এই ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন।

আরও পড়ুন: ক্যান্সার কোষের জন্ম চুলের গোড়ায়, কীভাবে বুঝবেন


ব্যক্তি-থেকে-বণিক লেনদেন— অর্থাৎ দোকান ও পরিষেবা প্রদানকারীদের দেওয়া পেমেন্ট— বেড়েছে ৩৭ শতাংশ, যা এখন ৬৭.০১ বিলিয়ন। ওয়ার্ল্ডলাইন এই প্রবণতাকে “কিরানা ইফেক্ট” নামে অভিহিত করেছে, কারণ ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা দ্রুতগতিতে ডিজিটাল পেমেন্ট গ্রহণ করছে এবং এর ফলে দেশের খুচরো বাজারে ডিজিটাল লেনদেনের ব্যবহার বেড়েছে বিস্ময়করভাবে।


ভারতের QR-ভিত্তিক পেমেন্ট নেটওয়ার্কেও বিস্ফোরক বৃদ্ধি দেখা গেছে— মাত্র এক বছরে এটি ১১১ শতাংশ বেড়ে ৬৭৮ মিলিয়ন-এ পৌঁছেছে। একই সময়ে পয়েন্ট-অফ-সেল টার্মিনালের সংখ্যা বেড়েছে ২৯ শতাংশ, যা এখন ১১.২ মিলিয়ন, আর ভারত কিউআর ইনস্টলেশনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬.৭২ মিলিয়ন। 


রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রেও বড় পরিবর্তন এসেছে। জানুয়ারি ২০২৪ থেকে জুন ২০২৫-এর মধ্যে সক্রিয় ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা বেড়েছে ২৩ শতাংশ। প্রতি মাসে ক্রেডিট কার্ডে ব্যয়ের মোট পরিমাণ পৌঁছেছে ২.২ ট্রিলিয়ন-এ। যদিও গড় খরচ ৬ শতাংশ কমেছে, তবুও এটি প্রমাণ করে যে ক্রেডিট কার্ড এখন কেবল বিলাসবহুল খরচের জন্য নয়, বরং দৈনন্দিন কেনাকাটার জন্যও ব্যবহৃত হচ্ছে।
অন্যদিকে, ডেবিট কার্ড ব্যবহার ৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, কারণ ছোট লেনদেনে ক্রেতারা এখন ইউপিআই-ই পছন্দ করছেন— দ্রুত, ঝামেলাহীন ও বিনা ফি-র কারণে।


মোবাইল পেমেন্ট ক্ষেত্রেও দারুণ সাফল্য দেখা যাচ্ছে। এই খাতে বছরে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে লেনদেনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৮.৯ বিলিয়ন, যার মোট মূল্য ২০৯.৭ ট্রিলিয়ন। এটি প্রমাণ করে যে ভারত এখন সত্যিকার অর্থে একটি “মোবাইল-ফার্স্ট ডিজিটাল অর্থনীতি”, যেখানে সুবিধা, সহজলভ্যতা এবং তাৎক্ষণিক নিষ্পত্তিই নতুন প্রজন্মের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে।