অভিনেতা অক্ষয় কুমার সম্প্রতি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের এক অত্যন্ত উদ্বেগজনক ঘটনা প্রকাশ্যে এনেছেন, যেখানে তাঁর ১৩ বছর বয়সী কন্যা নিতারা সাইবার অপরাধের শিকার হতে পারত। মুম্বইয়ে একটি সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখার সময় তিনি এই চাঞ্চল্যকর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন এবং সমাজে ক্রমবর্ধমান এই ডিজিটাল অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ ও সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান।

 


অক্ষয় কুমার তাঁর বক্তৃতায় স্পষ্ট করে বলেন যে, সাইবার ক্রাইম এখন রাস্তার ছোটখাটো অপরাধের চেয়েও বড় এবং মারাত্মক হয়ে উঠছে। তিনি জোর দিয়েছিলেন যে, এই বিষয়ে শিশুদের স্কুল থেকেই শিক্ষিত করা প্রয়োজন। এই প্রসঙ্গে, তিনি যে ঘটনাটি ভাগ করে নেন, তা যেকোনও অভিভাবকের জন্যই এক গভীর সতর্কবার্তা।

 


অক্ষয় কুমার জানান, ঘটনাটি কয়েক মাস আগের। তাঁর মেয়ে নিতারা তখন একটি সাধারণ ভিডিও গেম খেলছিল, যা অপরিচিত খেলোয়াড়দের সাথে অনলাইনে খেলার এবং কথোপকথনের সুযোগ দেয়। এই ধরনের গেমে সাধারণত প্লেয়াররা খেলার পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে মেসেজ আদান-প্রদান করতে পারে। অক্ষয় বলেন, "আমি আপনাদের একটি ছোট ঘটনা বলতে চাই, যা আমার বাড়িতে ঘটেছিল। আমার মেয়ে একটি ভিডিও গেম খেলছিল, যেখানে আপনি একজন অজানা ব্যক্তির সাথে খেলতে পারেন। খেলতে খেলতে হঠাৎ সেখান থেকে মেসেজ আসে, যেমন 'কেমন আছেন?' বা 'আপনি কোথায় থাকেন?।"

 

আরও পড়ুন: সত্যিই কি জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছিল জুবিন গর্গের? কী লেখা রয়েছে গায়কের ময়না তদন্তের রিপোর্টে?

 

এই নিরীহ কথোপকথন দ্রুতই এক ভয়ঙ্কর মোড় নেয়। মেসেজ চালাচালির এক পর্যায়ে, অপরিচিত সেই ব্যক্তিটি নিতারাকে জিজ্ঞাসা করে, "আপনি কি ছেলে না মেয়ে?" নিতারা স্বাভাবিকভাবেই উত্তর দেয়, "মেয়ে।" এর ঠিক পরেই যে বার্তাটি আসে, তা একজন অভিভাবককে স্তম্ভিত করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। সেই ব্যক্তি সরাসরি প্রশ্ন করে বসে, "আপনি কি আপনার নগ্ন ছবি পাঠাতে পারবেন?"

 

 

ভাগ্যক্রমে, নিতারা এই পরিস্থিতিতে ভয় পেয়ে গেলেও, সঠিক পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করেনি। অক্ষয় কুমার জানান, এই আপত্তিকর বার্তাটি দেখার সঙ্গে সঙ্গে নিতারা তৎক্ষণাৎ পুরো গেমিং ডিভাইসটি বন্ধ করে দেয়। এরপর সে দৌড়ে গিয়ে তার মা, অভিনেত্রী টুইঙ্কেল খান্নাকে পুরো বিষয়টি জানায়। নিতারার এই দ্রুত এবং সচেতন পদক্ষেপই তাকে একটি বড় বিপদ থেকে রক্ষা করেছে।

 


অক্ষয় তাঁর বক্তৃতায় এই ঘটনার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, "এভাবেই সবকিছু শুরু হয়। এটিও সাইবার অপরাধেরই একটি অংশ।" তিনি সমাজের প্রতিটি স্তরে, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে, সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

 


মেয়ের এই তিক্ত অভিজ্ঞতা অক্ষয় কুমারকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। তাই তিনি মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আবেদন জানান। তাঁর দাবি, রাজ্যের স্কুলগুলোতে শিশু-কিশোরদের সাইবার অপরাধের ভয়াবহতা এবং অনলাইন সুরক্ষার বিষয়ে সচেতন করার জন্য এক বিশেষ ক্লাস চালু করা হোক।

 


অক্ষয় কুমার অনুরোধ করেন, "আমি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করব যে, আমাদের মহারাষ্ট্র রাজ্যে প্রতি সপ্তাহে সপ্তম, অষ্টম, নবম এবং দশম শ্রেণির জন্য একটি 'সাইবার পিরিয়ড' বাধ্যতামূলক করা হোক, যেখানে শিশুদের এসব বিষয়ে শেখানো হবে।"

 


বলিউডের এই তারকার ব্যক্তিগত জীবনের এমন একটি ঘটনা প্রকাশ্যে আনা সাইবার সুরক্ষার গুরুত্বকে আরও বেশি করে জনসাধারণের সামনে তুলে ধরেছে। এই ঘটনা শুধু তারকা সন্তানরাই নয়, বরং ইন্টারনেটে সক্রিয় প্রতিটি শিশুরই ঝুঁকিতে থাকার বিষয়টি প্রমাণ করে। অক্ষয় কুমারের এই পদক্ষেপ এবং 'সাইবার পিরিয়ড'-এর দাবি বর্তমান ডিজিটাল যুগে শিশু সুরক্ষার জন্য এক সময়োপযোগী বার্তা।