রাজস্থানের কোটায় এক মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারালেন জনপ্রিয় টেলিভিশন শো 'শ্রীমদ রামায়ণ'-এর শিশু অভিনেতা বীর শর্মা ও তার বড়দাদা শৌর্য শর্মা। বীরের বয়স ছিল সবে আট বছর ও শৌর্য বছর ১৬-র। গত রবিবার ভোররাতে কোটার অনন্তপুরা এলাকার একটি বহুতল আবাসনে তাদের ফ্ল্যাটে আগুন লেগে এই দুই ভাই ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায় বলে জানা গিয়েছে। বীর শর্মা সোনি সাব চ্যানেলের এই পৌরাণিক ধারাবাহিকে 'পুষ্কল'-এর চরিত্রে অভিনয় করে পরিচিতি লাভ করেছিল।

পুলিশ সূত্রে খবর, রবিবার রাত প্রায় দু'টো নাগাদ দীপশ্রী বিল্ডিংয়ের চতুর্থ তলায় অবস্থিত শর্মা পরিবারের ফ্ল্যাটে আগুন লাগে। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, শর্ট সার্কিট থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ঘটনার সময় দুই ভাই বাড়িতে একা ছিল। তাদের বাবা জিতেন্দ্র শর্মা, যিনি একটি কোচিং সেন্টারের শিক্ষক, তখন একটি ভজন অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। অন্যদিকে, তাদের মা রিতা শর্মা, যিনি নিজেও একজন অভিনেত্রী, কাজের জন্য মুম্বইয়ে ছিলেন।
প্রতিবেশীরা ফ্ল্যাট থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখে দ্রুত সাহায্যের জন্য ছুটে আসেন। তাঁরা দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে দেখেন যে ড্রয়িং রুমে আগুন জ্বলছে এবং ধোঁয়ায় পুরো ফ্ল্যাট ভরে গিয়েছে। তাঁরা দ্রুত আবাসনের ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করে আগুন নিভিয়ে ফেলেন এবং দুই ভাইকে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করেন। সঙ্গে সঙ্গে বাবা জিতেন্দ্র শর্মাকে খবর দেওয়া হয় এবং দুই ভাইকেই স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে চিকিৎসকরা সেখানে তাদের মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্টেও নিশ্চিত করা হয়েছে যে আগুনের ফলে সৃষ্ট ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়েই তাদের মৃত্যু হয়েছে।
কোটা শহরের এসপি তেজস্বিনী গৌতম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, আগুন মূলত ফ্ল্যাটের ড্রয়িং রুমেই সীমাবদ্ধ ছিল। অন্যান্য ঘরে আগুন ছড়ায়নি, কিন্তু আসবাবপত্র এবং অন্যান্য জিনিসপত্র সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। শোবার ঘরে আগুন না পৌঁছালেও, বিষাক্ত ধোঁয়া দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় ঘুমন্ত অবস্থাতেই দুই ভাইয়ের শ্বাসরোধ হয়।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অনন্তপুরা থানায় ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইনটির ধারা এখন বিএনএসএস অ্যাক্টের ধারা ১৯৪) অধীনে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে এবং ঘটনার সঠিক কারণ ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে তদন্ত চলছে।
মুম্বই থেকে খবর পেয়ে দ্রুত কোটায় ফেরেন নিহতদের মা রিতা শর্মা। মর্মান্তিক এই ঘটনায় শর্মা পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দুই ছেলের মরদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। শোকের মধ্যেও শর্মা পরিবার এক মানবিক সিদ্ধান্ত নেন— দুই ছেলের চোখ দান করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তারা। পরিবারের ইচ্ছানুযায়ী চক্ষু ব্যাঙ্কে তাদের চোখ দান করা হয়েছে।
মৃত শৌর্য শর্মা, যে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তার স্বপ্ন অকালে ঝরে গেল। অন্যদিকে, শিশু অভিনেতা বীর শর্মা 'শ্রীমদ রামায়ণ' ছাড়াও 'বীর হনুমান' ধারাবাহিকেও অভিনয় করেছিল এবং শীঘ্রই তার একটি বলিউড ছবিতেও অভিষেক হওয়ার কথা ছিল, যেখানে তিনি সইফ আলি খানের ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করতেন। এই তরুণ প্রতিভাদের এমন করুণ মৃত্যুতে টেলিভিশন এবং অভিনয় জগৎ গভীরভাবে শোকাহত।
