আজকাল ওয়েবডেস্ক: ক্যানসার গবেষণায় নতুন করে আলোড়ন ফেলেছে এক অতি পরিচিত বুনো ফুল, ড্যানডেলিয়ন। সম্প্রতি এই গাছের শিকড়ের নির্যাস নিয়ে করা একটি গবেষণা সামনে এনেছে এমনই কিছু চমকপ্রদ তথ্য, যা ক্যানসার চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
ইউনিভার্সিটি অফ উইন্ডসর এবং ইউনিভার্সিটি অফ অটোয়ার গবেষকদের একটি যৌথ সমীক্ষা সম্প্রতি 'অনকোটার্গেট' নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। সেই গবেষণা অনুযায়ী, ল্যাবরেটরির নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ড্যানডেলিয়নের শিকড়ের নির্যাস মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৯৫ শতাংশেরও বেশি কোলন ক্যানসার কোষকে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে।

আরও পড়ুন: ‘ধরবে নাকি?’ পুরুষাঙ্গ দেখিয়ে কুপ্রস্তাব দেন প্রযোজক! টাকার বিনিময়ে সঙ্গমও করেন কামসূত্রের নায়িকা?
আরও পড়ুন: ২৬৪৫ লিটার স্তন্য উৎপন্ন হয় বধূর শরীরে! 'রোজ রাতে ৩ ঘণ্টা..' বিপুল দুগ্ধ উৎপাদনের রহস্য ফাঁস করলেন নিজেই

গবেষকরা দেখেছেন, এই নির্যাস এইচটি-২৯ এবং এইচসিটি-১১৬ এই দুই ধরনের কোলন ক্যানসার কোষের মধ্যে অ্যাপোপটোসিস বা কোষের স্বয়ংক্রিয় মৃত্যু প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে তোলে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, কোষগুলির জেনেটিক গঠন যাই হোক না কেন, এই নির্যাস সমানভাবে কার্যকর। বিশেষজ্ঞদের মতে এর গুরুত্ব অপরিসীম, কারণ প্রচলিত ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক সময় নির্দিষ্ট কিছু জিনের কার্যকারিতার উপর চিকিৎসার ফলাফল নির্ভর করে। কিন্তু ড্যানডেলিয়নের নির্যাস ব্যবহার করলে সেই সীমাবদ্ধতা থাকে না।
শুধু ল্যাবরেটরিতেই নয়, ইঁদুরের উপর চালানো পরীক্ষাতেও মিলেছে আশাব্যঞ্জক ফল। কোলন টিউমারে আক্রান্ত ইঁদুরদের ড্যানডেলিয়নের নির্যাস খাওয়ানোর পর দেখা যায়, চিকিৎসা না করা ইঁদুরদের তুলনায় তাদের টিউমারের আকার ৯০ শতাংশেরও বেশি কমে গিয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই প্রক্রিয়ায় সুস্থ কোষগুলির কোনও ক্ষতি হয়নি। এর থেকে গবেষকরা মনে করছেন, ড্যানডেলিয়নের নির্যাস শুধুমাত্র ক্যানসার কোষকেই বেছে বেছে আক্রমণ করে, শরীরের স্বাভাবিক কোষকে সুরক্ষিত রাখে।
গবেষকদের মতে, এই নির্যাস ক্যানসার কোষের মাইটোকন্ড্রিয়ার কার্যকারিতা নষ্ট করে, ‘রিঅ্যাকটিভ অক্সিজেন স্পিসিস’ বাড়িয়ে তোলে সেকারনেই সেগুলির মৃত্যু প্রক্রিয়াকে সক্রিয় হয়ে। এছাড়াও নির্যাসে থাকা আলফা-অ্যামাইরিন, বিটা-অ্যামাইরিন, লুপেওল এবং ট্যারাক্সাস্টেরল-এর মতো যৌগগুলিও এই কাজের সাহায্য করে বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই যৌগগুলি প্রদাহ-রোধী এবং ক্যানসার-বিরোধী গুণের জন্য পরিচিত।
তবে এত আশাব্যঞ্জক ফলাফলের পরেও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে, ড্যানডেলিয়নের নির্যাস এখনও ক্যানসারের কোনও অনুমোদিত চিকিৎসা পদ্ধতি নয়। পলিটিফ্যাক্ট-এর মতে, কানাডায় মানবদেহে এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন মিললেও, পর্যাপ্ত সংখ্যক অংশগ্রহণকারী জোগাড় করতে না পারায় বড় মাপের কোনও পরীক্ষাই এখনও সম্পন্ন হয়নি। বর্তমানে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত দোকানে চা, ক্যাপসুল বা টিংচার হিসেবে এই নির্যাস পাওয়া যায়। কিন্তু মানবদেহে এর কার্যকারিতা ও সুরক্ষা এখনও প্রমাণিত নয়।
তাই গবেষকদের মতে, এই গবেষণার ফলাফল নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক, কিন্তু এখনই প্রচলিত ক্যানসার চিকিৎসার বিকল্প হিসেবে ড্যানডেলিয়নের শিকড়কে ব্যবহার করা উচিত নয়। আরও গবেষণা প্রয়োজন।