আজকাল ওয়েবডেস্ক: মোবাইল ফোনে ঘাড় গুঁজে থাকা, ক্লাসরুমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা একভাবে বসে থাকা, আর খেলাধুলোর আগে গা গরম না করা- এমনই সব অভ্যাস কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। তাদের শরীর কৈশোরেই জানান দিচ্ছে আসন্ন বিপদের কথা।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর অর্থায়নে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এইমস)-এর একটি নতুন সমীক্ষায় উঠে এসেছে এমনই উদ্বেগজনক চিত্র। সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সি বহু স্কুল পড়ুয়ার মধ্যেই সামনের দিকে ঝুঁকে থাকার ভঙ্গি, পিঠের ব্যথা, পেশির অনমনীয়তা বা নমনীয়তা কমে যাওয়ার মতো গুরুতর সমস্যা দেখা যাচ্ছে।
গবেষক দলের সদস্যরা জানিয়েছেন, “এই সমস্যাগুলির মূল কারণ আজকের জীবনযাত্রা- মোবাইল এবং কম্পিউটারে দীর্ঘ সময় কাটানো, মাঠে গিয়ে খেলার অভাব, খালি পায়ে হাঁটাচলার অভ্যাস কমে যাওয়া।” পড়াশোনাই হোক বা মোবাইল দেখা, দীর্ঘক্ষণ একই ভাবে বসে থাকার ফলে পিঠে এবং মেরুদণ্ডের উপর মারাত্মক চাপ পড়ছে।
তাঁরা আরও যোগ করেন, “মাঝেমধ্যে উবু হয়ে বসা বা ভারতীয় শৌচাগার ব্যবহারের মতো চিরাচরিত অভ্যাস স্বাভাবিকভাবেই শরীরের নমনীয়তা বাড়াতে সাহায্য করে, সেইসবও এখনকার কিশোর-কিশোরীদের জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছে।” বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সাধারণ অভ্যাসগুলি শরীরকে স্বাভাবিকভাবেই নমনীয় হতে সাহায্য করে, যা এখনকার প্রজন্মের মধ্যে প্রায় দেখাই যায় না।
এইমস-এর জেপিএনএ ট্রমা সেন্টারের অধ্যাপক ডঃ সমর্থ মিত্তলের নেতৃত্বে এবং ফিজিওথেরাপিস্ট ডঃ এ এস মূর্তির সহযোগিতায় এই প্রকল্পটি চালানো হচ্ছে। এই সমীক্ষার মূল উদ্দেশ্য ছিল, ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে এই প্রবণতা পাল্টানো যায় কি না এবং খেলাধুলোর ফলে হওয়া চোট-আঘাত প্রতিরোধ করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখা।
গবেষকরা জানিয়েছেন, ১২ সপ্তাহের এই পরীক্ষায় পড়ুয়াদের মধ্যে চোখে পড়ার মতো উন্নতি লক্ষ্য করা গিয়েছে। যে সমস্ত পড়ুয়ারা ফিজিওথেরাপি-ভিত্তিক প্রশিক্ষণের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে, তাদের শারীরিক ভঙ্গিমার উন্নতি, শক্তি ও নমনীয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২৪ সপ্তাহের ফলো-আপ পর্ব এখনও চলছে।
তবে চিকিৎসকদের মতে, আসল চ্যালেঞ্জ হল দৈনন্দিন অভ্যাস পরিবর্তন করা। গবেষক দলটির কথায়, “কিশোর-কিশোরীরা হয়তো এখন বুঝতে পারছে না, কিন্তু তাদের শরীর ইতিমধ্যেই এই দীর্ঘ সময় বসে থাকার কুপ্রভাব টের পেতে শুরু করেছে। আমরা যত তাড়াতাড়ি সচেতন হব, ভবিষ্যৎ ততটাই স্বাস্থ্যকর হবে।” খেলাধুলোর আগে গা গরম করা, খালি পায়ে মাঠেঘাটে সময় কাটানো, স্ক্রিন টাইম কমানো এবং উবু হয়ে বসার মতো সাধারণ অভ্যাসগুলি ভবিষ্যতে বহু বছরের শারীরিক কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে পারে বলে তাঁরা মনে করছেন।

বিশেষজ্ঞরা স্কুল পাঠ্যক্রমে ফিজিওথেরাপি অন্তর্ভুক্ত করারও সুপারিশ করেছেন, যাতে খেলাধুলোর সময় পড়ুয়ারা সঠিক দিশা পায় এবং চোট-আঘাত এড়ানো সম্ভব হয়। এক গবেষকের কথায়, “ছোট থেকে পরিকল্পিতভাবে দিশা পেলে শুধু কিশোর কিশোরীদের স্বাস্থ্যের উন্নতিই হবে না, ভবিষ্যতের ক্রীড়া প্রতিভা তুলে আনা সহজ হবে।”
প্রকল্পটি ইতিমধ্যেই শেষ বছরে প্রবেশ করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পরীক্ষার ফলাফল আগামী দিনে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে। গবেষক দলের এক সদস্য বলেন, “আজকের এই পিঠের ব্যথা আসলে আগামীর দীর্ঘস্থায়ী রোগের সঙ্কেত মাত্র। কৈশোরে শেখা স্বাস্থ্যকর অভ্যাসই এই শিশুদের প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে সুরক্ষিত রাখবে।”
