আজকাল ওয়েবডেস্ক: এমনটা কি কেউ কোনও দিন স্বপ্নেও ভেবেছেন? রাতের আলোয় নাকি ঝলমল করবে মানুষের ত্বক! বিজ্ঞানের অগ্রগতির কাছে কোনও কিছুই যেন আর অসম্ভব নয়। এত দিন যা ছিল কল্পবিজ্ঞানের পাতায়, তা-ই এখন দেখা যাচ্ছে বাস্তব দুনিয়ায়। মোবাইল অ্যাপের এক ক্লিকেই ত্বকের নিচে বসানো আলোর রং ও ঔজ্জ্বল্য বদলে ফেলা যাবে! সিলিকন ভ্যালি এবং বার্লিনের কয়েকটি আধুনিক প্রযুক্তি সংস্থা এমন এক যন্ত্র তৈরি করেছে, যা মানব শরীর এবং প্রযুক্তির মেলবন্ধনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। আপাতত এর কোনও উল্লেখযোগ্য চিকিৎসাগত সুবিধা না থাকলেও, ‘বডি মডিফিকেশন’ বা শরীরকে নিজের ইচ্ছেমতো সাজিয়ে তোলার ক্ষেত্রে এই যন্ত্র যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির নাম ‘আরজিবি ইমপ্লান্ট’।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র সাদা জিরাফ কোথায় থাকে? কার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয় তাকে? জানলে চোখে জল আসবে

প্রযুক্তিবিষয়ক বিভিন্ন পত্রপত্রিকা সূত্রে খবর, এই বিশেষ ধরনের ইমপ্ল্যান্ট একেবারে স্তন বা অন্যান্য অঙ্গের নিচে বসানো সিলিকনের মতোই। ত্বকের নিচে থাকলেও তার নিয়ন্ত্রণ থাকবে হাতের মোবাইলে। মূলত তরুণ প্রজন্ম, গেমার এবং সাইবার সংস্কৃতিপ্রেমীদের মধ্যে এই নতুন ইমপ্ল্যান্টের জনপ্রিয়তা চড়চড়িয়ে বাড়ছে। তাঁরা এই প্রযুক্তিকে নিছক যন্ত্র হিসেবে দেখছেন না, বরং আত্মপ্রকাশ এবং নিজস্ব স্টাইল স্টেটমেন্ট তৈরির একটি অত্যাধুনিক মাধ্যম হিসেবে গণ্য করছেন। ট্যাটু বা পিয়ার্সিংয়ের মতোই, ত্বকের নীচে এই আলোর ছটাকেও তাঁরা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের প্রতীক বলে মনে করছেন। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নিজের মেজাজ বা পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে আলোর রং বদলে ফেলার সুবিধা একে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

নির্মাতা সংস্থাগুলির দাবি, এই ডিভাইসগুলি সম্পূর্ণ নিরাপদ। মানব শরীরের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, এমন ‘বায়োকম্প্যাটিবল’ উপাদান দিয়ে এগুলি তৈরি। অত্যন্ত সামান্য কাটাছেঁড়ার মাধ্যমে, অর্থাৎ ‘মিনিম্যালি ইনভেসিভ’ পদ্ধতিতে এটি শরীরে স্থাপন করা হয়। তবে ইতিমধ্যেই এর সম্ভাব্য ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁদের মতে, এই ধরনের বহিরাগত বস্তু দীর্ঘ সময় ধরে শরীরে থাকার ফলে কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, সে সম্পর্কে এখনও বিশদ গবেষণার প্রয়োজন। সম্ভাব্য সংক্রমণ, ত্বকের সমস্যা বা দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য ঝুঁকি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র সাদা জিরাফ কোথায় থাকে? কার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয় তাকে? জানলে চোখে জল আসবে

তবে বিতর্ক যা-ই থাক, ইতিমধ্যেই এই প্রযুক্তির শৈল্পিক ব্যবহার শুরু হয়েছে। বিশ্বের তাবড় ফ্যাশন ডিজাইনাররা তাঁদের পোশাকে এই আলোর ব্যবহার করে নতুন চমক আনছেন। সঙ্গীতশিল্পীরা মঞ্চে সরাসরি পারফরম্যান্সের সময় ভিজ্যুয়াল এফেক্ট তৈরি করতে এই ইমপ্লান্ট ব্যবহার করছেন, যা দর্শকদের এক নতুন অভিজ্ঞতা দিচ্ছে।

অর্থনৈতিক সমীক্ষা সংস্থাগুলির পূর্বাভাস, এই প্রযুক্তি যদি ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হয়, তবে ২০২৭ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বডি অ্যাকসেসরিজ’-এর বাজার কয়েকশো মিলিয়ন ডলারে পৌঁছতে পারে। ওয়্যারেবল ডিভাইস, যেমন স্মার্টওয়াচ বা ফিটনেস ব্যান্ডের পরবর্তী ধাপ হিসেবেই এই ইমপ্লান্ট প্রযুক্তিকে দেখছেন অনেকে। প্রশ্ন উঠছে, প্রযুক্তি কি এ বার মানব শরীরের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠতে চলেছে? যেখানে মুঠোফোনের স্ক্রিনে আঙুল ছুঁইয়েই বদলে ফেলা যাবে নিজের শরীরের সজ্জা। প্রযুক্তি এবং মানব শরীরের এই মেলবন্ধন আগামী দিনে কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, সেদিকেই তাকিয়ে গোটা বিশ্ব।