আজকাল ওয়েবডেস্ক: কাজের চাপে ক্লান্তি, মরশুম বদলের মুখে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো কিংবা চুল পড়ার সমস্যায় জর্জরিত হয়ে প্রথমেই ভিটামিন সাপ্লিমেন্টের কৌটোয় হাত- বিজ্ঞাপনের হাতছানি আর সহজলভ্যতার কারণে এই অভ্যাস এখন ঘরে ঘরে। অনেকেই মনে করেন, ভিটামিন তো শরীরেরই জন্য, তাই একটু বেশি খেলেও ক্ষতি নেই। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, তাঁদের পরামর্শ ছাড়া এবং মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে খেলে, ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট সেবনের এই প্রবণতা শরীরের জন্য ‘হিতে বিপরীত’ হতে পারে, ডেকে আনতে পারে মারাত্মক বিপদ।

ভিটামিন নিঃসন্দেহে আমাদের শরীরের জন্য এক অপরিহার্য উপাদান। কিন্তু মনে রাখতে হবে, প্রতিটি ভিটামিনেরই একটি নির্দিষ্ট মাত্রা বা ‘ডোজ’ রয়েছে। সেই মাত্রা অতিক্রম করলেই উপকারের বদলে শুরু হয় অপকার। মূলত দুই ধরনের ভিটামিনের ক্ষেত্রে এই সমস্যা দেখা যায়- ফ্যাটে দ্রবণীয় এবং জলে দ্রবণীয়।

ফ্যাটে দ্রবণীয় ভিটামিন

ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে- এই চারটি হল ফ্যাট-দ্রবণীয় ভিটামিন। অর্থাৎ, এগুলি শরীরের অতিরিক্ত জলীয় অংশের সঙ্গে বেরিয়ে না গিয়ে লিভার এবং ফ্যাট টিস্যুতে জমা হতে থাকে। ফলে, লাগাতার অতিরিক্ত সেবনে এগুলি শরীরে বিষাক্ত মাত্রা বা ‘টক্সিক লেভেল’-এ পৌঁছে যেতে পারে।

ভিটামিন এ: দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন এ গ্রহণ করলে লিভারের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এছাড়াও, মাথাব্যথা, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া, ত্বক খসখসে হওয়া এবং হাড়ের যন্ত্রণা দেখা দিতে পারে।

ভিটামিন ডি: হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি এই ভিটামিন অতিরিক্ত পরিমাণে শরীরে গেলে রক্তে ক্যালশিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায় (হাইপারক্যালসেমিয়া)। এর ফলে বমি ভাব, কিডনিতে পাথর জমা, এমনকি হৃদযন্ত্রের সমস্যাও হতে পারে।

ভিটামিন ই: অতিরিক্ত ভিটামিন ই রক্তকে অতিরিক্ত পাতলা করে দেয়, যার ফলে রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা কমে যায়। সামান্য আঘাতেও মারাত্মক রক্তপাতের ঝুঁকি থাকে। অস্ত্রোপচারের আগে এটি প্রাণঘাতীও হতে পারে।

 

জল-দ্রবণীয় ভিটামিনেও রয়েছে ঝুঁকি

সাধারণত মনে করা হয় যে ভিটামিন সি এবং বি-কমপ্লেক্সের মতো জল-দ্রবণীয় ভিটামিনগুলি প্রয়োজনের অতিরিক্ত হলে মূত্রের সঙ্গে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়, তাই এতে ঝুঁকি কম। এই ধারণা আংশিকভাবে সত্যি হলেও, অত্যাধিক পরিমাণে গ্রহণ করলে এগুলিও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

ভিটামিন সি: অতিরিক্ত ভিটামিন সি থেকে হজমের সমস্যা, ডায়ারিয়া এবং কিডনিতে পাথর জমার মতো ঘটনা ঘটতে পারে।

ভিটামিন বি৬: উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন বি৬ দীর্ঘদিন ধরে খেলে স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি বা নার্ভ ড্যামেজ হওয়ার আশঙ্কা থাকে, যার ফলে হাত-পায়ে অসাড়তা বা জ্বালার অনুভূতি হতে পারে।

 

শরীরে কোনও ভিটামিনের অভাব হয়েছে কি না, তা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই কেবল বোঝা সম্ভব। আন্দাজে সাপ্লিমেন্ট খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। সুষম আহারের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ করাই হল শ্রেষ্ঠ উপায়। সাপ্লিমেন্ট প্রয়োজন হয় কেবল ঘাটতি পূরণের জন্য, এটি স্বাস্থ্যকর খাবারের বিকল্প নয়। সুতরাং, ক্লান্ত লাগলে মুঠো মুঠো মাল্টিভিটামিনের দিকে হাত না বাড়িয়ে, চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।