আজকাল ওয়েবডেস্ক: অ্যালার্ম দেওয়া থেকে শুরু করে ঘুমাতে যাওয়ার আগে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রল করা- স্মার্টফোন এখন আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। অনেকেরই অভ্যাস, ফোনটি একেবারে মাথার কাছে বা বালিশের পাশে রেখেই ঘুমিয়ে পড়া। কিন্তু এই ‘সর্বক্ষণের সঙ্গী’ই ঘুমের সময় ডেকে আনতে পারে মারাত্মক বিপদ। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই আপাত নিরীহ অভ্যাসটি আমাদের শরীর ও মনে দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, যা একাধিক জটিল রোগের কারণ হয়ে উঠতে পারে।

দিনভর খাটাখাটনির পর শান্তিতে ঘুমানোর গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু মোবাইল ফোনটিই হয়ে উঠতে পারে সেই শান্তির ঘুমের সবচেয়ে বড় শত্রু। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা ঘুমের সময় ফোন পাশে রাখার অভ্যাস নিয়ে বারবার সতর্কবার্তা দিয়েছেন।

 

১। নিদ্রাহীনতা এবং ঘুমের ব্যাঘাত

মোবাইল ফোনের স্ক্রিন থেকে নির্গত নীল আলো বা ব্লু লাইট আমাদের মস্তিষ্কের পিনিয়াল গ্রন্থিকে সরাসরি প্রভাবিত করে। এই গ্রন্থি থেকে মেলাটোনিন নামক একটি হরমোন নিঃসৃত হয়, যা আমাদের ঘুমকে নিয়ন্ত্রণ করে। নীল আলোর প্রভাবে মেলাটোনিনের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। ফলস্বরূপ, ঘুম আসতে দেরি হওয়া, বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়া এবং গভীর ঘুম না হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়, যা দীর্ঘস্থায়ী অনিদ্রা বা ইনসমনিয়ার কারণ হতে পারে।

 

২। মানসিক উদ্বেগ ও অবসাদ

ফোন পাশে নিয়ে ঘুমালে অবচেতন মনেও ক্রমাগত নোটিফিকেশন, মেসেজ বা কলের আশঙ্কা থেকে যায়। এর ফলে মস্তিষ্ক পুরোপুরি বিশ্রামে যেতে পারে না, বরং এক ধরনের চাপা উত্তেজনায় ভোগে। এই অভ্যাসটি অ্যাংজাইটি বা উদ্বেগ, খিটখিটে মেজাজ এবং মানসিক অস্থিরতা বাড়িয়ে তোলে। দীর্ঘ সময় ধরে এমনটা চলতে থাকলে তা অবসাদের দিকেও ঠেলে দিতে পারে। একে বিশেষজ্ঞরা ‘নোমোফোবিয়া’ (নো-মোবাইল-ফোন ফোবিয়া) বা ফোন থেকে দূরে থাকার ভয় হিসেবেও চিহ্নিত করছেন।

 

৩। মস্তিষ্কের ক্যানসারের ঝুঁকি

সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়টি হল মোবাইল ফোন থেকে নির্গত রেডিওফ্রিকোয়েন্সি ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড-এর প্রভাব। যদিও এই বিষয়ে গবেষণা এখনও চলমান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু-এর অধীনস্থ আন্তর্জাতিক ক্যানসার গবেষণা সংস্থা (আই এ আর সি) এই তরঙ্গকে ‘গ্রুপ ২বি কারসিনোজেনিক’ তালিকাভুক্ত করেছে, অর্থাৎ এটি মানুষের জন্য ‘সম্ভাব্য ক্যান্সার সৃষ্টিকারী’ তরঙ্গ হতে পারে। দীর্ঘক্ষণ ধরে মাথা বা শরীরের কাছাকাছি ফোন রেখে ঘুমালে এই ক্ষতিকর তরঙ্গ মস্তিষ্কের কোষকে প্রভাবিত করতে পারে, যা থেকে গ্লিওমার মতো ব্রেন টিউমারের ঝুঁকি বাড়ায়। আর এই ক্যানসারের কোনও চিকিৎসা নেই। ফলে মৃত্যু নিশ্চিত। 

 

৪। হৃদযন্ত্রের সমস্যা ও অন্যান্য শারীরিক জটিলতা

গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের সময় পাশে থাকা ফোন থেকে নির্গত রেডিয়েশন শরীরের স্বাভাবিক কার্যকলাপে বাধা সৃষ্টি করে। এটি হৃদস্পন্দনের হারকে প্রভাবিত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এছাড়াও, প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাবের কথাও বলছেন কিছু গবেষক।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

এই ভয়ঙ্কর পরিণতি এড়াতে বিশেষজ্ঞরা কিছু সহজ নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন।

ঘুমানোর সময় ফোনটিকে অন্তত ৩-৪ ফুট দূরে রাখুন।

সম্ভব হলে ফোনটি অন্য ঘরে রেখে ঘুমাতে যান।

অ্যালার্মের জন্য ফোনের পরিবর্তে সাধারণ অ্যালার্ম ঘড়ি ব্যবহার করুন।

ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে থেকে ফোন ব্যবহার বন্ধ করুন।

যদি ফোন কাছে রাখতেই হয়, তবে সেটিকে ‘এয়ারপ্লেন মোড’-এ রাখুন।

প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ করেছে ঠিকই, কিন্তু তার সচেতন ব্যবহারই সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি। তাই সামান্য অসতর্কতার কারণে নীরবে বড় বিপদ ডেকে আনার আগে আজই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।