আজকাল ওয়েবডেস্ক: অফিসের লিফট খারাপ, কিংবা মেট্রোর চলমান সিঁড়িটি অচল। অগত্যা সিঁড়ি ভাঙা ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু দু-চার তলা উঠতেই কি আপনার বুক ধড়ফড় শুরু হয়? মনে হয় যেন হৃৎপিণ্ডটা গলার কাছে উঠে এসেছে, সঙ্গে শ্বাসকষ্ট? দৈনন্দিন এই ঘটনাকে অনেকেই সাধারণ ক্লান্তি বা শারীরিক সক্ষমতার অভাব ভেবে এড়িয়ে যান। কিন্তু চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এই বুক ধড়ফড় সব সময় স্বাভাবিক না-ও হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এটি হতে পারে আপনার শরীরের পাঠানো কোনও গুরুতর বিপদের সঙ্কেত।

কেন এই বুক ধড়ফড়?
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সিঁড়ি ভাঙা এক ধরনের কার্ডিও ব্যায়াম। যখন আমরা সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠি, তখন আমাদের শরীরের মাংসপেশী, বিশেষ করে পায়ের পেশীকে অনেক বেশি কাজ করতে হয়। এই অতিরিক্ত কাজের জন্য প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের প্রয়োজন হয়। সেই চাহিদা মেটাতে হৃদযন্ত্রকে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক দ্রুত রক্ত পাম্প করতে হয়। ফলে হৃদস্পন্দনের গতি বেড়ে যায়, যা আমরা বুক ধড়ফড় হিসেবে অনুভব করি। শারীরিক সক্ষমতা কম থাকলে বা বহুদিন পর এমন পরিশ্রম করলে এই অনুভূতি বেশি হয়। এটি একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া।
কখন হবেন সতর্ক?
সাধারণ বুক ধড়ফড়ের সঙ্গে যদি কিছু বিশেষ উপসর্গ দেখা দেয়, তবে তা উদ্বেগের কারণ হতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখা দিলে একেবারেই অবহেলা করা উচিত নয়।
১। বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি: বুক ধড়ফড় করার সঙ্গে যদি বুকে চাপ, ব্যথা বা চিনচিনে অনুভূতি হয়, তবে তা ধমনীতে রক্ত চলাচল বাধা পাওয়ার (করোনারি আর্টারি ডিজিজ) লক্ষণ হতে পারে।
২। তীব্র শ্বাসকষ্ট: সামান্য পরিশ্রমেও যদি শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এবং বিশ্রামের পরেও সেই কষ্ট না কমে, তবে তা হার্ট ফেলিওর বা ফুসফুসের কোনও সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।
৩। মাথা ঘোরা বা চোখে অন্ধকার দেখা: হৃদযন্ত্র যদি মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত রক্ত পাঠাতে না পারে, তবে সিঁড়ি ভাঙার সময় মাথা ঘুরতে পারে বা চোখে অন্ধকার দেখতে পারেন। এটি অ্যারিদমিয়া বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের লক্ষণ।
৪। অনিয়মিত হৃদস্পন্দন: যদি মনে হয় হৃদযন্ত্র স্বাভাবিক ছন্দে স্পন্দিত না হয়ে মাঝে মাঝে লাফিয়ে উঠছে বা ছন্দ হারিয়ে ফেলছে, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
৫। বিশ্রামের পরেও সমস্যা না কমা: সিঁড়ি ভাঙার পর ৫-১০ মিনিট বিশ্রাম নিলেও যদি বুক ধড়ফড় এবং শ্বাসকষ্ট না কমে, তবে তা বিপদের সঙ্কেত।
সম্ভাব্য কারণ, কী করণীয়?
উপরে উল্লিখিত উপসর্গগুলি হৃৎপিণ্ডের সমস্যা ছাড়াও রক্তাল্পতা (অ্যানিমিয়া), থাইরয়েডের সমস্যা, মানসিক উদ্বেগ (অ্যাংজাইটি) বা ফুসফুসের রোগের কারণেও হতে পারে। কারণ যাই হোক, লক্ষণগুলিকে এড়িয়ে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
যদি সিঁড়ি ভাঙার সময় প্রায়শই আপনার বুক ধড়ফড় করে এবং তার সঙ্গে অন্য কোনও উপসর্গ থাকে, তবে দেরি না করে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। চিকিৎসক প্রয়োজন অনুযায়ী ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাম, ট্রেডমিল টেস্ট বা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক কারণ নির্ণয় করতে পারবেন।
মনে রাখবেন, শরীর সঙ্কেত পাঠায়। সেই সঙ্কেত বুঝতে পারা এবং সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়াই সুস্থ থাকার চাবিকাঠি। সাধারণ ক্লান্তি ভেবে বড় কোনও বিপদকে আমন্ত্রণ জানাবেন না।
