আজকাল ওয়েবডেস্ক: মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর শহরে বুধবার রাতে প্রায় ২৫ জন রূপান্তরকামী ব্যক্তি ফিনাইল খাওয়ার অভিযোগে হাসপাতালে ভর্তি হন। ঘটনাটি ঘটেছে নন্দলালপুরা এলাকায়, যেখানে ওই সম্প্রদায়ের বহু সদস্য বসবাস করেন। রাত প্রায় ৮টা ৩০ মিনিট নাগাদ হঠাৎ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয়রা পুলিশ ও অ্যাম্বুলেন্সে খবর দেন। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ অসুস্থদের উদ্ধার করে সরকারি মহারাজা যশবন্তরাও হাসপাতালে ভর্তি করে।

হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডা. বসন্ত কুমার নিংওয়াল জানান, “প্রায় ২৫ জন রূপান্তরকামীকে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁরা দাবি করেছেন যে একসঙ্গে ফিনাইল খেয়েছেন, যদিও এই দাবি এখনো নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়নি। সকলেই আপাতত বিপন্মুক্ত এবং চিকিৎসাধীন রয়েছেন।”
অতিরিক্ত পুলিশ উপকমিশনার রাজেশ দানদোতিয়া বলেন, “তদন্তের পরই নিশ্চিতভাবে বলা যাবে ঠিক কী পদার্থ তাঁরা খেয়েছিলেন এবং কেন।” পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এই ঘটনা স্থানীয় দুই গোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বা প্রতিবাদের ফলাফল হতে পারে।

তবে পরবর্তী তদন্তে জানা যায়, ঘটনাটি মূলত এক ধর্ষণকাণ্ড ঘিরে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। অভিযোগ, দুই ব্যক্তি—অক্ষয় কুমাঁও ও পঙ্কজ জৈন—নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এক রূপান্তরকামী মহিলাকে ব্ল্যাকমেল ও ধর্ষণ করেন। ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ১.৫ লক্ষ টাকা আদায় করা হয় বলে অভিযোগ। এই নৃশংস ঘটনার পরও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়ায় সম্প্রদায়ের সদস্যদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয় এবং তারা একযোগে ফিনাইল খেয়ে প্রতিবাদ জানান।

আরও পড়ুন:  বিহারে জোট আটকে 'জটে', লালুকে ফোন রাহুল গান্ধীর, কী কথা হল তাঁদের?

নন্দলালপুরা এলাকার “কিন্নর ডেরা”-র সদস্য নেহা কুয়ার জানান, “আমাদের বোনের উপর এই ভয়াবহ অত্যাচারের পরও পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে দেরি করছে। হতাশা ও ক্ষোভ থেকেই অনেকে এই পদক্ষেপ নিয়েছে।” ঘটনার পর রাতভর হাসপাতালের বাইরে উত্তেজনা ছড়ায়। বহু রূপান্তরকামী ব্যক্তি সেখানে জড়ো হয়ে অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে কয়েকজন আত্মদহন করার চেষ্টা করেন, তবে পুলিশ তা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। এই ঘটনাটি আবারও সমাজে রূপান্তরকামী সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্য, সামাজিক বঞ্চনা ও মানসিক যন্ত্রণার গভীর সংকটকে সামনে এনেছে। আইনি স্বীকৃতি ও সাংবিধানিক সুরক্ষা থাকা সত্ত্বেও তারা এখনো নিত্যদিন অপমান, হিংসা  ও আর্থিক অনিশ্চয়তার মুখোমুখি।

মনস্তাত্ত্বিক সমস্যাও এই সম্প্রদায়ে প্রবল, যা সমাজের অবহেলা ও সামাজিক কলঙ্কের ফলে আরও বেড়ে যায়। ইন্দোরের এই মর্মান্তিক ঘটনা আবারও দেখিয়ে দিল যে, কেবল আইন নয়—মানসিক স্বাস্থ্যসেবা, পুনর্বাসন, শিক্ষা ও নিরাপদ কর্মসংস্থানের মতো ক্ষেত্রেও রাষ্ট্র ও সমাজকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে।

অন্যদিকে, এই ঘটনায় সম্প্রদায়ের অভ্যন্তরেও কিছু বিভাজন ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইঙ্গিত মিলেছে, যা প্রশাসনের তদন্তকে আরও জটিল করে তুলেছে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই ঘটনা ভারতের সমাজে একটি কঠিন প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়—আমরা কি সত্যিই আমাদের প্রান্তিক নাগরিকদের মর্যাদা, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের অধিকার নিশ্চিত করতে পেরেছি? সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, “এখন সময় এসেছে রাষ্ট্র, সমাজ ও নাগরিক সংগঠনগুলিকে একত্রে কাজ করে রূপান্তরকামী সম্প্রদায়ের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সহানুভূতিশীল পরিবেশ গড়ে তোলার।”