আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইউটিউবের প্রভাব ও শরীরচর্চা নিয়ে অতিরিক্ত সচেতনতা একসঙ্গে প্রাণ কেড়ে নিল কন্যাকুমারীর এক কিশোরের। তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী জেলার কোলাচেল এলাকার বাসিন্দা ১৭ বছরের সাক্তীশ্বরন নামের ওই কিশোর গত বৃহস্পতিবার শ্বাসরোধজনিত সমস্যায় বাড়িতেই মৃত্যুবরণ করেন। তার পরিবার জানিয়েছে, গত তিন মাস ধরে সে ইউটিউব থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে শুধুমাত্র ফলের রস ও ফল খেয়ে জীবনযাপন করছিল।

পরিবার ও প্রতিবেশীদের দাবি, কলেজে ভর্তি হওয়ার আগে ওজন কমানোর তীব্র বাসনা থেকেই এই কঠোর ডায়েটে গিয়েছিল সে। যদিও সে কোনও চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেয়নি। তাছাড়া, কিছু ওষুধও সে খাচ্ছিল বলে জানা গেছে। ঘটনার দিন বাড়িতে এক পূজার আয়োজন ছিল। সেই উপলক্ষে দীর্ঘদিন পর সে কিছুটা কঠিন খাবার খায়, যার পরেই শুরু হয় বমি, তারপর শ্বাসকষ্ট এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যু।

পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, শৈশব থেকেই সাক্তীশ্বরন নিজের শরীর নিয়ে অতিরিক্ত সচেতন ছিল এবং খেলাধুলা থেকে নিজেকে দূরে রাখত ওজন বাড়ার আশঙ্কায়। কলেজে যাওয়ার আগে নিজেকে ‘স্লিম’ দেখানোর চেষ্টা তাকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। এদিকে, ঠিক এমনই এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল মার্চ ২০২৫-এ, কেরলের কান্নুর জেলার কূথুপারাম্বা এলাকায়। ১৮ বছর বয়সি প্রথম বর্ষের ছাত্রী শ্রীনন্দা অতিরিক্ত ডায়েটিং ও না খেয়ে থাকার কারণে মৃত্যু বরণ করেন। জল ছাড়া কিছুই খাননি তিনি দীর্ঘদিন ধরে। পরিবার জানিয়েছে, ওজন নিয়ে ভয় থেকেই সে অতিরিক্ত ব্যায়াম ও খাবার বন্ধ করে দেয়।

আরও পড়ুন: উন্মুক্ত শরীর দেখিয়ে রোজগার, 'রাশিয়ান বৌদির' সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্ট নিয়ে পুলিশে অভিযোগ নেটিজেনের!

এই দুটি ঘটনার প্রেক্ষিতে চিকিৎসক ও মনোবিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন—ইউটিউব বা সোশ্যাল মিডিয়ার তথাকথিত ‘ফিটনেস গুরু’-দের না জেনে-শুনে অনুসরণ করা মারাত্মক বিপজ্জনক হতে পারে। বিশেষ করে কিশোর ও তরুণদের মধ্যে শরীর নিয়ে মানসিক চাপ এবং সোশ্যাল মিডিয়ার বিকৃত সৌন্দর্য মানদণ্ড তাঁদের বিপথে নিয়ে যেতে পারে।

এখনও পর্যন্ত সাক্তীশ্বরনের মৃত্যুর সঠিক কারণ ময়নাতদন্তের রিপোর্টে নিশ্চিত করা হয়নি। তবে চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘদিনের অপুষ্টি ও হঠাৎ কঠিন খাবার খাওয়ার কারণে তার দেহে শক ও শ্বাসকষ্ট তৈরি হয়ে থাকতে পারে। দু’টি ঘটনাই ফের প্রশ্ন তুলছে সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার, তরুণ প্রজন্মের মানসিক চাপ এবং পুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতার অভাব নিয়ে।

আজকের ডিজিটাল যুগে সোশ্যাল মিডিয়া অনেকের জীবনধারার অংশ হয়ে উঠেছে। স্বাস্থ্য ও ফিটনেস সম্পর্কিত কনটেন্ট সহজলভ্য হওয়ায় অনেক তরুণ-তরুণী নিজেদের শরীর নিয়ে অতিরিক্ত সচেতন হয়ে পড়ছে। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় যখন তারা পেশাদার চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ না নিয়ে ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, বা টিকটকের তথাকথিত "ফিটনেস ইনফ্লুয়েন্সারদের" ভুলভাল, বৈজ্ঞানিক ভিত্তিহীন কনটেন্ট অন্ধভাবে অনুসরণ করে। ফলস্বরূপ, অনিয়ন্ত্রিত উপবাস, একপাক্ষিক ডায়েট, অতিরিক্ত ব্যায়াম, ওষুধ বা সাপ্লিমেন্টের অপব্যবহার ইত্যাদির কারণে দেহে অপুষ্টি, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ও মানসিক চাপ দেখা দেয়। কিছু ক্ষেত্রে এর পরিণতি মর্মান্তিক মৃত্যুও হতে পারে, যেমনটি সম্প্রতি তামিলনাড়ু ও কেরলে ঘটেছে।

সোশ্যাল মিডিয়ার ‘পারফেক্ট বডি’ ধারণা অনেক তরুণকে বিষণ্ণতা ও আত্মবিশ্বাসের অভাবে ঠেলে দিচ্ছে। ফলে, স্বাস্থ্য সচেতনতা থাকা জরুরি হলেও, তা যেন বিজ্ঞানসম্মত ও পেশাদার পরামর্শের ভিত্তিতে হয়। অভিভাবক, শিক্ষক ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সচেতনতা গড়ে তোলা জরুরি—সোশ্যাল মিডিয়া নয়, স্বাস্থ্য আসুক বাস্তবের দেখভালে।