আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে জনতা দল (ইউনাইটেড) বা জেডিইউ তাদের প্রথম প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। মোট ৫৭টি আসনের জন্য প্রার্থীর নাম প্রকাশ করেছে নীতীশ কুমার নেতৃত্বাধীন এই দল। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই তালিকায় রয়েছে সেই চারটি আসনও—সোনবরসা, রাজগির, একমা ও মোরওয়া—যেগুলি নিয়ে চিরাগ পাসওয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি (রামবিলাস) বা এলজেপি (আরভি)-র সঙ্গে বিবাদ চলছে। এই সিদ্ধান্ত স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে জেডিইউ এই আসনগুলিতে আপস না করে নিজস্ব প্রতীকেই লড়াই করবে।
 
 এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে জেডিইউ প্রায় বার্তা দিয়েছে যে তারা এনডিএ-র মধ্যে আসন বণ্টন নিয়ে ছাড় দিতে রাজি নয়। বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটের মধ্যে আসন বণ্টন নিয়ে জেডিইউ ও এলজেপি-র মধ্যে যে টানাপোড়েন চলছিল, সেটি আরও প্রকট হয়েছে এই পদক্ষেপে। দলের প্রথম তালিকায় ওই চারটি বিতর্কিত আসনে প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
সোনবরসা থেকে রত্নেশ সদা
 
 মোরওয়া থেকে বিদ্যাসাগর নিশাদ
 
 একমা থেকে ধুমাল সিং
 
 রাজগির থেকে কৌশল কিশোর
আরও পড়ুন: বিহারে বাড়ছে অস্বস্তি, বেঁকে বসছেন এনডিএ-র শরিকরা
 
 এই পদক্ষেপ স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে জেডিইউ আপাতত কোনও আসন ছাড়ার ইচ্ছা রাখছে না এবং পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে ময়দানে নামছে। প্রথম তালিকায় জেডিইউ-র বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ নেতা ও বর্তমান বিধায়কের নামও রয়েছে। এর মধ্যে রাজ্যের মন্ত্রী বিজয় কুমার চৌধুরী সারাই রঞ্জন আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। নরেন্দ্র নারায়ণ যাদব প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন আলমনগর থেকে, নিরঞ্জন কুমার মেহতা বিহারিগঞ্জ থেকে, রমেশ ঋষি দেব সিংহেশ্বর থেকে, কবিতা সাহা মধেপুরা থেকে, গণদেশ্বর শাহ মহিষী থেকে এবং অতিরেক কুমার কুশেশ্বরস্থানের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন।
 
 দলের এক শীর্ষ নেতা জানান, “এই তালিকাটি দলের অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনার পর তৈরি হয়েছে। প্রার্থী বাছাইয়ে উন্নয়নমূলক কাজ, জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ এবং সাংগঠনিক ভূমিকা—এই তিনটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।”
 
 বিহারে আসন বণ্টন নিয়ে এনডিএ-র মধ্যে বিরোধ দিন দিন বাড়ছে। বিজেপি ও জেডিইউ—দুই বড় দলই ১০১টি করে আসনে লড়বে বলে ঘোষণা করা হয়েছে, কিন্তু একাধিক আসনে দাবি-দাওয়া নিয়ে জোটসঙ্গীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তীব্র হচ্ছে। জেডিইউ-এর এই তালিকা প্রকাশ আসলে চিরাগ পাসওয়ানকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানানো। পাসওয়ান আগে দাবি করেছিলেন যে ওই চারটি আসন তাঁর দলের কোটায় পড়ে, কিন্তু জেডিইউর এই পদক্ষেপ তাঁর অবস্থানকে দুর্বল করে দেবে।
 
 রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই পদক্ষেপ নীতীশ কুমারের দলকে “আত্মবিশ্বাসী কিন্তু আক্রমণাত্মক” অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে। একদিকে দল স্পষ্ট করছে যে তারা নিজেদের জমি ছাড়বে না, অন্যদিকে জোটের সমন্বয় রক্ষার দায়ও বিজেপির ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে।
 
 জেডিইউ সূত্রে জানা গেছে, বাকি আসনগুলির তালিকা আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই প্রকাশ করা হবে। এদিকে, এলজেপি ও আরএলএম ইতিমধ্যেই নতুন বৈঠক ডেকেছে আসন বণ্টনের ইস্যু নিয়ে আলোচনা করতে।
 
 বিহার বিধানসভা নির্বাচন হবে দুই দফায় — প্রথম দফা ৬ নভেম্বর এবং দ্বিতীয় দফা ১১ নভেম্বর। ফলাফল ঘোষণা করা হবে ১৪ নভেম্বর। এই অবস্থায় জেডিইউ-এর প্রথম তালিকা শুধু নির্বাচনী প্রচারে নয়, এনডিএ-র অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমীকরণেও নতুন তরঙ্গ তৈরি করেছে।
