আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোর বিরুদ্ধে ভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি বিস্তারিত তদন্ত শুরু করেছে। অভিযোগ উঠেছে, ক্রেতারা যখন ক্যাশ অন ডেলিভারি বেছে নিচ্ছেন, তখন তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে।
 
 কেন্দ্রীয় ভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী সম্প্রতি এক্স-এ লিখেছেন, এমন অনৈতিক পদ্ধতিকে তিনি “ডার্ক প্যাটার্ন” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। মন্ত্রী জানিয়েছেন, এই ধরনের প্রথা ভোক্তাদের বিভ্রান্ত করে এবং শোষণ করে। তাই এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জোশী জোর দিয়ে বলেছেন, সরকারের লক্ষ্য হল ভোক্তার অধিকার রক্ষা করা এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করা, বিশেষত ভারতের দ্রুত বাড়তে থাকা ই-কমার্স খাতে।
 
 গত কয়েক সপ্তাহে বহু ক্রেতা অভিযোগ জানিয়েছেন যে, অনলাইন কেনাকাটায় ক্যাশ অন ডেলিভারি বেছে নেওয়ার সময় হঠাৎ অজানা খাতে অতিরিক্ত চার্জ কেটে নেওয়া হচ্ছে। একজন ব্যবহারকারী নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেছেন, তিনি এক জনপ্রিয় ই-কমার্স সাইট থেকে কেনাকাটা করার সময় মোট ২২৬ টাকা অতিরিক্ত চার্জ দিতে বাধ্য হন। চার্জের নাম দেওয়া হয়েছিল “offer handling fee”, “payment handling fee”, ও “protect promise fee”। তিনি কটাক্ষ করে লিখেছেন, এই চার্জগুলো আসলে “Rain Fee”-এর মতো, যা ফুড ডেলিভারি অ্যাপ যেমন Zomato, Swiggy, Zepto ইত্যাদিতেও দেখা যায়।
Forget Rain Fee by Zomato/Swiggy/Zepto.
— Sidnan (@sidnan_s)
See the masterstroke by Flipkart:
• Offer Handling Fee (for giving me the discount you advertised??)
• Payment Handling Fee (for letting me pay you??)
• Protect Promise Fee (protecting me from what… satisfaction?)
Next up: “Scrolling… pic.twitter.com/DvUOSDgOS7Tweet by @sidnan_s
 
  “ডার্ক প্যাটার্ন” বলতে বোঝানো হয় সেইসব প্রতারণামূলক নকশা বা কৌশলকে, যা কোম্পানিগুলো সচেতনভাবে ব্যবহার করে ভোক্তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ বা ব্যক্তিগত তথ্য আদায় করার জন্য। এগুলোর মধ্যে রয়েছে—
 
 ভুয়া সংকট তৈরি করা, যেমন দেখানো যে “মাত্র ২টি পণ্য বাকি আছে”।
 
 মিথ্যা কাউন্টডাউন টাইমার ব্যবহার করা যাতে ক্রেতা দ্রুত কিনতে বাধ্য হন।
 
 জটিল ও নজরে না পড়া খাতে অতিরিক্ত ফি লুকিয়ে রাখা।
 
 COD বেছে নেওয়ার সময় অস্পষ্ট নামে অতিরিক্ত চার্জ বসানো এই অনৈতিক ডার্ক প্যাটার্নের সরাসরি উদাহরণ।
 
 ভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে এবং এই ধরনের আচরণ বন্ধ করার জন্য সতর্ক করেছে। পাশাপাশি, সরকার নতুন আইন প্রণয়ন করতে চলেছে যাতে এই ধরনের প্রতারণা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
 
 মন্ত্রী জোশী স্পষ্ট জানিয়েছেন—"ভোক্তাদের বিভ্রান্ত করে লাভবান হওয়ার চেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না। ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোকে ভোক্তার অধিকারকে সম্মান করতে হবে।"
 
 ভোক্তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে যেন তারা এমন প্রথার শিকার হলে সরাসরি অভিযোগ জানান। এর জন্য রয়েছে ‘জাগৃতি অ্যাপ’, যেখানে সহজেই অভিযোগ লিপিবদ্ধ করা যায়। এই অ্যাপ ভোক্তাদের অন্যায্য বাণিজ্য প্রথার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর সুযোগ দেয়।
 
 ভারতের ই-কমার্স বাজার দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে, আর সেই সুযোগেই কিছু প্রতিষ্ঠান ভোক্তাদের কাছ থেকে ফাঁকি দিয়ে অর্থ আদায় করছে। COD-এর মতো সাধারণ পেমেন্ট অপশনে অতিরিক্ত চার্জ বসানো নিঃসন্দেহে প্রতারণামূলক আচরণ। সরকারের এই উদ্যোগ যদি কঠোরভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে ভোক্তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে এবং ই-কমার্স খাতের প্রতি মানুষের আস্থা আরও বাড়বে।
