আজকাল ওয়েবডেস্ক: পাসপোর্ট শুধু ভ্রমণের নথি নয়। এটি আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য একটি মৌলিক পরিচয়পত্র। ভারত, অনেক দেশের মতো, নিজস্ব পাসপোর্ট ইস্যু করে এবং চারটি ভিন্ন রঙ (নীল, সাদা, লাল এবং কমলা) ব্যবহার করে ভ্রমণের উদ্দেশ্য বা ভ্রমণকারীর অবস্থা বোঝায়। প্রতিটি রঙের একটি স্বতন্ত্র উদ্দেশ্য রয়েছে, যা ইমিগ্রেশন অফিসারদের মাত্র এক নজরে তথ্য দেয়।
ভারতের পাসপোর্ট ব্যবস্থা বাহ্যিক বিষয়ক মন্ত্রকের অধীনে পাসপোর্ট আইন, ১৯৬৭ অনুসারে পরিচালিত হয়। সাম্প্রতিক কালে চালু হওয়া ই-পাসপোর্ট, যা বায়োমেট্রিক চিপ সম্বলিত, ভারতীয় নাগরিকদের জন্য বিদেশ ভ্রমণকে আরও দ্রুত, নিরাপদ এবং সুবিধাজনক করেছে।
আরও পড়ুন: আমাদের আলো ওদের কাছে অন্ধকার, কেন এমন বললেন বিজ্ঞানীরা
নীল: সাধারণ পাসপোর্ট
নীল পাসপোর্ট, যা অফিসিয়ালি সাধারণ পাসপোর্ট নামে পরিচিত, ভারতের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পাসপোর্ট। এটি ব্যক্তিগত, শিক্ষাগত, ব্যবসায়িক বা অবসর ভ্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়। কোটি কোটি ভারতীয় এই পাসপোর্ট বহন করেন, যা এখন ই-পাসপোর্ট হিসেবে পাওয়া যায়, যাতে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া দ্রুত এবং নিরাপদ হয়। নীল পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হলে নাগরিককে জন্মনিবন্ধন সনদ, বৈধ ফটো আইডি (যেমন আধার বা প্যান কার্ড), ঠিকানার প্রমাণ (যেমন বিদ্যুৎ বিল বা ভাড়ার চুক্তি), এবং নাগরিকত্বের প্রমাণ জমা দিতে হয়। এই শর্তগুলি নিশ্চিত করে যে পাসপোর্ট ইস্যু প্রক্রিয়া নিরাপদ এবং কার্যকর।
সাদা: সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য
সাদা পাসপোর্ট কেবল সরকারি কর্মকর্তাদের, সিভিল সার্ভেন্টদের এবং সামরিক কর্মীদের জন্য নির্ধারিত, যারা অফিসিয়াল কাজে বিদেশ ভ্রমণ করেন। এই রঙ তাদের সরকারি অবস্থান নির্দেশ করে এবং ইমিগ্রেশনে বিশেষ সুবিধা দিতে পারে। নীল পাসপোর্টের মতো, এটি এখন আরএফআইডি চিপযুক্ত ই-পাসপোর্ট হিসেবে ইস্যু হয়। সাদা পাসপোর্ট পাওয়ার প্রক্রিয়া অনেক বেশি কঠোর। আবেদনকারীদের সরকারি আইডি, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্ব সনদ, অফিসিয়াল ফরওয়ার্ডিং লেটার এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (PMO) থেকে অনুমোদন জমা দিতে হয়। এই ধাপগুলো নিশ্চিত করে যে সরকারি ভ্রমণ নিরাপদ এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণে থাকে।

লাল: কূটনৈতিক সুবিধা
লাল বা মেরুন পাসপোর্ট কূটনীতিক, উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের জন্য নির্ধারিত। এই পাসপোর্টধারীরা কূটনৈতিক সুবিধা উপভোগ করেন, যেমন দ্রুত ভিসা প্রক্রিয়াকরণ এবং অনেক দেশের ভিসা-মুক্ত ভ্রমণ। লাল পাসপোর্টও ই-পাসপোর্ট ফরম্যাটে ইস্যু হয়, যা নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায়। আবেদন প্রক্রিয়ায় কঠোর যাচাই প্রয়োজন, যার মধ্যে রয়েছে সরকারি আইডি, দায়িত্ব সনদ, ফরওয়ার্ডিং লেটার এবং PMO অনুমোদন। এতে নিশ্চিত হয় যে শুধুমাত্র অনুমোদিত ব্যক্তি কূটনৈতিক ভ্রমণ করতে পারবেন।
কমলা: ইসিআর (ECR) পাসপোর্ট
কমলা পাসপোর্ট ইন্ডিয়ান নাগরিকদের জন্য ইস্যু করা হয় যাদের Emigration Check Required (ECR) স্ট্যাটাস রয়েছে। সাধারণত এতে সেই ব্যক্তিরা পড়ে যাঁরা নির্দিষ্ট শিক্ষাগত মান পূর্ণ করেননি বা যারা এমন দেশগুলোতে কাজ করতে যাচ্ছেন যেখানে অতিরিক্ত ইমিগ্রেশন চেক প্রয়োজন। কমলা পাসপোর্ট নির্দেশ করে যে হোল্ডারকে বিদেশ ভ্রমণের আগে অতিরিক্ত ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
কেন পাসপোর্টের রং গুরুত্বপূর্ণ
চলাফেরা হোক অবসর, ব্যবসা, সরকারি কাজ বা কর্মসংস্থান উদ্দেশ্যে, পাসপোর্টের রঙ সঙ্গে সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।
নীল: ব্যক্তিগত ভ্রমণ
সাদা: সরকারি কাজ
লাল: কূটনৈতিক অবস্থা
কমলা: ইসিআর ভ্রমণকারী

এই প্রক্রিয়া, আধুনিক বায়োমেট্রিক ই-পাসপোর্টের সঙ্গে মিলিয়ে, আন্তর্জাতিক ভ্রমণকে দ্রুত, নিরাপদ এবং কার্যকর করে তোলে। ভারতের পাসপোর্ট ব্যবস্থা স্পষ্ট শ্রেণিবিন্যাস ও আধুনিক প্রযুক্তি সমন্বয় করে এখন বিশ্বমানের হয়েছে, যা নাগরিক, কর্মকর্তা ও কূটনীতিকদের আন্তর্জাতিক সীমান্ত পার হওয়ার সময় আত্মবিশ্বাস এবং সুবিধা প্রদান করে।
