আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের শীর্ষ ১৩টি শহরে বাড়ির দাম মার্চ ২০২৫-এ গড়ে ৮ শতাংশ বেড়েছে, কোথাও কোথাও এই বৃদ্ধি ১৪ শতাংশ পর্যন্ত ছুঁয়েছে। দিল্লি-এনসিআর ও বেঙ্গালুরুতে দাম বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি। বিশেষত, প্রিমিয়াম ও লাক্সারি হাউজিং সেগমেন্টে চাহিদা বাড়ার ফলে বিশেষজ্ঞরা ২০২৫ জুড়ে আরও ৬.৫ শতাংশ বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখছেন। বাড়ির দাম বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাড়াও চড়ছে, ফলে শহুরে মানুষের একা থাকা বা ছোট ফ্ল্যাট থেকে কিছুটা বড় ফ্ল্যাটে ওঠার স্বপ্ন অনেকের জন্য অধরাই হয়ে যাচ্ছে।
এই চড়া আবাসন ব্যয়ের সঙ্গে যখন শহুরে একাকীত্বের বাস্তবতা মিশে যায়, তখন জন্ম নিচ্ছে এক নতুন সামাজিক ও মানসিক প্রবণতা— ‘আর্বান হোবোসেক্সুয়ালিটি’। নামটি কিছুটা মজাদার শোনালেও বিষয়টি মোটেও হালকা নয়। এর অর্থ, কোনও ব্যক্তি মূলত থাকার জায়গা বা আর্থিক নিরাপত্তার জন্য সম্পর্ক শুরু করছে, প্রেমের আবরণে আসলে সুবিধা নিচ্ছে, অথচ আবেগগত বা আর্থিক দিক থেকে খুব বেশি কিছু দিচ্ছে না।
উন্নত বিশ্বের ধারণা, ভারতীয় প্রেক্ষাপট
‘হোবোসেক্সুয়াল’ শব্দটি প্রথম উন্নত বিশ্বে জনপ্রিয় হয়, যেখানে কাউকে মূলত থাকার জায়গার জন্য সম্পর্ক গড়তে দেখা যায়। কিন্তু এখন ভারতের মেট্রো শহরগুলোতেও এই প্রবণতা ধীরে ধীরে দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে মুম্বই, দিল্লি ও বেঙ্গালুরুতে, যেখানে ভাড়া অত্যন্ত বেশি, সম্পর্কের লেনদেনমূলক দিক স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
মনোবিদ চন্দনী তুগনায়েত বলেন, আজকাল অনেক মানুষ এমন সঙ্গীর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন যিনি আবেগগত, আর্থিক বা দৈনন্দিন কাজে সামান্য অবদান রাখেন, অথচ জীবনে বড় জায়গা দখল করে আছেন। বাইরে থেকে সম্পর্কটি রোম্যান্টিক মনে হলেও ভিতরে এক ধরনের ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়, যেখানে একজন সঙ্গী অপরজনের তুলনায় অনেক বেশি সুবিধা পান।
প্রেম যখন দায়িত্বে পরিণত হয়
অঙ্কিতা (নাম পরিবর্তিত), এক সফল উদ্যোক্তা, জানান—শুরুতে মনে হয়েছিল তারা প্রেমে পড়েছেন, তাই তিনি স্বাভাবিকভাবেই তার সঙ্গীকে নিজের বাড়িতে থাকতে দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনিই ভাড়া দিচ্ছিলেন এবং সম্পর্কের সমস্ত দায়িত্ব বহন করছিলেন। অঙ্কিতা বলেন, তার সঙ্গী ভাড়া দিত না, বরং মাঝে মাঝে কুকুর হাঁটানো বা রান্না করার মতো ছোটখাটো কাজ করত। কিন্তু যখন আবেগগত সমর্থন দরকার হতো, তখন সে কোথাও থাকত না।
মনোবিশ্লেষকরা বলছেন, দ্রুত ঘনিষ্ঠ হওয়া, অতিরিক্ত স্নেহ প্রদর্শন এবং ভান করা দুর্বলতার মতো আধুনিক ডেটিং প্রবণতা আসল ও ভুয়ো স্নেহের মধ্যে পার্থক্য করা কঠিন করে তুলছে।
শহুরে আবেগের অর্থনীতি
ডেলয়েট-এর “২০২৫ জেন জেড অ্যান্ড মিলেনিয়াল ওয়ার্ক সার্ভে” জানাচ্ছে, দেশের ৫০ শতাংশের বেশি মিলেনিয়াল ও জেন জেড কর্মী ২০২৫ সালে মাসিক আয়ের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছাচ্ছেন। মেট্রো শহরে একা থাকলে আয়ের ৪০ শতাংশের বেশি শুধু বাড়ি ভাড়ায় খরচ হয়। মুম্বইতে এই হার প্রায় ৪৮ শতাংশ।
তুগনায়েতের মতে, এর সঙ্গে যখন বিয়ে বা সম্পর্কে জড়ানোর সামাজিক চাপ, সংগ্রামের গ্ল্যামারাইজেশন এবং অনেকের ভিতরে থাকা ‘উদ্ধারকর্তা মানসিকতা’ যুক্ত হয়, তখন এই ধরনের হোবোসেক্সুয়াল সম্পর্কের পরিবেশ তৈরি হয়। তিনি বলেন, অনেক সময় এটি যত্ন বা ভক্তির ছদ্মবেশে আসে। তখন মানুষ শুধু ভাড়া দেয় না, সঙ্গের ভ্রমের জন্যও মূল্য দেয়।
সম্পর্কের সমতা জরুরি
বিশেষজ্ঞদের মতে, হোবোসেক্সুয়ালিটি নিয়ে কথা বলা মানে এই নয় যে আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত মানুষদের দোষারোপ করা। বরং সম্পর্ক যেন সমতা, সহানুভূতি ও সচেতনতার ভিত্তিতে তৈরি হয়—সেই দিকে মনোযোগ দেওয়াই আসল।
