আজকাল ওয়েবডেস্ক: কারও মতে ইতিহাসকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা, কারও বক্তব্য স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অপমান; স্বাধীনতা দিবসে কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রকের পোস্টার ঘিরে নিন্দার ঝড় সর্বত্র। সমাজমাধ্যম এক্স(সাবেক টুইটার)-এ প্রকাশিত বিতর্কিত সেই পোস্টারে রয়েছেন মহাত্মা গান্ধী, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু এবং শহিদ-এ-আজম ভগৎ সিং। কিন্তু তাঁদের মাথার উপর স্থান দেওয়া হয়েছে বিনায়ক দামোদর সাভারকরকে। আর তাতেই শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক।
সাভারকরকে নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। যখনই স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রশ্ন ওঠে, ব্যাকফুটে চলে যায় বিজেপি। হিন্দু মহাসভা থেকে সঙ্ঘ, স্বাধীনতা সংগ্রামে বিজেপির পূর্বসূরি দুই সংগঠনকে একহাত নিতে ছাড়ে না জাতীয় কংগ্রেস। দুই সংগঠনই স্বাধীনতা সংগ্রামে ইংরেজদের পক্ষ নিয়েছিল, এই নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে তেমন কোনও দ্বিমত নেই। সঙ্ঘের বিভিন্ন পুস্তিকা এবং দলিলেও সেই বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে। কাজেই কংগ্রেস-সহ অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দল বিজেপির হিন্দুত্ববাদী জাতীয়তাবাদের বিপক্ষে এই বিষয়টিকেই ঢাল করে। এবারেও বিরোধীদের অভিযোগ, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নিজেদের কুকীর্তি চাপা দিতেই নতুন করে ইতিহাস লেখার চেষ্টা করছে শাসক দল। আর তার জন্যেই সভারকরকে বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মাথায় বসানোর চেষ্টা।
প্রসঙ্গত, স্বাধীনতা দিবসেই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে লালকেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আরএসএস বন্দনাকেও তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছে রাজনৈতিক মহল। হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিতে ভাটা পড়তেই জোর করে আরএসএসকে স্বাধীনতা সংগ্রামে জোড়ার চেষ্টা করছেন মোদি, এমনই অভিযোগ বিরোধীদের। কেউ কেউ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ভারত ছাড়ো আন্দোলন থেকে আজাদ হিন্দ ফৌজের বিরুদ্ধে সেনা সংগ্রহ করা- সবেতেই ইংরেজদের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল তৎকালীন হিন্দু মহাসভা। এমনকী তেরঙ্গা পতাকার বিরোধিতা করে স্বাধীনতার ৫২ বছর পর্যন্ত নাগপুরে নিজেদের সদর দফতরে জাতীয় পতাকা পর্যন্ত উত্তোলন করেনি সঙ্ঘ। স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে সেই সংগঠনের স্তুতি করে মোদি দেশের প্রকৃত স্বাধীনতা সেনানীদের অপমান করেছেন বলেও সমালোচনা ধেয়ে এসেছে সমাজমাধ্যমে।
একই অভিযোগ উঠছে সাভারকরকে নিয়েও। আন্দামানে কারাবাসের আদেশের পর থেকেই একাধিকবার ইংরেজ সরকারের কাছে ‘মার্সি পিটিশন’ বা ক্ষমা চেয়ে হলফনামা দেন সাভারকর। এর পর ইংরেজ সরকার তাঁকে মুক্তি দেয়। সেলুলার জেলে সেসময় তীব্র অত্যাচারে দিন কাটাচ্ছেন শয়ে শয়ে বাঙালি, শিখ কিংবা তামিল তরুণ। জেলমুক্তির পর নিজেকে লিখিত ভাবে ইংরেজ সরকারের অনুগত ভৃত্য বলেও দাবি করেন সাভারকর। সুভাষ চন্দ্র বসু যখন আজাদ হিন্দ বাহিনী নিয়ে সরাসরি ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছেন তখন সাভারকার হিন্দু যুবকদের দলে দলে ইংরেজ সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে আহ্বান জানান। আজ সেই সাভারকারকেই স্থান দেওয়া হচ্ছে সুভাষের উপর। একই ভাবে নিজের শেষ পিটিশনে আদ্যোপান্ত কমিউনিস্ট ভগৎ দাবি জানান, তাঁকে যেন যুদ্ধবন্দি হিসাবে গুলি করে মারা হয়। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ক্ষমা চাননি ভগৎ। সেই তাঁকেও এখন সাভারকারের নিচে বসানো হচ্ছে। মূলত একারণেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন নেটিজেনদের একাংশ।
আরও পড়ুনঃ জন্মদিনের কেক এ বিস্ফোরণ! আনন্দ মুহূর্তে বদলাল আতঙ্কে, সত্য ঘটনা জানলে ভিরমি খাবেন
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ অবশ্য বিষয়টিকে ইঙ্গিতপূর্ণ বলেই মনে করছেন। একদিকে ইলেকশন কমিশন এবং বিজেপির আঁতাত নিয়ে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে রোজ কেন্দ্রকে বিঁধছে জাতীয় কংগ্রেস-সহ অন্যান্য বিরোধী দল। তার উপর গতকালই সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খেয়েছে নির্বাচন কমিশন। বিহার ভোটের আগে করা ‘এস আই আর’-এ বাদ পড়া প্রায় ৬৫ লক্ষ মানুষের ভোটাধিকার কেন বাতিল করা হল জানাতে হবে লিখিত ভাবে, সাফ নির্দেশ সর্বোচ্চ আদালতের। ফলে সাঁড়াশি চাপে বিজেপি। মেরুকরণের রাজনীতি থেকে যে মানুষ মুখ ফেরাচ্ছেন তাও বোঝা গিয়েছে বিগত লোকসভা ভোটেই। ফলে চিরাচরিত সব অস্ত্র ফিকে হতেই কি এবার নিজেদের নতুন করে দেশপ্রেমী প্রমাণের চেষ্টা বিজেপির? প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলের।
