আজকাল ওয়েবডেস্ক: সম্প্রতি ওডিশায় ভয়াবহ এক ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি ঘটেছে পুরী তে। এক ১৫ বছর বয়সী তরুণীকে তিনজন অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতী পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খবর অনুযায়ী, ভয়াবহ এই ঘটনার পর গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় ওই কিশোরীকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার আরও অবনতি হলে ভুবনেশ্বরের এইমস (AIIMS) হাসপাতালে রেফার করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন মেয়েটির শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে৷ তরুণীর এই পরিণতিতে রাজ্যজুড়ে হুলুস্থুল। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, প্রথমে তরুণীকে এইমস ভুবনেশ্বরের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। এরপর দীর্ঘ সময় তরুণীর চিকিৎসা চলেছে। চিকিৎসকরা তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। খবর সূত্রে, ক্রমে তরুণীর অবস্থার অবনতি হওয়ায় রবিবার (২০ জুলাই) তাঁকে দিল্লির এইমসে এয়ারলিফ্ট করে নিয়ে যাওয়া হয় উন্নত চিকিৎসার জন্য। এমনকি এই যাত্রাকে সফল করতে একটি ‘গ্রিন করিডর’ তৈরি করা হয়। এতে মাত্র ১০ থেকে ১২ মিনিটের মধ্যে এম্বুলেন্স ভুবনেশ্বরের এইমস থেকে বিজু পট্টনায়েক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছতে পারে।

সূত্র মারফত, ভুবনেশ্বরের ট্র্যাফিক ডিসিপি তপন কুমার মহান্তি জানিয়েছেন, এই অপারেশনে এক প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কোনও বাধা বিপত্তি ছাড়াই মেয়েটিকে বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই পদক্ষেপ। ভুবনেশ্বর এইমস-এর নির্বাহী পরিচালক ডঃ আশুতোষ বিশ্বাস বলেন, 'গতকাল তরুণীর রক্তচাপ খুব কম ছিল। তবে আজ তা কিছুটা উন্নত হয়েছে। তাই এখন তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যথা রেফার করা হয়েছে।'

ভয়াবহ ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার। ওডিশার পুরী জেলার বালাঙ্গা থানার অন্তর্গত এলাকায়। প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী খবর, ঘটনার দিন তিনজন বাইক আরোহী প্রথমে ওই তরুণীকে অপহরণ করে। পরে তারা মেয়েটিকে ভরগবী নদীর তীরে নিয়ে যায়। বাইবর গ্রাম সংলগ্ন একটি নির্জন জায়গায় তরুণীকে নিয়ে যাওয়া হয়। ওখানেই তরুণীর গায়ে প্রথমে একটি দাহ্য পদার্থ ঢালে৷ এরপর তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

আরও পড়ুনঃ আইস্ক্রিম খাওয়ার টোপ দেখিয়ে মাত্র নয় বছরের শিশুর সঙ্গে দোকানের মালিক যা করলেন, শুনলে শিউরে উঠবেন আপনিও..

স্থানীয় বাসিন্দারা চেঁচামেচি শুনে তৎক্ষণাৎ সেখানে ছুটে যান। তাঁরা দ্রুত আগুন নিভিয়ে তরুণীকে উদ্ধার করেন। এরপর পিপিলির একটি স্থানীয় হাসপাতালে গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয় তরুণীকে। সেখানে তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে এইমস (AIIMS)  ভুবনেশ্বরে নিয়ে যাওয়া হয়।

ঘটনার জেরে পুলিশ বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছে। ইতিমধ্যেই এক ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে তরুণীর বয়ান আইসিইউতে থাকাকালীন নেওয়া হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁর বক্তব্য তদন্তের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তরুণীর মা বালাঙ্গা থানায় একটি এফআইআর দায়ের করেছেন।

ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাজি জানিয়েছেন, এই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত চলছে। গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হবে। এইমস ভুবনেশ্বরের চিকিৎসকদের পরামর্শে তরুণীকে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে দিল্লিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, দোষীদের দ্রুত শনাক্ত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশকে।

এই নৃশংস ঘটনায় রাজ্য জুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষ দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছেন। পুলিশ অভিযুক্তদের তল্লাশি চালিয়েছে। স্থানীয়দের কাছে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে৷