আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছিল একের পর এক। সংসদে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সেই সব প্রশ্নের জবাব দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তুলে আনলেন ভারত-পাক দ্বন্দ্বের সেই দিনগুলির কথা। বললেন, “পাকিস্তানের ডিজিএমও ফোন করে বলেছিলেন, আমাদের আর মারবেন না। আমরা আর সহ্য করতে পারছি না রেহাই দিন।”

সোমবারের পর মঙ্গলবারও ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে বিতর্ক জারি রয়েছে লোকসভায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্করের জবাবি ভাষণের পর সংসদে ভাষণ রাখছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর আগে বিতর্কে কেন্দ্রকে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রসঙ্গও উঠে আসে রাহুলের বক্তব্যে। ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, দুই দেশকে যুদ্ধ থামানোর প্রস্তাব তিনিই দিয়েছিলেন এবং ব্যবসা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যদিও ভারত প্রথম থেকেই জানিয়ে আসছে যে কোনও তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই যুদ্ধবিরতি দ্বিপাক্ষিক ভাবে হয়েছে। মোদিকে উদ্দেশ্য করে রাহুল এর পর কটাক্ষ করে বলেন, “বলুন ট্রাম্প মিথ্যেবাদী।”

জবাব বক্তৃতার শুরুতে মোদি ১৪০ কোটি দেশবাসীকে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে তাঁর পাশে দাঁড়ানোয় অভিনন্দন জানান। এক পর তিনি বলেন, “২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে হামলা হয়। ভয়ঙ্কর ঘটনা হয়। যে ভাবে জঙ্গিরা নির্দোষ লোকদের মেরেছে, তা নিষ্ঠুর। ভারতে দাঙ্গা ছড়ানোর ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।”

মোদি বলেন, “জঙ্গিদের নিকেশ করব বলেছিলাম। শাস্তি হবে। ২২ এপ্রিল বিদেশ থেকে ফিরে বৈঠকে নির্দেশ দিয়েছিলাম কড়া জবাব দিতে হবে। এটি রাষ্ট্রীয় সংকল্প।” সেনার প্রশংসা করে তিনি বলেন, “নিজের এবং সেনার ক্ষমতায় বিশ্বাস রয়েছে। সেনাকে স্বাধীনতা দিই। বৈঠকে বলা হয়, কোথায়, কখন পদক্ষেপ করা হবে। আমরা গর্বিত, এমন সাজা দেওয়া হয়েছে, যে ওদের ঘুম উড়ে গিয়েছে।”

?ref_src=twsrc%5Etfw">July 29, 2025

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “‘পহেলগাঁও হামলার পর থেকে পাকিস্তানি সেনা বুঝেছিল, বড় কোনও পদক্ষেপ করা হবে। পরমাণু হুমকি এসেছিল। ৬ মে রাত এবং ৭ মে সকালে ভারত যা স্থির করেছিল, তা করে। পাকিস্তান কিছু করতে পারেনি। ২২ মে ২২ এপ্রিলের বদলা নেওয়া হয়েছে। আগে যেখানে যাইনি, সেখানেও গেছি। পাকিস্তানের কোণে কোণে জঙ্গিদের আড্ডা ধ্বংস করা হয়েছে”। 

কংগ্রেসকে খোঁচা মেরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিদেশনীতি নিয়েও অনেক কথা হয়েছে। একটা কথা স্পষ্ট বলছি, দুনিয়ার কোনও দেশ ভারতকে নিজের নিরাপত্তার বিষয়ে পদক্ষেপ করতে বাধা দেয়নি। ১৯৩টি দেশের মধ্যে মাত্র তিনটি দেশ পাকিস্তানের সমর্থন করেছিল। দুনিয়ার সমর্থন মিলেছে, কিন্তু দুর্ভাগ্য, বীরদের কংগ্রেসের সমর্থন মেলেনি। ২২ এপ্রিলের তিন চার দিন পর লাফাচ্ছিল। বলছিল, কোথায় গেল ৫৬ ইঞ্চির ছাতি। মোদি ফেল করে। খুব মজা পাচ্ছিল। রাজনীতি করছিল ওরা। স্বার্থের রাজনীতি করে আমাকে নিশানা করে। কিন্তু ওদের কথা, দেশের সেনার মনোবল কমিয়ে দিচ্ছিল। ভারতের সামর্থ, সেনায় ভরসা নেই কংগ্রেসের। তাই সিঁদুর অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।” 

আরও পড়ুন: অপারেশন সিঁদুর, সংঘর্ষবিরতি, পহেলগাঁও কূটনীতি..., বিরোধীদের পাঁচ প্রশ্ন কীভাবে সামাল দিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা

তিনি বলেন, "এ সব করে কংগ্রেস দেশবাসীর মনে জায়গা করতে পারবে না। সীমান্তের ওপার থেকে যা ছড়ানো হয়েছিল, পাকিস্তানের মিথ্যে প্রচারকে এখানে প্রচার করা হচ্ছে। সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে আমরা জঙ্গিদের লঞ্চিং প্যাড নষ্ট করি। বালাকোট এয়ারস্ট্রাইকের সময়ে আমাদের লক্ষ স্থির ছিল। সিঁদুর অভিযানেও স্থির ছিল লক্ষ। কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছি। যেখানে পহেলগাঁও জঙ্গিদের নিয়োগ হয়েছে, অস্ত্র দেওয়া হয়, সেখানে অভিযান চালাই। জঙ্গিদের নাভিতে হামলা চালিয়েছি। এ বারও ১০০ শতাংশ লক্ষপূরণ হয়েছে।”

সংঘর্ষবিরতি নিয়ে মোদি বলেন, “আমরা দুনিয়াকে বলেছি আমাদের লক্ষ জঙ্গিরা। আমরা এমন জবাব দিয়েছি, যা বছরের পর বছর মনে থাকবে। ৯মে মধ্যরাত থেকে আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তানের প্রতিটি কোণায় প্রহার করেছে। ওরা মাথানত করতে বাধ্য হয়েছে। টিভিতে দেখেছেন! পাকিস্তানে কেউ বলছে, আমরা সুইমিং পুলে ছিলাম, ভারত হামলা চালিয়ে দিয়েছে। ডিজিএমওকে ফোন করে পাকিস্তান বলে, ব্যাস থামাও, অনেক মেরেছো। আর সহ্য করতে পারছি না। পাক ডিজিএমওর ফোন ছিল। এটা ভারতের নীতি ছিল, যা সেনার সঙ্গে মিলে তৈরি হয়।”

২৬ এপ্রিল দক্ষিণ কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বৈসরণ উপত্যকায় নৃশংস জঙ্গি হানায় ২৬ জন নিরীহ পর্যটকের মৃত্যুর পাল্টা প্রত্যাঘাতে অপারেশন সিঁদুর অভিযান চালায় ভারত। পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ন‘টি জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করে দেওয়া হয়। প্রত্যুত্তরে পাকিস্তান ড্রোন এবং মিসাইল হামলা চালায়। সেই সব হামলা ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সফল ভাবে প্রতিহত করে। পাল্টা ভারত পাকিস্তানের বিমানঘাঁটিগুলিতে হামলা চালায়। অবশেষে দুই দেশের ডিজিএমও মধ্যে বৈঠকের পর ১০ মে সংঘর্ষবিরতির ঘোষণা হয়।

ছবি: সংসদ টিভি।