আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভেজাল কাশির সিরাপ সেবনের ফলে প্রায় ২২টি শিশুর মৃত্যুর পর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও বা হু) কোল্ডরিফ এবং আরও দু’টি কাশির সিরাপের বিক্রি এবং ব্যবহার নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের সর্বশেষ পরামর্শে রেডনেক্স ফার্মাসিউটিক্যালসের রেসপিফ্রেশ টিআর এবং শেপ ফার্মার রিলাইফকে দূষিত এবং ‘নিম্নমানের’ পণ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

কোল্ডরিফ কাশির সিরাপ সেবনের কারণে প্রায় ২২ জন শিশুর মৃত্যুর পর এই কাশির সিরাপগুলি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (সিডিএসসিও)-এর মতে, ওষুধটিতে অনুমোদিত সীমার প্রায় ৫০০ গুণ বেশি পরিমাণে বিষাক্ত ডাইথিলিন গ্লাইকল ছিল। সিডিএসসিও মৃত্যুর বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে অবহিত করেছে এবং জানিয়েছে যে দূষিত কোনও ওষুধ রপ্তানি করা হয়নি।

আরও পড়ুন: ভারতে ১৩ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চলেছে গুগল, প্রধানমন্ত্রী মোদিকে বিস্তারিত জানালেন সুন্দর পিচাই

WHO যে তিনটি সিরাপের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে, সেগুলি কী কী?

কোল্ডরিফ কাশির সিরাপ

কোল্ডরিফ হল তামিলনাড়ুর স্রেসান ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি একটি কাশির সিরাপ। ২০২৫ সালের অক্টোবরে মধ্যপ্রদেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ একাধিক শিশুর মৃত্যুর খবর দেয়, যার সবক’টিই দূষিত কাশির সিরাপের ব্যাচের দিকে ইঙ্গিত করে। কাশির ওষুধটি যাসাধারণত শিশুদের ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত ছিল। নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর দেখা যায় যে, কোল্ডরিফের কাশির সিরাপে ৮.৬ শতাংশ ডাইইথিলিন গ্লাইকল (ডিইজি) রয়েছে। যা অনুমোদিত ০.১ শতাংশের বেশি।

এর পর, একের পর এক রাজ্য ওষুধটি ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ জারি করে এবং নিষিদ্ধ করার নির্দেশ দেয়। দু’বছরের কম বয়সী শিশুদের এই সিরাপ দেওয়া উচিত নয় বলেও নির্দেশিকা জারি করা হয়। স্রেসান ফার্মাসিউটিক্যালসের উৎপাদন লাইসেন্স বাতিল করা হয় এবং এর মালিক জি রঙ্গনাথনকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

রেসপিফ্রেস টিআর

গুজরাটের রেডনেক্স ফার্মাসিউটিক্যালস দ্বারা নির্মিত, রেসপিফ্রেশ টিআর-এর কারণে কোনও শিশু মৃত্যু হয়নি। তবে, এটিতে ১.৩৪২ শতাংশ ডিইজি রয়েছে, যা অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে বেশি। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে তৈরি এবং ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা সিরাপটির। ফলাফল প্রকাশের পর থেকে ওষুধটি বাজার থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং ভারত সরকার সমস্ত উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে।

রিলাইফ

আতসকাচের তলায় থাকা তৃতীয় সিরাপটি হল শেপ ফার্মার রিলাইফ। সিডিএসসিও এই কাশির সিরাপে ০.৬১৬ শতাংশ ডিইজি খুঁজে পেয়েছে। যার ফলে পণ্যটি তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, শেপ ফার্মাকে তাদের সকল চিকিৎসা পণ্যের উৎপাদন বন্ধ করতেও বলা হয়েছে।

মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়ারা জেলায় এবং রাজস্থানে, দূষিত কাশির সিরাপ কোল্ডরিফ খাওয়ার কারণে মোট ২২ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বেশিরভাগ শিশুই ওষুধ সেবনের ফলে কিডনি সংক্রমণ এবং ফেইলিয়রের শিকার।

ভারতে তৈরি কাশির ওষুধ ব্যবহার করে মৃত্যুর তালিকায় মধ্যপ্রদেশ নতুন সংযোজন। ভারতীয় তৈরি কাশির সিরাপে ডাইথাইলিন গ্লাইকল কয়েক ডজন তাজা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। ২০২৩ সালে গাম্বিয়ায় ৭০ জন এবং উজবেকিস্তানে ১৮ জন শিশুর মৃত্যুর সঙ্গে ডাইথাইলিন গ্লাইকল-মিশ্রিত ভারতীয় সিরাপের যোগসূত্র পাওয়া গেছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের জানুয়ারির মধ্যে, কাশ্মীরের জম্মুতে পাঁচ বছরের কম বয়সী কমপক্ষে ১২ জন শিশু কাশির সিরাপ সেবনের কারণে মারা গিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সমাজকর্মীদের অভিযোগ, মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। অতীতে, কোডিনযুক্ত কাশির সিরাপের অপব্যবহারেরও উদাহরণ রয়েছে অনেক। কোডিনযুক্ত কাশির সিরাপ একটি হালকা ওপিওয়েড, যা উচ্চমাত্রায় আনন্দ তৈরি করতে পারে এবং আসক্তির দিকে পরিচালিত করতে পারে। বাচ্চাদের জন্য এটি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয় না।