আজকাল ওয়েবডেস্ক: ১৫ই অগাস্ট আসছে, ভারতের স্বাধীনতা দিবস। ওই দিন প্রতিটি ভারতীয় পূর্ণ উৎসাহ এবং দেশপ্রেমের সঙ্গে দিনটি উদযাপন করতে প্রস্তুত। স্বাধীনতা দিবস কেবল একটি দিন নয় বরং এটি প্রতিটি ভারতীয়ের জন্য একটি আবেগ। অসংখ্য ত্যাগের বিনিময়ে মিলেছে স্বাধীনতা। দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন লালকেল্লায় ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করেন, তখন প্রতিটি ভারতীয়, এমনকি অনাবাসীরাও, ব্রিটিশ শাসন থেকে দেশের স্বাধীনতার জন্য মানুষের ত্যাগের কথা স্মরণ করে আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠেন। কিন্তু আপনি কি জানেন, কেন স্বাধীনতার দিন তেরঙ্গা পতাকা শুধুমাত্র লালকেল্লায় উত্তোলন করা হয়, তাজমহল বা ফতেপুর সিক্রির মতো অন্য কোনও মুঘল স্থাপত্যে নয়? আসুন জেনে নেওয়া যাক এর নেপথ্যের কারণ...
লালকেল্লা
লাল কেল্লাটি ১৭ শতকে মুঘল সম্রাট শাহজাহান তাঁর শক্তি এবং মহিমার প্রতীক হিসেবে নির্মাণ করেছিলেন। এই দুর্গটি ছিল ক্ষমতার কেন্দ্র এবং ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত মুঘল সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসেবে কার্যকর ছিল। এই কারণে, লালকেল্লা ভারতীয় ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে। ব্রিটিশরা ক্ষমতায় এসে দুর্গটি দখল করলে, তারা এখানে তাদের পতাকা উত্তোলন করে।
জওহর লাল নেহেরু দিষ্টিকোণ
১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট ভারত স্বাধীন হয়। ব্রিটিশরা ভারত ছাড়ে। দেশের জনগণ আনন্দে ভরে ওঠে এবং একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। জওহর লাল নেহেরু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন। প্রথমবারের মতো নতুন দিল্লির ইন্ডিয়া গেটের কাছে প্রিন্সেস পার্কে জাতীয় পতাকা উত্তোলিত করা হয়েছিল। অবশ্য ঠিক তার একদিন পর অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের ১৬ অগাস্ট লালকেল্লায় ব্রিটিশ পতাকা সরিয়ে ভারতের ত্রিবর্ণ জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়। একদিন কেন দেরি হয়েছিল তা নিয়ে এখনও প্রশ্ন থেকে গিয়েছে।
তবে তার পরের বছর অর্থাৎ ১৯৪৮ সাল থেকে প্রতিবছর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর লালকেল্লা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে স্বাধীনতা দিবস পালন করেন। লালকেল্লায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন প্রতিটি ভারতীয়ের অনুভূতির প্রকাশ। পতাকা উত্তোলনকে শক্তির কেন্দ্র হিসেবে দেখা হত। তারপর থেকে, প্রতিটি স্বাধীনতা দিবসে এই ঐতিহ্য অব্যাহত রয়েছে।
লালকেল্লা - জাতীয় গর্বের প্রতীক
লালকেল্লার ইতিহাস এবং এর অবস্থান এটিকে অন্যান্য মুঘল স্থাপত্য এবং স্মৃতিস্তম্ভ থেকে আলাদা করে তোলে। এর অবস্থানও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং শক্তি ও মহিমার বার্তা দেয়। দুর্গটি মাতৃভূমির জন্য স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বেশ কয়েকটি সংগ্রামের সাক্ষী হয়েছে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথেও লালকেল্লার দীর্ঘ সম্পর্ক রয়েছে। এখান থেকেই মহাত্মা গান্ধী, জহরলাল নেহেরু এবং সুভাষচন্দ্র বসু সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা ভারতের জনগণকে স্বাধীনতার লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করার জন্য বক্তৃতা এবং সমাবেশ করতেন। এই স্থাপত্য ভারতের অতীত বর্তমান এবং ভবিষ্যতের স্মারক বহন করে চলে।
লালকেল্লার ঐতিহাসিক গুরুত্ব তো রয়েইছে, এছাড়া এর বিশাল প্রাচীর এবং দিওয়ান-এ-আম এটিকে জাতীয় অনুষ্ঠানের জন্য উপযুক্ত করে তোলে। লাল কেল্লা কেবল একটি স্থাপত্য নয়, বরং ভারতের স্বাধীনতা এবং গর্বের প্রতীক।
