আজকাল ওয়েবডেস্ক: ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মৌমাছিকে এবার নয়া অস্ত্রে পরিণত করল চিন। জানা গিয়েছে, চীনের বিজ্ঞানীরা মৌমাছিদের মস্তিষ্কে ক্ষুদ্র নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র স্থাপন করে তাদেরকে সাইবর্গে রূপান্তর করেছেন। এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মৌমাছিদের উড়ান নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। বাঁ দিকে, ডান দিকে, সামনে বা পিছনে যেতে বাধ্য করা যাবে তাদের। এমনকি, ভবিষ্যতে এই সাইবর্গ মৌমাছিদের গোপন সামরিক মিশন কিংবা দুর্গম এলাকায় অনুসন্ধানমূলক কাজে ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে।
জানা গিয়েছে, বেজিং ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির একদল গবেষক বিশ্বের সবচেয়ে হালকা মস্তিষ্ক-নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র তৈরি করেছেন। এর ওজন মাত্র ৭৪ মিলিগ্রাম। যন্ত্রটি মৌমাছির পিঠে বেঁধে তিনটি সূচের মাধ্যমে তাদের মস্তিষ্কে প্রবেশ করানো হয়। তারপর ইলেকট্রনিক পালসের মাধ্যমে মৌমাছিগুলিকে নিয়ন্ত্রণে রেখে তাদের উড়ানের দিক নির্দেশনা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই ক্ষুদ্র চিপের দক্ষতা এতটাই উন্নত যে, প্রতি দশ পরীক্ষার মধ্যে ন’বার মৌমাছি গবেষকদের আদেশ পালন করেছে বলে দাবি করা হয়েছে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে।
এই প্রকল্পের নেতৃত্বদানকারী অধ্যাপক ঝাও জিয়েলিয়াং জানান, ‘পোকা-নির্ভর রোবট তাদের স্বাভাবিক গতিশীলতা, পরিবেশ-উপযোগিতা এবং ছদ্মবেশ ক্ষমতার কারণে যেকোনও কৃত্রিম বিকল্পের চেয়ে বেশি কার্যকর’। তিনি আরও বলেন, ‘এই ধরনের সাইবর্গ গোপন নজরদারি, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান, মাদকদ্রব্য দমন এবং দুর্যোগ মোকাবিলার ক্ষেত্রে গুরুত্পূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে’। জানা যাচ্ছে, সিঙ্গাপুরের এক রিসার্চ প্রকল্প থেকে অনুরপ্রেরণা পেয়েছিলেন চিনের গবেষকরা।
সেখানে বিটল ও তেলাপোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি সাইবর্গ কন্ট্রোলার তৈরি করা হয়েছিল। তবে সেটির ওজন ছিল বর্তমান চিনা কন্ট্রোলারের তিনগুণ। কিন্তু চিনের গবেষকরা ওজন কমিয়ে অত্যন্ত পাতলা পলিমার ফিল্মে সার্কিট প্রিন্ট করে। এতে ইনফ্রারেড রিমোটসহ বিভিন্ন মাইক্রোচিপ বসানো হয়েছে, যা পোকামাকড়ের পাখার থেকেও পাতলা। তবে এই আধুনিক প্রযুক্তির মাঝেও কিছু সমস্যা থেকে গিয়েছে। বর্তমান ব্যাটারিগুলির কার্যক্ষমতা সীমিত এবং ভারী ব্যাটারি মৌমাছির পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়।
তাছাড়া, পতঙ্গের দেহের ভিন্ন ভিন্ন অংশে স্নায়ুবিক প্রতিক্রিয়া থাকায় একই কন্ট্রোলার সব প্রজাতির উপর ব্যবহার করা সম্ভব নয়। তবে অধ্যাপক ঝাও জানিয়েছেন, ‘ভবিষ্যতের গবেষণায় আমরা সিগন্যাল এবং নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি উন্নত করে এই সাইবর্গ মৌমাছিদের আচরণের সক্ষমতা আরও বাড়াতে পারব’। চিনের এই গবেষণা এখন সারা বিশ্বে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই অগ্রগতি যেমন বিস্ময় সৃষ্টি করেছে, তেমনি নৈতিকতা ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিশেষজ্ঞ মহল।
