আজকাল ওয়েবডেস্ক: রক্তাক্ত পাকিস্তান। পড়শি দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের ডেরা ইসমাইল খান জেলার রাত্তা কুলাচি পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আত্মঘাতী হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে সাতজন পুলিশ, ছয়'জন জঙ্গি। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের এক প্রতিবেদন অনুসারে, শিক্রবার রাতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়।  আত্মঘাতী হামলার পর ভারী অস্ত্র নিয়ে হামলা করে বন্দুকধারীরা। দুই পক্ষের মধ্যে চলে তুমুল গুলির লড়াই।

রাত্তা কুলাচি পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পুলিশকর্মীদের পাল্টা গুলিবর্ষণে তিন জঙ্গিকে নিষ্ক্রিয় করা হয়। তখনই জানা যায় যে, আরও কয়েকজন জঙ্গি পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভিতরেই লুকিয়ে আছে। শুক্রবার গভীর রাতে একটি ক্লিয়ারেন্স অপারেশনের সময়, লুকিয়ে তাকা তিন সন্ত্রাসবাদীকে খতম করা হয়। এই অপারেশনের সময়েই গুলি যুদ্ধে ছয়'জন পুলিশকর্মী নিহত হন। তার আগে এক পুলিশ কর্মী প্রাণ হারিয়েছিলেন। আহত পুলিশকর্মীর সংখ্যা ১৩। 

অভিযোগ ছিল গত বৃহস্পতিবার রাতে কাবুলে বিমান হামলা চালিয়েছিল পাকিস্তান। সেই ঘটনায় তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের (টিটিপি- পাকিস্তান) প্রধানকে খতম করেছিল বলে প্রাথমিক ভাবে দাবি করেছিল ইসলামাবাদ। তবে পরে দাবি করা হয়, টিটিপি প্রধান বহাত তবিয়তেই বেঁচে আছেন! কাবুলে ওই পাক হামলার পর থেকেই পাকিস্তানে আত্মঘাতী হামলার হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছিল টিটিপি। পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের হামলার নেপথ্যে টিটিপি- পাকিস্তান রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। 

পুলিশ আধিকারিকরা জানিয়েছেন, সমস্ত প্রশিক্ষণার্থী নিয়োগকারী এবং কর্মী সদস্যদের নিরাপদে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এই অভিযানে এসএসজি কমান্ডো, আল-বুর্ক ফোর্স, এলিট ফোর্স এবং পুলিশ সদস্যরা অংশ নিয়েছিলেন।

শুক্রবার গভীর রাতে সন্ত্রাসীবাদীদের বিস্ফোরক বোঝাই একটি ট্রাক পুলিশ প্রশিক্ষণ স্কুলের প্রধান ফটকে ঢুকে পড়লে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের পরপরই, বিভিন্ন পোশাক পরা জঙ্গিরা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকে। পুলিশ সদস্যরা পাল্টা গুলি চালায় এবং আক্রমণকারীদের ঘিরে ফেলে। গুলি বিনিময়ের সময়, জঙ্গিরা হাতবোমা ছুঁড়তে থাকে।

আরও পড়ুন- হটাৎ চীনের উপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ট্রাম্পের! জানুন আসল কারণ

ডেরা ইসমাইল খান জালার ডিপিও সাহেবজাদা সাজ্জাদ আহমেদ এবং আরপিও সৈয়দ আশফাক আনোয়ার ব্যক্তিগতভাবে ঘটনাস্থলে অভিযান তত্ত্বাবধান করেন। পাঁচ ঘন্টার তীব্র লড়াইয়ের পর, ছয়'জন সন্ত্রাসবাদীকে খতম করা হয়। নিরাপত্তা বাহিনী তাদের কাছ থেকে আত্মঘাতী ভেস্ট, বিস্ফোরক, আধুনিক অস্ত্র এবং গোলাবারুদ উদ্ধার করে। আহত ১৩ জন পুলিশ সদস্যকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য নিকটবর্তী হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।

ডিপিও জানিয়েছেন, হামলার সময় প্রশিক্ষণ স্কুলে প্রায় ২০০ জন প্রশিক্ষণার্থী, প্রশিক্ষক এবং কর্মী উপস্থিত ছিলেন এবং তাঁদের নিরাপদে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। খাইবার পাখতুনখোয়া পুলিশের মহাপরিদর্শক জুলফিকার হামিদ নিশ্চিত করেছেন যে, এলাকাটি সম্পূর্ণরূপে জঙ্গিমুক্ত করা হয়েছে।

আইজিপি সফল অভিযানের জন্য আরপিও এবং ডিপিওর নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন, শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন এবং অভিযানে অংশ নেওয়া কর্মকর্তা ও কর্মীদের জন্য পুরষ্কার ঘোষণা করেছেন।