আজকাল ওয়েবডেস্ক: একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতি গ্রহই পৃথিবীর অস্তিত্বের প্রধান কারণ। এই বিশাল গ্যাস দৈত্যটি প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে নবীন সৌরজগতের গ্যাস ও ধূলিকণাকে সূর্যের দিকে ছিটকে পড়া থেকে রক্ষা করেছিল। এর ফলে, পৃথিবীসহ অভ্যন্তরীণ গ্রহগুলির গঠনের উপাদানগুলো সংরক্ষিত থাকে। গবেষকরা বলছেন, বৃহস্পতির উপস্থিতি ছাড়া হয়তো আজ পৃথিবী, মঙ্গল বা শুক্র—কোনোটিই অস্তিত্বে থাকত না।


এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাইস ইউনিভার্সিটির একদল বিজ্ঞানী। তাঁরা জানিয়েছেন, সৌরজগতের প্রাথমিক সময়ে বৃহস্পতি যখন নিজের আকৃতি নিচ্ছিল, তখন এটি একধরনের “প্রতিরোধক প্রাচীর” হিসেবে কাজ করে, যা সূর্যের দিকে গ্যাস ও ধূলিকণার প্রবাহকে আটকে দেয়। এর ফলে সূর্যের চারপাশে যে পদার্থগুলো ঘুরছিল, সেগুলো ধীরে ধীরে জমে শিলা-গ্রহের বীজ তৈরি করে — যা পরে পৃথিবী, মঙ্গল ও শুক্রের জন্ম দেয়।


গবেষণার সহ-নেতা অ্যান্ড্রে ইজিদোরো, রাইস ইউনিভার্সিটির ভূ-বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, বলেন — “বৃহস্পতি শুধু সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ নয়, এটি পুরো অভ্যন্তরীণ সৌরজগতের ‘স্থপতি’। বৃহস্পতি না থাকলে হয়তো আজকের মতো পৃথিবীই থাকত না।”

আরও পড়ুন: মাস্কের নতুন খেলা, কী বললেন নেটিজেনরা


সূর্য জন্ম নেওয়ার পর তার চারপাশে তৈরি হয়েছিল এক বিশাল ঘূর্ণায়মান গ্যাস ও ধূলিকণার ডিস্ক। এই পদার্থগুলির অনেকটাই সূর্যের মহাকর্ষে আকৃষ্ট হয়ে সেটির মধ্যে বিলীন হতে পারত। কিন্তু বৃহস্পতির শক্তিশালী মহাকর্ষীয় টান এই গ্যাস-ধূলির স্রোতে তরঙ্গ ও কম্পন তৈরি করে, যার ফলে ডিস্কে কয়েকটি রিং-এর মতো অঞ্চল গঠিত হয়। এই রিংগুলোই ছিল এক ধরনের “মহাজাগতিক ট্রাফিক জ্যাম”, যেখানে ছোট ছোট ধূলিকণাগুলি আটকে থেকে ধীরে ধীরে একে অপরের সঙ্গে মিশে বড় শিলা ও গ্রহাণুর আকার নেয়। এগুলোই পরবর্তীতে গ্রহে রূপ নেয়।


বৃহস্পতি সৌরজগতকে দুই ভাগে ভাগ করে দেয়। অভ্যন্তরীণ অঞ্চল ও বহিঃঅঞ্চল। গ্রহটি যত বড় হতে থাকে, ততই এটি ডিস্কে একটি বিশাল ফাঁক তৈরি করে, যা দুই অঞ্চলের পদার্থকে একে অপরের সঙ্গে মিশতে দেয়নি। এর ফলেই সৌরজগতের বিভিন্ন অঞ্চলের পদার্থের "আইসোটোপিক" স্বাক্ষর আলাদা রয়ে যায় যা আজও উল্কাপিণ্ডে দেখা যায়।


এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা করেছেন কেন কিছু প্রাচীন উল্কাপিণ্ড সৌরজগতের প্রথম কঠিন পদার্থগুলির কয়েক মিলিয়ন বছর পর গঠিত হয়েছিল। তাঁদের মতে, বৃহস্পতির এই মহাকর্ষীয় প্রতিবন্ধকতাই সেই বিলম্বের কারণ। গবেষণাপত্রে ইজিদোরো বলেন, “আমাদের ফলাফল দেখাচ্ছে যে, বৃহস্পতি নিজেই এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছিল যার কারণে কিছু উল্কাপিণ্ড পরে জন্ম নেয়।”


সুতরাং, বৃহস্পতি শুধু এক বিশাল গ্যাস দৈত্যই নয় এটি সৌরজগতের রক্ষাকর্তা ও স্থপতি। এটি সূর্যের কাছাকাছি অঞ্চলে পদার্থের গঠন ও স্থিতিশীলতায় মূল ভূমিকা পালন করেছে, অভ্যন্তরীণ গ্রহগুলির কক্ষপথ স্থিতিশীল করেছে এবং সৌরজগতের আকার ও বিন্যাস নির্ধারণ করেছে। এককথায়, বিজ্ঞানীদের মতে, “বৃহস্পতি না থাকলে আজ পৃথিবীও থাকত না।”