আজকাল ওয়েবডেস্ক: গত বছরের শেষ থেকেই দেখা যাচ্ছিল হাতব্যাগের সঙ্গে অনুষঙ্গ ঝোলানোর ধারা। ইংরেজিতে যেটাকে বলে ‘ব্যাগ চার্মস’। এক্ষেত্রেও বিশ্বখ্যাত ফরাসি ব্র্যান্ড ‘আরমেস’ পিছিয়ে নেই। গত বছর আরমেসের ঘোড়া আর ছোট্ট আকারের বাড়ি, যেসবের দাম কয়েক লাখ টাকা, বিক্রি হয়েছে দেদার। ব্যাপারটা যেন এমন, এই ব্যাগ চার্মস আপনার স্ট্যাটাসের প্রতীক।
কে কতটা শৌখিন, তার প্রকাশ যেন এই ঘোড়া আর বাড়ি। এধারায় এবার বাজিমাত করল ‘লাবুবু’ নামের এক চিনা পুতুল। দেখতে খানিকটা ভীতিকর। পুতুলগুলো কেনার জন্য গভীর রাত থেকে দোকানের বাইরে সার বেঁধে দাঁড়াচ্ছে হাজারো মানুষ। যুক্তরাষ্ট্র, চিন, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন থেকে আরবের মতো দেশে একটা পুতুলের জনপ্রিয়তা যখন পাগলামির পর্যায়ে পৌঁছে যায়, বাংলাদেশে বসে মনে তখন প্রশ্ন আসে—কী আছে এই পুতুলে?
লাবুবুর জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার পেছনে ‘আনবক্সিং’ ভিডিওগুলোর বড় একটা ভূমিকা আছে। পুতুলটির উৎপাদক চিনা কোম্পানি পপ মার্ট। তাদের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, লাবুবু পাওয়া যায় ‘ব্লাইন্ড বক্স’-এ, অর্থাৎ বাক্সটি খোলার আগে ভেতরে কী আছে, তা থাকে অজানা। এই রহস্য বলুন বা চমকই মূলত আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছে এবং এটাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাপকভাবে। জনপ্রিয় হওয়ার আরেকটি কারণ হল, এই পুতুলগুলো প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য একধরনের ‘হ্যাপিনেস জেনারেটর’, মানে মনে সুখ বা আনন্দ তৈরি করে। এসবের মধ্যে আছে একধরনের ‘সেলফ-হিলিং’ প্রভাবও।
এর প্রভাব পড়েছে ব্যবসায়ও। ২০২৪ সালে পপ মার্টের আয় দ্বিগুণের বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে শুধু সফট টয় বা প্লাশ ডলের বিক্রি বেড়েছে ১ হাজার ২০০ শতাংশের বেশি! মার্কিন বাজারে প্রতিটি লাবুবু পুতুলের দাম যদিও মাত্র ২০–৩০ ডলারের মধ্যে।
সমস্যা হচ্ছে চাহিদার কারণে এখন আসল লাবুবু পুতুল পাওয়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে মুশকিল। এক লাবুবু সংগ্রাহক বলেছেন, ‘আসল লাবুবু পেতে হলে পপ মার্টের ওয়েবসাইটে যখনই নতুন চালান ছাড়বে, সেখানে লাখ লাখ মানুষের সঙ্গে লড়তে হবে। অথবা সামনাসামনি দোকানে গিয়ে অন্য পাগল গ্রাহকদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করতে হবে।’
লাবুবুর উৎপত্তি চিনের হংকংয়ে। তবে ‘হ্যালো কিটি’ বা অন্যান্য পরিচিত প্লাশ ডলের চরিত্রদের মতো নয়, লাবুবু চরিত্রগুলোকে বর্ণনা করা হয় ‘এলভিশ’ বা জাদুকরি প্রাণী হিসেবে। নর্ডিক পুরাণ অবলম্বনে চিত্রগ্রন্থ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লাবুবু তৈরি করেছেন শিল্পী কাসিং লুং। বইটি প্রকাশের পর চিনা খেলনা কোম্পানি পপ মার্ট ২০১৯ সালে প্রথম সংগ্রহযোগ্য লাবুবু ফিগার বাজারে আনে।
সেই থেকে শুরু হয় এই পুতুলের উত্থান। নতুন নতুন সংগ্রহ বাজারে আনার পর বিক্রিও বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। লাবুবু আদতে একটা পুতুল নয়, একদল চরিত্র। যাদের একসঙ্গে বলা হয় ‘দ্য মনস্টারস’।
এই দলে আরও আছে জিমোমো, মোকোকো, টাইকোকো প্রমুখ। লাবুবুকে আলাদা করে তোলে এর বড় বড় চোখ, গা ভর্তি লোম আর মুখভর্তি নয়টি তীক্ষ্ণ দাঁত। প্রতিটি নতুন সংগ্রহে লাবুবুর পোশাক, মুখাবয়ব ও অনুষঙ্গ বদলে যায়, যে কারণে কেনার ঝোঁক বেড়ে যায় আরও। গুগল ট্রেন্ডস অনুযায়ী, গত এক মাসেই গুগলে লাবুবু–সংক্রান্ত তথ্য খোঁজা হয়েছে ২ দশমিক ১ মিলিয়ন বার!
