আজকাল ওয়েবডেস্ক: ওরাকল-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং বিশ্বের দ্বিতীয় ধনীতম ব্যক্তি ইলন মাস্কের পরপরই যিনি অবস্থান করছেন, সেই ল্যারি এলিসন ঘোষণা করেছেন, তিনি নিজের জীবদ্দশায় নিজের বিপুল সম্পদের অধিকাংশই দান করবেন।
ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার্স ইনডেক্সের তথ্য অনুযায়ী, এলিসনের মোট সম্পদের পরিমাণ বর্তমানে প্রায় ৩৭৩ বিলিয়ন ডলার। এর বড় অংশই এসেছে ওরাকলে তার ৪১ শতাংশ শেয়ার এবং টেসলায় করা বিনিয়োগ থেকে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ওরাকলের শেয়ারমূল্য বেড়ে যাওয়ায়, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর প্রযুক্তির চাহিদা বৃদ্ধির কারণে, তার সম্পদ দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে।
২০১০ সালে বিল গেটস এবং ওয়ারেন বাফেট শুরু করা “গিভিং প্লেজ” উদ্যোগে যোগ দেন এলিসন। তখনই তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে নিজের মোট সম্পদের অন্তত ৯৫ শতাংশ তিনি দান করবেন। এই অঙ্গীকার এখনও বহাল রেখেছেন তিনি। এলিসনের দাতব্য কার্যক্রম মূলত পরিচালিত হচ্ছে Ellison Institute of Technology (EIT)-এর মাধ্যমে। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানটি লাভজনক সংস্থা হলেও স্বাস্থ্যসেবা, জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক গবেষণায় বিশ্বব্যাপী উদ্যোগ নেয়।
আরও পড়ুন: উৎসবের সময়ে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা? রইল আয় বুঝে ব্যয়ের কয়েকটি খতিয়ান
বছরের পর বছর ধরে তিনি একাধিক উল্লেখযোগ্য অনুদান দিয়েছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়াকে ২০০ মিলিয়ন ডলার দেন একটি ক্যানসার রিসার্চ সেন্টার গড়ে তুলতে। এছাড়া প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেন Ellison Medical Foundation-এ, যা বয়সজনিত রোগ প্রতিরোধ ও গবেষণার কাজে নিয়োজিত ছিল। তবে পরবর্তীকালে ওই ফাউন্ডেশনটি বন্ধ হয়ে যায়।
যদিও সরাসরি দান বা অনুদান দেওয়ার পরিমাণ তার কিছু সমসাময়িক ধনকুবেরের তুলনায় কম, তবুও দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতির কারণে এলিসনের অবদান ইতিমধ্যেই কয়েক বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, মৃত্যুর পর তার প্রায় সব সম্পদই দাতব্য কাজে ব্যবহার হবে। তবে এটি তিনি নিজের পরিকল্পনা ও সময়সূচি অনুযায়ী বাস্তবায়ন করতে চান।
তবে, এলিসনের তৈরি EIT-কে ঘিরে কিছু সমস্যাও তৈরি হয়েছে। ২০২৪ সালে খ্যাতনামা বিজ্ঞানী জন বেল-কে তিনি প্রধান গবেষক হিসেবে নিয়োগ করেন এবং মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সান্তা ওনো-কেও সহযোগিতার জন্য আহ্বান করেন। কিন্তু মাত্র দুই সপ্তাহের মাথায় জন বেল পদত্যাগ করেন এবং বলেন, এই প্রকল্পটি “অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং”।
এলিসনের দাতব্য প্রচেষ্টা অনেক সময় বিতর্ক তৈরি করেছে—কারণ তার প্রতিষ্ঠান লাভজনক মডেলে কাজ করে, অথচ একই সঙ্গে মানবকল্যাণমূলক গবেষণাও চালায়। সমালোচকরা বলেন, লাভের সঙ্গে দাতব্য ভাবনার মেলবন্ধন সবসময় সহজ নয়। তবে সমর্থকরা মনে করেন, এলিসনের ব্যবসায়িক দূরদর্শিতা এবং অর্থনৈতিক শক্তি বিশ্বব্যাপী বড় বড় সমস্যার সমাধানে সহায়ক হতে পারে। যেমনই হোক, ল্যারি এলিসনের ঘোষণায় স্পষ্ট—তার বিপুল সম্পদের বেশিরভাগ অংশ শেষ পর্যন্ত সমাজের কল্যাণেই ব্যয় হবে। বিশ্বজুড়ে দাতব্য কাজের ইতিহাসে এটি নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার হয়ে থাকবে।
