আজকাল ওয়েবডেস্ক: আমেরিকার পরিচিত দক্ষিণপন্থী কর্মী ও টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ (Turning Point USA)–এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা চার্লি কার্ক (৩১) বুধবার (স্থানীয় সময় দুপুরে) ইউটা ভ্যালি ইউনিভার্সিটি (UVU)–তে এক রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। দেশজুড়ে এই হত্যাকাণ্ডে নিন্দা ও শোকের ঝড় উঠেছে। ইউটাহের ওরেম শহরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে আয়োজিত “দ্য আমেরিকান কামব্যাক ট্যুর” কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছিলেন কার্ক। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, তিনি যখন বহুল আলোচিত “Prove Me Wrong” বিতর্কে ছাত্রদের সঙ্গে মতবিনিময় করছিলেন, ঠিক তখনই হঠাৎ একটি গুলির শব্দ শোনা যায়। পুলিশ জানায়, হামলাকারী সম্ভবত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাদের ওপর থেকে গুলি চালায়।

রাষ্ট্রের জননিরাপত্তা বিভাগ (DPS) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, কার্ককে লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হয়েছিল। ঘটনাস্থলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ ধরে ধরে শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের সরিয়ে নেয়। ঘটনার পরপরই দু’জনকে আটক করলেও পরে তদন্তে তাদের সঙ্গে হত্যার সরাসরি কোনো যোগসূত্র পাওয়া যায়নি। আটককৃতদের মধ্যে জর্জ জিন (George Zinn) নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে “অবরোধ সৃষ্টির” অভিযোগে মামলা হয়েছে। জিন ২০১৩ সালে সল্ট লেক সিটি ম্যারাথনে বোমা হামলার হুমকি দেওয়ার মামলায় দোষ স্বীকার করেছিলেন। অপর এক আটক ব্যক্তি জাকারিয়া কুরেশি (Zachariah Qureshi)–কে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশ এখনো অজ্ঞাতপরিচয় শ্যুটারের খোঁজে ব্যাপক অভিযান চালাচ্ছে। সন্দেহভাজনকে শেষবার কালো পোশাকে দেখা গেছে। এফবিআই ডিজিটাল টিপ লাইন খুলে জনগণকে তথ্য দিতে আহ্বান জানিয়েছে।

আরও পড়ুন: বিশ্বের বৃহত্তম প্রাসাদ ২৪ জন সম্রাটের বাসস্থান ছিল, ৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এটি নিষিদ্ধ ছিল কারণ...

ঘটনার কিছুক্ষণ পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ শোকবার্তা দিয়ে লেখেন—“দারুণ মানুষ  এবং কিংবদন্তি চার্লি কার্ক আর নেই। তরুণ আমেরিকানদের মন বোঝার মতো মানুষ তিনি ছিলেন। আমি এবং মেলানিয়া তাঁর পরিবার ও স্ত্রী এরিকার প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। চার্লি, আমরা তোমাকে ভালোবাসি।” পরে এক ভিডিও বার্তায় ট্রাম্প একে “রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড” আখ্যা দিয়ে বলেন, “চার্লি ছিল সত্য ও স্বাধীনতার শহীদ।” একইসঙ্গে তিনি “র‍্যাডিকাল লেফট”–এর রাজনীতিকে এই পরিবেশ তৈরির জন্য দায়ী করেন।

আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট নেতারা হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং রাজনৈতিক হিংসার  বিরুদ্ধে একজোট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ইউটার গভর্নর স্পেনসার কক্স বলেন, “এটি সরাসরি একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড।” ১৮ বছর বয়সে শিকাগোর উপকণ্ঠে টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ প্রতিষ্ঠা করেন কার্ক। সংগঠনটি দ্রুতই বিভিন্ন কলেজ ক্যাম্পাসে জনপ্রিয়তা লাভ করে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে এটি ট্রাম্প শিবিরের অন্যতম শক্তিশালী সমর্থন জোগায়। কার্ক ব্যক্তিগতভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র–এর ঘনিষ্ঠ সহকারী হিসেবে কাজ করেছিলেন।

ইউটা ভ্যালি ইউনিভার্সিটি, যেখানে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে, রাজ্যের সবচেয়ে বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৪১ সালে এটি একটি কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করে। নব্বই দশকে চার বছরের ডিগ্রি চালু হওয়ার পর শিক্ষার্থী সংখ্যা পাঁচ গুণ বাড়ে। বর্তমানে এখানে প্রায় ৪৭ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে, যার মধ্যে ব্যবসা ও মনোবিজ্ঞান জনপ্রিয় বিভাগ। রক্ষণশীল রাজনীতির তরুণ মুখ চার্লি কার্কের ওপর হামলাকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক উত্তাপ বেড়েছে। এখনো হত্যাকারী ধরা না পড়ায় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।