আজকাল ওয়েবডেস্ক: এই সমস্যা প্রায় সকলের বর্তমান দিনে। জায়গা বদল, জল, খাদ্যাভাস, দূষণ ইত্যাদি কারণে বহু মানুষই চুল পড়ার সমস্যায় ভোগেন। নানা সময়ে এই সমস্যা দূরীকরণে হাজার টোটকা, শ্যাম্পু, সিরাম ব্যবহার করেন। কেউ কেউ তার আগে জানার চেষ্টা করেন, কী কারণে চুল পড়ছে, কোন পুষ্টিগুণের অভাবে। কেউ কেউ তা না জেনেই হরদম ব্যবহার করেন শ্যাম্পু, সিরাম। তাতে ফল মেলে না, ফলে হতাশ হন।
তবে এবার চুল পড়ছে যাঁদের, তাঁদের জন্য বড় সুখবর। বিজ্ঞানীদের দাবি তেমনটাই। তাঁরা এমন এক সিরামের কথা বলছেন, যাতে ২০ দিনেই চুল গজাবে। ন্যাশনাল তাইওয়ান ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এই নয়া সিরাম তৈরি করেছেন বলে দাবি। দাবি, ওই সিরাম প্রাকৃতিক ফ্যাটি অ্যাসিড ব্যবহার করে তৈরি করেছেন তাঁরা, যেটি মাথায় চুল পড়ে ফাঁকা হয়ে যাওয়া জায়গায় লাগালে, সেই অংশের ফ্যাট সেল গুলিকে উদ্দীপিত করে চুল গজাতে সাহায্য করবে। গবেষকরা জানিয়েছেন, পরীক্ষাগারে তাঁরা সফলভাবে এই পরীক্ষা করে দেখেছেন। এই সিরাম ব্যবহারে ব্যবহারকারীর কোনও প্রকার ত্বক-জনিত অস্বস্তি হয় না বলেও জানিয়েছেন। একইসঙ্গে সুখবর হিসেবে দাবি করেছেন, শ্রীঘ্রই এই সিরাম দোকানগুলিতে পাওয়া যাবে।
কীভাবে প্রস্তুত করা হল এই সিরাম? ব্যবহার কীভাবে?
ন্যাশনাল তাইওয়ান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সুং-জান লিন বলেছেন, তিনি এই সিরামটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন নিজের পায়ে। তিনি জানিয়েছেন, 'আমি ব্যক্তিগতভাবে তিন সপ্তাহ ধরে অ্যালকোহলে দ্রবীভূত এই ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি আমার পায়ে প্রয়োগ করেছি এবং আমি দেখেছি যে এটি চুল গজাতে সাহায্য করছে ব্যাপক হারে।'
তাঁদের দীর্ঘ গবেষণায় জানা গিয়েছে, এই সিরামটি হাইপারট্রাইকোসিস নামে পরিচিত একটি প্রক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে তৈরি। অধ্যাপক লিন এবং তাঁর সহকর্মীরা জানতেন যে ত্বকের উপর ঠিক কোন প্রক্রিয়া চুলের বৃদ্ধি ঘটায় এবং সিরাম তৈরিতে তাঁরা ঠিক সেই প্রক্রিয়াটি ব্যবহার করেছিলেন। গবেষক দলটি পুরুষ এবং মহিলা ইঁদুরের পিঠে সোডিয়াম ডোডেসিল সালফেট (SDS) নামক একটি ইরিট্যান্ট প্রয়োগ করে একজিমা তৈরি করেছিল। প্রায় ১০-১১ দিন পরে, ইঁদুরের চামড়ায় এক মিলিমিটার চওড়া ফলিকল থেকে নতুন চুল গজাতে শুরু করে।
গবেষকদের মতে, এই ইরিট্যান্ট ইমিউন কোষগুলিকে ইঁদুরের ত্বকের নীচের চর্বির স্তরে স্থানান্তরিত করে। এটি চর্বি কোষগুলিকে ফ্যাটি অ্যাসিড নিঃসরণ করতে সংকেত দেয় যা চুলের ফলিকল স্টেম সেল দ্বারা শোষিত হয়, ফলে চুলের বৃদ্ধির প্রক্রিয়াটি ঘটে ত্বকের উপরিভাগে। গবেষকরা বলছেন, এই প্রক্রিয়া প্রমাণ করছে, ত্বকের আঘাত কেবল টিস্যু প্রদাহ অর্থাৎ ব্যথা-যন্ত্রণার কারণ হয় না বরং চুল গজাতেও সাহায্য করে।
তবে, রাসায়নিক ইরিট্যান্ট ব্যবহার না করে ত্বকে ফ্যাটি অ্যাসিডের প্রভাব বিশ্লেষণ করার জন্য, গবেষকরা অ্যালকোহলে দ্রবীভূত বিভিন্ন ফ্যাটি অ্যাসিড যেমন ওলিক অ্যাসিড এবং প্যালমিটোলিক অ্যাসিড সমন্বিত সিরাম তৈরি করেছেন। এগুলি চুলের বৃদ্ধিতেও কার্যকর বলে দেখা গিয়েছে দীর্ঘ গবেষণায়।
অধ্যাপক লিন নিউ সায়েন্টিস্টকে বলেন, অলিক অ্যাসিড এবং প্যালমিটোলিক অ্যাসিড প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত ফ্যাটি অ্যাসিড। সঙ্গে একাধিক এমন উপাদান রয়তেছে এই সিরামে, যার কারণে ব্যবহারকারীরা নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন এটি। গবেষক দল সিরামটি বাজারে পাঠানোর আগে মানুষের মাথায় বিভিন্ন ডোজ পরীক্ষা চালাবে বলে জানা গিয়েছে।
