আজকাল ওয়েবডেস্ক: জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এমন একটি গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন, যা সম্ভবত পাথুরে ও পৃথিবীর তুলনায় প্রায় চার গুণ ভারী। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এটি জীবনের অনুকূল পরিবেশে অবস্থান করছে। গ্রহটির নাম GJ 251 c, যা পৃথিবী থেকে মাত্র ২০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।
বিজ্ঞানীদের আগ্রহের মূল কারণ হল, এই গ্রহটি তার নক্ষত্রের “বাসযোগ্য অঞ্চল” বা “হ্যাবিটেবল জোন”-এ ঘুরছে। এমন একটি দূরত্ব, যেখানে উপযুক্ত পরিস্থিতিতে তরল জল টিকে থাকতে পারে। এই জোনটিকেই অনেক সময় “গোল্ডিলক্স জোন” বলা হয়, কারণ এটি না খুব গরম, না খুব ঠান্ডা। জীবনের জন্য একদম উপযুক্ত ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ।
দুই দশকের দীর্ঘ পর্যবেক্ষণের পর, এই সংকেতটি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল এক্সোপ্ল্যানেট সংকেত হিসেবে উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক গবেষক দলটি, যার মধ্যে পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরাও রয়েছেন, বহু মানমন্দিরের পর্যবেক্ষণ তথ্য এবং নতুন প্রজন্মের উচ্চ-নির্ভুল স্পেকট্রাল ডেটা একত্রিত করে এই আবিষ্কারটি করেছে।
গবেষক সুভ্রথ মহাদেবন, পেন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও এই গবেষণার সহ-লেখক, বলেন, “আমরা এমন গ্রহ খুঁজি যা জীবনের অস্তিত্ব খোঁজার সর্বোত্তম সম্ভাবনা রাখে। GJ 251 c ঠিক সেই ধরণের—একটি পাথুরে গ্রহ, যা তার নক্ষত্র থেকে এমন দূরত্বে ঘুরছে যেখানে তরল জল থাকা সম্ভব।” তিনি আরও বলেন, “গ্রহটির যদি উপযুক্ত বায়ুমণ্ডল থাকে, তবে এর পৃষ্ঠে জীবনের উপযোগী পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।”
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বহু বছর ধরে GJ 251 নক্ষত্রের সূক্ষ্ম নড়াচড়া পর্যবেক্ষণ করছিলেন—যা কোনো কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ টানে সৃষ্টি হয়। এই ক্ষুদ্র “ডপলার শিফট” শনাক্ত করা অত্যন্ত কঠিন, কারণ নক্ষত্রের নিজস্ব চৌম্বকীয় পরিবর্তন তা আড়াল করে দিতে পারে।
আরও পড়ুন: সঠিকভাবে ব্যবহার করলে কীভাবে বদলে যেতে পারে আপনার আর্থিক টার্গেট, দেখে নিন এখানে
দলটি প্রথমে একটি ভেতরের গ্রহ GJ 251 b-এর উপস্থিতি নিশ্চিত করে, যা ১৪ দিনে একবার নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে। এরপর আরও নিখুঁত ডেটা যোগ করে দেখা যায় ৫৪ দিনের একটি নতুন সংকেত যা একটি অপেক্ষাকৃত বৃহৎ ও দূরের গ্রহের উপস্থিতি নির্দেশ করে। সেই গ্রহই GJ 251 c।
মহাদেবন বলেন, “আমরা একে ‘হ্যাবিটেবল জোন প্ল্যানেট ফাইন্ডার’ বলি, কারণ এর লক্ষ্যই হল এমন পৃথিবীগুলিকে খুঁজে বের করা যেখানে তরল জল থাকার সম্ভাবনা আছে। এই আবিষ্কার সেই প্রকল্পের অন্যতম বড় সাফল্য।”
তাদের ফলাফলকে নিশ্চিত করতে দলটি আরও একটি উচ্চ-নির্ভুল যন্ত্র ব্যবহার করে, যা স্বাধীনভাবে ৫৪ দিনের সংকেতটি যাচাই করে। একাধিক যন্ত্র ও মানমন্দির থেকে প্রাপ্ত মিলিত প্রমাণ স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে — GJ 251 c একটি তাপমাত্রা-সহনশীল “সুপার আর্থ”, যা জীবনের উপস্থিতির সম্ভাবনা রাখে। আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে উন্নত টেলিস্কোপের মাধ্যমে এর বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন, মিথেন বা কার্বন ডাই-অক্সাইডের মতো গ্যাস শনাক্ত করা গেলে, পৃথিবীর বাইরে জীবনের অস্তিত্ব সম্পর্কে মানবজাতি এক ঐতিহাসিক প্রমাণ পেতে পারে।
