আজকাল ওয়েবডেস্ক: রবিবার হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা পিটার নাভারো রাশিয়ার তেল কেনা নিয়ে ভারতকে নিশানা করে একটি পোস্ট করেছিলেন সোশাল প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ। অভিযোগ, তাঁর সেই ভারত বিরোধী পোস্টে একটি কমিউনিটি নোট জুড়ে দেওয়া হয়। আর এতেই বেজায় ক্ষুব্ধ ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ এই উপদেষ্টা। আরও একটি পোস্ট করে এক্স-এর মালিক ইলন মাস্ককে নিশানা করেছিলেন নাভারো। মার্কিন উপদেষ্টার নাম উহ্য রেখেই এবার নাভারোর নিন্দার জবাব দিয়েছেন সোশাল মিডিয়া এক্স-এর কর্ণধার মাস্ক!

ইলন মাস্ক জানিয়েছেন, তাঁর প্ল্যাটফর্মের তরফে যে কোনও পোস্টের নীচেই এই ধরনের মন্তব্য করা হয়। এ ভাবেই সকলের ভুল শুধরে দেওয়া হয়। নিজের এক্স হ্যান্ডলে মাস্ক লিখেছেন, "কী ভাবে কথাবার্তা এগোবে, এই প্ল্যাটফর্মে তা নির্ধারণ করে দেন জনগণই। আমরা সব পক্ষের কথা শুনি। আমাদের 'কমিউনিটি নোট' সকলের ভুল শুধরে দেয়। এ ক্ষেত্রে কোনও ব্যতিক্রম নেই। আমাদের সব তথ্য এবং সঙ্কেতের উৎস সর্বজনীন। তার উপরে সত্যানুসন্ধান হয় গ্রোক (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় নির্মিত সত্যানুসন্ধানের মাধ্যম গ্রোক। এখানে গুগ্‌লের মতো যে কোনও বিষয় সার্চ করে তা সম্পর্কের নিশ্চিত হওয়া যায়) মারফৎ।"

?ref_src=twsrc%5Etfw">September 7, 2025

রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য এবং বৈদেশিক নীতি নিয়ে নয়াদিল্লিকে বার-বার আক্রমণ করেছেন নাভারো। একাধিকবার ভারত-বিরোধী পোস্ট করেছেন। নয়াদিল্লিকে রাশিয়ার তেল আমদানি থেকে "মুনাফা অর্জন" করার অভিযোগ করেছেন। তবে, এবার নাভারোর পোস্টে- এক্স তথ্য যাচাই করেছে, তার দাবিগুলিকে "মিথ্যা" বলা হয়েছে।

রবিবার মার্কিন উপদেষ্টা পিটার নাভারো একটি পোস্টে লেখেন, 'ফ্যাক্ট: ভারতের উচ্চ হারের শুল্ক আমেরিকার চাকরি খেয়ে নিচ্ছে। ভারত রাশিয়ার থেকে তেল কিনছে শুধুমাত্র লাভের জন্য। এর ফলে রাশিয়ার যুদ্ধে অর্থায়ন হচ্ছে। ইউক্রেন এবং রাশিয়ানরা মরছে। আমেরিকার করদাতাদের বেশি টাকা খরচ হচ্ছে। ভারত সত্যিটা মানতে পারছে না। বামপন্থী আমেরিকানদের ওয়াশিংটন পোস্ট ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছে।'

ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ পিটান নাভারোর এই ভারত বিরোধী পোস্টের নীচে জুড়ে দেওয়া হয় একটি কমিউনিটি পোস্ট। যেখানে তাঁকে ফ্যাক্ট চেক করা হয়। সেই নোটে লেখা হয়, 'ভারত শুধুমাত্র লাভের জন্য রাশিয়ার তেল কিনছে না, নিজেদের জ্বালানি সুরক্ষার জন্যেও তারা রাশিয়ার থেকে তেল কিনছে। এবং ভারত এই তেল কিনে কোনও নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করছে না। এদিকে ভারত যদিও বা শুল্ক চাপায়, ভারতের সঙ্গে আমেরিকার ট্রেড সারপ্লাস আছে সার্ভিসের ক্ষেত্রে। এছাড়া আমেরিকা নিজে রাশিয়ার থেকে এখনও অনেক পণ্য আমদানি করছে। যেটা কি না ভণ্ডামি।' এই পোস্টের সঙ্গে একাধিক খবরের লিঙ্কও দেওয়া হয়।  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই রাশিয়া থেকে ইউরেনিয়াম এবং খনিজ আমদানি অব্যাহত রেখেছে, যাকে তারা ভণ্ডামি বলে বর্ণনা করেছে।

এরপরই নাভারো ফ্যাক্ট-চেকের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তা "বাজে কথা" বলে অভিহিত করেন। তিনি "মানুষের পোস্টে প্রচার" করার জন্য মাস্কের সমালোচনাও করেছেন। ফের একটি পোস্ট করে লেখেন, 'বাহ! মাস্ক জনগণের পোস্টে প্রচার চালাচ্ছে। নীচের বাজে কথাটি ঠিক তাই। বাজে কথা। ভারত কেবল মুনাফাখোরদের জন্য রাশিয়ান তেল কেনে। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার আগে তারা কোনও তেল কেনেনি। ভারত সরকার তেলের আমদানি বাড়াচ্ছে। ইউক্রেনীয়দের হত্যা বন্ধ করুন। আমেরিকান চাকরি কেড়ে নেওয়া বন্ধ করুন।'

?ref_src=twsrc%5Etfw">September 6, 2025

সাম্প্রতিক সময়ে, নাভারো ক্রমাগত রাশিয়ার তেল কেনার বিষয়টি উত্থাপন করে ভারত এবং নরেন্দ্র মোদি সরকারকে নিশানা করে চলেছেন। এই নিয়ে নানা অযাচিত মন্তব্যও তিনি করেছেন। এমনকী ইউক্রেন যুদ্ধকে তিনি 'মোদীর যুদ্ধ' বলে পর্যন্ত আখ্যা দিয়েছেন। আর দিন কয়েক আগে তাঁর নিশানায় ছিল ভারতের ব্রাহ্মণরা। একটি মার্কিন সংবাদ চ্যানেলে তিনি দাবি করেন, 'রাশিয়ার তেল কেনায় শুধুমাত্র ভারতীয় ব্রাহ্মণরা লাভবান হচ্ছেন।' নাভারোর এই মন্তব্য নয়াদিল্লি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল গত শুক্রবার বলেছেন, "আমরা তাঁর (পিটার নাভারো) কিছু ভুল বক্তব্য দেখেছি। আমরা সেগুলি প্রত্যাখ্যান করি।" 

২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারের সময় নাভারোর 'বস' ট্রাম্প এবং মাস্কের মধ্যে রাজনৈতিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু বর্তমানে তা অতীত। ট্রাম্পের প্রশান থেকেও সরে গিয়েছে টেসলা কর্তা। গত জুন মাসে প্রেসিডেন্টের একাধিক বিতর্কিত বিলে সাক্ষর ঘিরে ট্রাম্প-মাস্ক সম্পর্ক ভেঙে যায়। তবুও ট্রাম্প নিজে তাঁর সুর নরম করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিজের "বন্ধু" হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে "বিশেষ" বলে উল্লেখ করেছেন। এরপর কী থামবেন নাভারো? 

আরও পড়ুন- রাশিয়া-ভারত-কে শায়েস্তা করতে ব্যর্থ ওয়াশিংটন, এবার তাই আরও বড় হুমকি 'দিশাহারা' ট্রাম্পের!