কৌশিক রায়

বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। আর বছরের এই সময়টায় পুরোপুরি ফেস্টিভ মুডে থাকে আপামর বাঙালি। দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজো, ভাইফোঁটা, জগদ্ধাত্রী পুজো, তালিকা আরও লম্বা। বাঙালির উৎসবে আর কিছু থাকুক না থাকুক মিষ্টি থাকবেই।

আর সেই মিষ্টিকে কেন্দ্র করেই এবার এক নয়া চমক দেখা গিয়েছে কলকাতায়। এক নজরে দেখলে মনে হবে এক থালা মিষ্টি সাজানো যার মধ্যে রয়েছে লাড্ডু, রসমালাই, কাজু বরফি, নারকোল ছাপ আরও কত কী। কিন্তু হাতে নিলেই ম্যাজিক।

দেখা যাচ্ছে, সেগুলি আদতে লাড্ডুর আদলে তৈরি মোমবাতি। দীপাবলির আগে এই মিষ্টি মোমবাতি রীতিমত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। দীপাবলি মানে আলোর উৎসব।

বাঙালির কাছে দীপাবলি মানেই ঘরে ঘরে প্রদীপ জ্বালানো, আলোয় আলোকিত করে গোটা বাড়ি উজ্জ্বল করে তোলা। অবশ্য, শুধু বাংলা কেন গোটা দেশেই ধুমধাম করে পালিত হয়ে থাকে এই আলোর উৎসব। বাঙালিরা দীপাবলিতে পালন করে থাকেন চোদ্দ প্রদীপ।

অর্থাৎ, বাড়িতে জ্বালানো হয় মোমবাতি। উত্তর কলকাতার আহিরীটোলার কাছে এক মোমবাতির কারখানা তাক লাগিয়ে দিয়েছে এই মিষ্টি মোমবাতি তৈরি করে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ফি বছরই এই মোমবাতির কারখানায় বিভিন্ন রকমের মোমবাতি তৈরি হয়ে থাকে।

কিন্তু এই বছরে মিষ্টির আদলে মোমবাতি বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে অঙ্কুর নামের ওই সংস্থা। সংস্থার কর্ণধার তুহিন মুখার্জি জানালেন, ‘১৯৮৬ সালে আমার বাবা প্রথম এই ব্যবসা শুরু করেছিলেন। মোমবাতি যে শুধু সাদা এবং লম্বাটে আকৃতিরই হতে হবে সেরকম নয়। বিভিন্ন রঙেরও যে মোমবাতি বানানো যায় সেটাও আমার বাবার আবিষ্কার করা’।

তিনি জানান, ফি বছরই তাঁদের কারখানায় দীপাবলির আগে নতুনত্ব কিছু না কিছু থাকে। তাঁর কথায়, মোমবাতির মধ্যে দিয়েও শিল্প সম্ভব সেটা বাবা তো ভেবেছিলেন। আমি শুধু সেই ধারাটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

আরও পড়ুন: প্রস্তুতি প্রায় শেষ, নৈহাটির বড়মার পুজো কখন শুরু জানেন? আরতি হবে রাতের এই সময়ে

তিনি বলেন, ‘এবার আমরা সবাই আলোচনা করে ভাবলাম দীপাবলি মানে একটা লাড্ডুর ব্যাপার থাকে। সেই ভাবনা থেকেই মোমের লাড্ডুর কথা মাথায় আসে। সেখান থেকেই রসমালাই, অমৃতি, নারকোল ছাপা এগুলো আমরা বানালাম মোমবাতির আকারে। আমরা এই মোমবাতি গুলোকে প্যাকেটে না ভরে একটা প্লেটে সাজিয়ে বিক্রি করছি। দেখতে ভাল লাগার কারণে মানুষের কাছে সেটা আরও বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে’।

যারা দোকান থেকে মোমবাতি কিনতে আসছেন সকলেই জানাচ্ছেন, থালাতে সাজানো অবস্থাতেই মোমবাতিগুলি দেখতে ভাল লাগছে। আর এতটাই নিঁখুত যে এক ঝলকে দেখলে বা ছবিতে দেখলে মনে হবে এক থালা সুস্বাদু মিষ্টি সাজানো রয়েছে।

তুহিন জানান, ‘একটা প্লেটে মোট ৭টা লাড্ডু মোমবাতি থাকছে, এছাড়াও কাজু বরফি আছে, রসমালাই আছে। এক থালা লাড্ডু মোমবাতির দাম ১২০ টাকা। সব মিষ্টি মিলিয়ে কিনলে দাম পড়বে ৭০০ টাকা’। জানা গেল, গত ৪০-৫০ দিন ধরে নিয়মিত এই মিষ্টি মোমবাতি তৈরি হচ্ছে কারখানায়।

কারখানার এক কর্মী শেফালি দাস গত কয়েক মাসে কয়েক লক্ষ মিষ্টি মোমবাতি বানিয়ে ফেলেছেন। এই মিষ্টি মোমবাতি তৈরির ‘রেসিপি’ জানালেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘প্রথমে মোম বসানো হয়। সেটা ধীরে ধীরে গলতে থাকে। তারপর সেটাকে কাচের বাটিতে ঢেলে ছাঁচে ফেলা হয়। মিষ্টির আকৃতি অনুযায়ী সেটা তৈরিতে সময়ের হেরফের হয় খানিকটা। কাজু বরফির আকৃতির মোমবাতি তৈরি করতে ১০ মিনিট মতো লাগে। রসমালাই তৈরিতে একটু বেশি সময় লাগে। আগে সাদা মোম গলিয়ে তারপর সেটার ওপর রং দেওয়া হয়’।