আজকাল ওয়েবডেস্ক: কলকাতা মেট্রো যাত্রীদের জন্য বড় পরিবর্তনের পথে হাঁটছে। খুব শিগগিরই টিকিট কেনা ও ভাড়ার সমস্ত প্রক্রিয়া হবে সম্পূর্ণ অ্যাপ-ভিত্তিক অর্থাৎ যাত্রীদের আর টিকিট কাউন্টারে দাঁড়াতে হবে না কিংবা আলাদা স্মার্ট কার্ড বহন করতে হবে না। শুক্রবার কলকাতা মেট্রোর প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে মেট্রো রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার শুভ্রাংশু শেখর মিশ্র একথা ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, “আমরা চাই যাত্রীরা যেন আর কিছু বহন না করেন। শুধু তাঁদের মোবাইল ফোন থাকলেই যথেষ্ট।আমাদের লক্ষ্য, ভাড়ার সমস্ত লেনদেন একেবারে ডিজিটাল অ্যাপের মাধ্যমে সম্পন্ন করা।”
মিশ্র জানান, ম্যানুয়াল টিকিট কাউন্টারে ভিড় কমাতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। যাত্রীরা যাতে সহজেই মোবাইল অ্যাপ বা স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করে ভাড়া দিতে পারেন, সেই লক্ষ্যেই কলকাতা মেট্রো তাদের টিকিটিং সিস্টেমকে আরও আধুনিক করছে। এই ঘোষণার মাধ্যমে মেট্রো রেলওয়ে তাদের পরিষেবার পূর্ণ ডিজিটাল রূপান্তরের দিকেই অগ্রসর হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ২০২৬ সালে সোনার দাম কোথায় যাবে, আগাম জানিয়ে দিলেন বাবা ভাঙ্গা
এছাড়া তিনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো আপডেটের কথাও জানান। বিশেষ করে, ব্লু লাইন বা মূল উত্তর-দক্ষিণ মেট্রো করিডরের জন্য কমিউনিকেশন-বেসড ট্রেন কন্ট্রোল সিস্টেম চালুর অনুমোদন ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে। এই আধুনিক সিগন্যালিং প্রযুক্তি আগামী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হবে বলে জানান জিএম।
মিশ্র বলেন, “এটি ইঞ্জিনিয়ারিং কাজের সঙ্গে সমান্তরালভাবে এগোবে। সব কিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চললে চার বছরের মধ্যে এই প্রকল্প সম্পন্ন হবে।” এই প্রযুক্তি চালু হলে ট্রেন চলাচলের গতি ও নিরাপত্তা দুটোই বাড়বে, পাশাপাশি ট্রেনের মধ্যে ব্যবধান কমে অপেক্ষার সময়ও অনেকটা হ্রাস পাবে।
অন্যদিকে, অরেঞ্জ লাইন–এর কাজও দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে বলে জানান তিনি। এই লাইনের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ২৯ কিলোমিটার, যার মধ্যে ১৯ কিলোমিটার অংশ ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে চালু হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন মিশ্র। এটি কলকাতা মেট্রোর সম্প্রসারণ পরিকল্পনার এক বড় মাইলফলক হতে চলেছে।
তিনি আরও জানান, বহু প্রতীক্ষিত কবি সুভাষ স্টেশন এবং শহীদ ক্ষুদিরাম পর্যন্ত রুটের মেরামতির কাজও আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হবে। ছট্ পূজার কারণে কিছুটা বিলম্ব হলেও এখন সেই কাজ শুরু করতে প্রস্তুত প্রশাসন। “আমরা উৎসবের কারণে কিছুটা পিছিয়ে গেছি, কিন্তু আগামী সপ্তাহেই মেরামতির কাজ শুরু হবে,” ।
প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে কলকাতা মেট্রো তার ১৯৮৪ সালের সূচনার দিনগুলোকেও স্মরণ করে। ভারতের প্রথম মেট্রো পরিষেবা হিসেবে কলকাতা শুরু করেছিল মাত্র ৩.৪ কিলোমিটারের এক ছোট্ট পথে। আজ সেটি শহর ও উপশহরের রক্তস্রোতের মতো ছড়িয়ে পড়েছে একাধিক করিডরে, প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষকে বহন করছে।
অনুষ্ঠানের শেষে একটি ম্যাজিক শো–এর মাধ্যমে যাত্রীদের মধ্যে পরিচ্ছন্নতা, নিয়ম-কানুন ও সচেতনতার বার্তা ছড়ানো হয়। কর্মকর্তারা বলেন, অ্যাপ-ভিত্তিক পরিষেবা, আধুনিক সিগন্যালিং এবং দ্রুত সম্প্রসারণের মাধ্যমে কলকাতা মেট্রো আগামী দিনে আরও আধুনিক, নিরাপদ ও যাত্রীবান্ধব পরিবহনব্যবস্থার দিকে এগিয়ে চলেছে।
