আজকাল ওয়েবডেস্ক: সুপ্রিম কোর্ট ও কলকাতা হাইকোর্টের কড়া নির্দেশ, রাজ্য সরকারের নির্দিষ্ট সময়সীমা - সবই যেন 'ডোন্ট কেয়ার'! কালিপুজোর রাত পেরিয়েও থামছে না আতশবাজির আতঙ্ক। যেন শহরজুড়ে উন্মত্ত তাণ্ডব চলছে নিষিদ্ধ আতশবাজির। রাত যত গভীর হয়, আকাশজুড়ে ততই ফেটে পড়ছে বিকট শব্দে একের পর এক শব্দবাজি। শহরের নানা প্রান্তে শব্দদূষণ ছাপিয়ে গেল সব সীমা। আইন ভঙ্গ করার কারণে বহু মানুষকে গ্রেপ্তারও করেছে কলকাতা পুলিশ। কিন্তু তাতেও থামছে না মানুষের শব্দ বাজির উল্লাস ও উন্মাদনা।

আরও পড়ুন: পণ চাই দু'লাখ টাকার মোষ, না দিতে পেরে অ্যাসিড খেলেন নববধূ! ফের নারী নির্যাতন বিজেপিশাসিত রাজ্যে

পুলিশের তরফে রয়েছে কড়া নজরদারি আগামী ২৩ শে অক্টোবর পর্যন্ত। টহলদারি চলছে রাস্তায়, তবু কোথাও শব্দবাজির ঝলকানি, কোথাও বারুদের তীব্র গন্ধে ভরে উঠছে বাতাস। বহু এলাকাতেই বাসিন্দারা বিরক্ত ও আতঙ্কিত হয়ে ফোন করছেন পুলিশে ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কন্ট্রোল রুমে।

 

আতঙ্কে মেট্রোয় উঠে বসল পথকুকুর

 

এই শব্দবাজি আতঙ্কে শুধু মানুষ নয়, মানুষের পাশাপাশি আরও বেশি করে আতঙ্কিত রাস্তার সারমেয় অর্থাৎ কুকুররা। কালিপুজোর রাতে সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ কলকাতার বাঁশদ্রোণি এলাকায়। আতশবাজির বিকট শব্দে কাঁপছিল এলাকা। ঠিক তখনই এক পথকুকুর ভয় পেয়ে দিশাহারা হয়ে মেট্রো স্টেশনে ঢুকে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ট্রেন আসতেই দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে কুকুরটি কামরার ভিতরে ঢুকে পড়ে।

 

ভয় আর আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে ছুটোছুটি শুরু করে সে ট্রেনের ভিতরেই। সৌভাগ্যবশত, তখন ট্রেনে যাত্রী সংখ্যা অল্প ছিল। কিছুক্ষণ পর শহিদ ক্ষুদিরাম স্টেশনে মেট্রো কর্মীরা ট্রেন থামিয়ে সাবধানে কুকুরটিকে উদ্ধার করেন। এরপর তাকে স্থানীয় পশুপ্রেমী সংগঠনের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

 

মেট্রো রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, কুকুরটি বর্তমানে সুস্থ আছে। তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার করে তাকে নিরাপদে রেখেছে বলে জানিয়েছেন রেল কর্মীরা।

 

 শব্দদূষণের দাপটে বিক্ষুব্ধ নাগরিক

 

কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ - বেলগাছিয়া, কসবা, বেহালা, যাদবপুর, নিউ আলিপুর, লেক টাউন - প্রায় সর্বত্রই বিকট শব্দবাজিতে ভরে গিয়েছিল রাতের আকাশ। পরিবেশবিদদের দাবি, "শব্দের মাত্রা ৯০ ডেসিবেলেরও ওপরে পৌঁছেছিল। অর্থাৎ প্রায় ৩০০ এর ওপরে। যা মানুষের ও প্রাণীর স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।”

 

 দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদে অভিযোগের বন্যা

 

পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রে জানা গেছে, রাত সাড়ে ন’টা থেকে সাড়ে দশটার মধ্যে কন্ট্রোল রুমে অন্তত ১৭টি অভিযোগ আসে - যার বেশিরভাগই নিষিদ্ধ আতশবাজি ফাটানো ও শব্দদূষণ সংক্রান্ত।

 

এই বিষয়ে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক আধিকারিক বলেন, “আমরা পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি। কয়েকটি জায়গায় টিম পাঠানো হয়েছে,” 

 

প্রাণী ও পরিবেশের প্রতি উদাসীনতা

 

পশুপ্রেমীরা বলছেন, এই ঘটনার মাধ্যমে ফের একবার সামনে এল মানুষের উদাসীনতা। প্রতি বছরই শব্দবাজির ভয়ে অসংখ্য কুকুর, বিড়াল, এমনকী পাখিও প্রাণ হারায়। তবু সচেতনতার অভাবেই এই ভয়াবহতা কমছে না।

 

উল্লেখযোগ্যভাবে বলতে হয়, আলোর উৎসব যেন পরিণত হচ্ছে শব্দ ও ধোঁয়ার যন্ত্রণায়। আদালতের নির্দেশ, প্রশাসনের সতর্কতা - সবই যেন মুখস্থ উচ্চারণে সীমাবদ্ধ। অথচ এক আতঙ্কিত কুকুরের দৌড় মেট্রো লাইনে - সেই দৃশ্য যেন স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে, “আমরা কোথায় যাচ্ছি? সত্যি কি প্রাণীসমাজ তুচ্ছ আর আমাদের আনন্দ উল্লাস ও তার উন্মাদনাই কি বড় হয়ে দাঁড়ালো বর্তমান সমাজে?"