আজকাল ওয়েবডেস্ক: বন্ধুদের সঙ্গে পাহাড়ে বেড়াতে এসে মৃত্যু হল কলকাতার এক পর্যটকের। ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে শৈলশহরে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ওই পর্যটক যুবকের নাম সপ্তনীল চ্যাটার্জি। তিনি হাওড়ার বাগনানের দেউলটির বাসিন্দা ছিলেন। দক্ষিন কলকাতার একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। কলকাতার হেরিটেজ কলেজের কম্পিউটার সায়েন্সের পড়ুয়া। জানা গিয়েছে, তিনদিন আগে কলকাতা থেকে চার বান্ধবী ও দুই বন্ধু মিলে বেড়াতে যান। বাকি বন্ধু ও বান্ধবীরা যাদবপুরের পড়ুয়া। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ছ'জনের  মধ্যে একজনের বাড়ি রয়েছে জলপাইগুড়িতে।  

জানা গিয়েছে ওই ছয় বন্ধু ও বান্ধবী প্রথমে জলপাইগুড়িতে আসেন। জলপাইগুড়িতে একদিন কাটিয়ে এরপর সেখান থেকে দু'দিন আগে কার্শিয়াংয়ে যায়। কার্শিয়াংয়ের ডাউহিলের একটি হোমস্টেতে তাঁরা উঠেছিলেন। সোমবার ভোর পাঁচটা নাগাদ সপ্তনীল সুর্যোদয় দেখতে হোমস্টের ছাদে ওঠেন। এরপর আচমকাই  ছাদ  তিনি থেকে পরে যান বলে জানা গিয়েছে। ঘটনার পরেই গোটা হোমস্টে জুড়ে হৈ চৈ পরে যায়। হোমস্টের কর্তৃপক্ষ ও বন্ধুরা মিলে সপ্তনীলকে প্রথমে কার্শিয়াং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপর পুলিশ দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালে পাঠায়।

স্থানীয় সূত্রে খবর, এদিন সকালে জোরে আওয়াজ পেয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসেন অনেকেই। দেখেন, হোমস্টের সামনেই রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন হাওড়ার ওই যুবক। ধরাধরি করে কার্শিয়াং হাসপাতালে ওই যুবককে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। তবে এই ঘটনার পর অনেক প্রশ্ন উঠে এসেছে। উঁচু জায়গা থেকে পড়ে গিয়ে এই মৃত্যু, নাকি মৃত্যুর পিছনে অন্য কোনও রহস্য? গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে হোমস্টের লোকজনকে এবং মৃত যুবকের সঙ্গীদের। মৃতের মা কেয়া চট্টোপাধ্যায় এদিন বলেন,'ছেলের বন্ধুরা সকালবেলা ফোন করে অবিলম্বে কার্শিয়াংয়ে পৌঁছানোর জন্য বলে। বন্ধুদের সঙ্গে ছেলে সেখানে গিয়েছিল আমি জানতাম না। ছেলে বি টেক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। আমাকে বলে যায়নি।  পড়াশোনার জন্য যাদবপুরে থাকতো। ওর রুমমেট ছিল জলপাইগুড়ির বাসিন্দা আয়ুষ্মান।  ও ফোন করে আমাকে কার্শিয়াংয়ে যেতে বলে। এই ঘটনার তদন্ত চাই। গত রবিবার দুপুরে শেষ কথা হয়েছে।' বন্ধুরা পুলিশকে কী জানিয়েছে, তাও স্পষ্ট করেনি পুলিশ। তবে প্রাথমিকভাবে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান ও মৃত্যুর ধরন দেখে ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর বিষয়টুকুই জানা গিয়েছে। এর পিছনে আর কিছু রহস্য আছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। 

আরও পড়ুনঃ ট্রেনে উঠতে গিয়ে হুড়োহুড়ি! নাগরিক দায়িত্বহীনতার দৃশ্য স্পষ্ট, ভিডিও ভাইরালে চমকে উঠেছে সবাই

প্রসঙ্গত, দার্জিলিং পাহাড়ের ডাউহিল-এর সঙ্গে ভূতুড়ে তকমা আগাগোড়াই রয়েছে । প্রতি বছরই গা ছমছমে পরিবেশে 'ভুত'-এর অনুভূতি নিতে দেশ বিদেশ থেকে প্রচুর মানুষ ডাউহিলে এসে ভিড় জমান। তার মাঝেই এই রকম রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে জোর চর্চা এখন পাহাড়ে। বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গের থেকে আসা পর্যটকদের মধ্যে অনেকেই ভয় পেয়েছেন বলে জনশ্রুতি। অনেক পর্যটকই জানিয়েছেন, জায়গাটার এমনিতেই একটু ভুতুড়ে তকমা লেগে আছে। তাঁর পাশাপাশি হঠাৎ করে ছাদ থেকে রহস্যজনকভাবে একজন তরুণের মৃত্যু আরও বেশি সেই ধারনার গায়ে রং লাগাচ্ছে। যদিও বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তিদের কাছে দুর্ঘটনা যে কোনও সময়েই ঘটতে পারে। যার সঙ্গে অতিপ্রাকৃত কোনো কিছু জুড়ে দেওয়ার বিষয়টি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এতে করে কুসংস্কার আরও বেশি বেড়ে যায়। উল্লেখ্য, গত কয়েক মাসে পাহাড়ে ঘুরতে এসে অসুস্থতার কারণে মৃত্যু হয়েছে দুই জনের। ঠিক সময়ে চিকিৎসকের কাছে না নিয়ে যাওয়ার জন্য এই মৃত্যু বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু সোমবারের ঘটনাটি একটি 'আনন্যাচারাল ডেথ' বা অস্বাভাবিক মৃত্যু। যার পিছনে সঠিক কারণ এখনও তদন্তসাপেক্ষ। কিন্তু কুসংস্কার আর তাকে ঘিরে নানা ধারনা নিয়ে এখন জোর চর্চা চলছে নেটিজেনদের মধ্যে।

আরও পড়ুনঃ প্রবল বর্ষার তাণ্ডব! হিমাচলে জনজীবন ক্রমে বিপর্যস্ত, মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়াল ২৬১, বিচ্ছিন্ন বহু এলাকা