আজকাল ওয়েবডেস্ক: শরীরকে যদি একটি আস্ত দেশ ধরা হয়, তবে তার রাজধানী হবে মস্তিষ্ক কিংবা হৃদপিণ্ড। কিন্তু সেই দেশেরই এক কোণে লুকিয়ে রয়েছে এক বিস্ময়কর ‘গহ্বর’, যার কথা আমরা প্রায়শই ভুলে যাই। জায়গাটি হল আমাদের নাভি বা নাভিকুণ্ডলী। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, শরীরের এই ক্ষুদ্র অংশটি হাজার হাজার প্রজাতির জীবাণুর এক বিশাল সাম্রাজ্য, যার মধ্যে এমন কিছু অণুজীবেরও সন্ধান মিলেছে যা বিজ্ঞানের কাছে প্রায় অপরিচিত। কিন্তু কেন এই ছোট্ট গর্তটি জীবাণুদের এত পছন্দের আশ্রয়স্থল? আর এগুলি কি আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর?

 

নাভি কেন জীবাণুদের আঁতুড়ঘর?

বিষয়টি বুঝতে গেলে প্রথমে নাভির গঠন সম্পর্কে জানতে হবে। মাতৃগর্ভে থাকাকালীন নাভিরজ্জুর মাধ্যমে আমাদের শরীরে পুষ্টি পৌঁছয়। জন্মের পর সেই রজ্জুটি শুকিয়ে ঝরে গেলেও তার স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে থেকে যায় নাভি। এর গঠন অনেকটা গুহার মতো- অন্ধকার, উষ্ণ এবং স্যাঁতসেঁতে। জীবাণুদের বংশবৃদ্ধির জন্য যা এক কথায় আদর্শ পরিবেশ।

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ত্বকের মৃত কোষ, ঘাম, জামাকাপড় থেকে খসে পড়া সূক্ষ্ম রোঁয়া এবং সাবানের অবশিষ্টাংশ এই নাভিকুণ্ডলীতে এসে জমা হয়। যেহেতু এই অংশটি শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতো সহজে পরিষ্কার করা হয় না, তাই জমে থাকা এই সব বস্তু জীবাণুদের জন্য হয়ে ওঠে পুষ্টির ভান্ডার। এই অনুকূল পরিবেশেই তারা নিজেদের এক স্বতন্ত্র বাস্তুতন্ত্র বা ‘ইকোসিস্টেম’ গড়ে তোলে, যা বাইরের জগৎ থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন।

 

চমকে দেওয়া সব আবিষ্কার

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক ‘বেলি বাটন বায়োডাইভারসিটি প্রজেক্ট’ নামে একটি সমীক্ষা চালান। সেই সমীক্ষায় প্রায় ৬০ জন স্বেচ্ছাসেবকের নাভি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে চমকে দেওয়ার মতো তথ্য উঠে আসে। গবেষকরা প্রায় ২,৩৯০টি ভিন্ন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পান, যার মধ্যে ১,৪৭০টি প্রজাতি সম্পূর্ণ নতুন। আরও আশ্চর্যের বিষয় হল, এক ব্যক্তির নাভিতে এমন এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার খোঁজ মেলে, যা সাধারণত জাপানের মাটিতে পাওয়া যায়। অথচ ওই ব্যক্তি কখনও জাপানেই যাননি। অন্য এক জনের নাভিতে পাওয়া যায় এমন অণুজীব, যা শুধুমাত্র সমুদ্রের গভীরের উষ্ণ প্রস্রবণে দেখা যায়। গবেষকদের মতে, প্রত্যেক ব্যক্তির নাভির এই জীবাণুগুলি তাঁদের আঙুলের ছাপের মতোই অনন্য ও স্বতন্ত্র।

এরা কি শরীরের শত্রু?

নাভিতে বিরল সব জীবাণুর উপস্থিতির কথা শুনে অনেকেই আতঙ্কিত হতে পারেন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ভয়ের বিশেষ কোনও কারণ নেই। কারণ, নাভিতে বসবাসকারী বেশিরভাগ ব্যাকটেরিয়াই আদতে নিরীহ এবং আমাদের শরীরের কোনও ক্ষতি করে না। বরং এদের মধ্যে অনেকেই ‘উপকারী বন্ধু’-র মতো কাজ করে।

এই জীবাণুরা নাভিতে একটি সুস্থ বাস্তুতন্ত্র বজায় রাখে এবং বাইরে থেকে আসা ক্ষতিকর রোগজীবাণুকে বাসা বাঁধতে বাধা দেয়। অর্থাৎ, এরা এক প্রকার প্রাকৃতিক বর্মের মতো কাজ করে। তবে, পরিচ্ছন্নতার অভাব হলে বা কোনও ভাবে নাভিতে কেটে-ছিঁড়ে গেলে পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। তখন কিছু জীবাণু সংক্রমণের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এর ফলে নাভিতে ব্যথা, লাল ভাব, দুর্গন্ধ বা রস ক্ষরণের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, নাভি পরিষ্কার রাখার জন্য অতিরিক্ত বাড়াবাড়ির প্রয়োজন নেই। স্নানের সময় সাধারণ সাবান ও জল দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার করাই যথেষ্ট।