চুল রং করা অনেক মহিলার জন্য সৌন্দর্যচর্চার একটি প্রিয় অংশ। তবে এর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন এখনও উঠছে। বিশেষ করে প্রশ্ন থাকে, নিয়মিত চুল রং করলে কি স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে পারে কি না। এই বিষয়টি বেশ আলোচিত হলেও, চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন প্রমাণ এখনও স্পষ্ট নয়। স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকগুলি কারণে নির্ধারিত হয়—জেনেটিক্স, হরমোন, জীবনধারা এবং পরিবেশ—এবং কেবল চুল রংকেই একমাত্র ঝুঁকি হিসাবে দেখা একটি জটিল বিষয়কে অতিরিক্ত সরলীকরণ করা হবে।

চুলের রং কি স্তন ক্যানসারের কারণ হতে পারে?
ডা. গীতিকা সনোদিয়া বলেন, “কিছু জনসংখ্যা ভিত্তিক গবেষণায় দীর্ঘমেয়াদি এবং ঘন ঘন পার্মানেন্ট ডাই ব্যবহারের সঙ্গে কিছুটা ঝুঁকি বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে, তবে এটি অসঙ্গতিপূর্ণ।” তিনি জোর দিয়ে বলেন যে চুল রং করা সাধারণ হলেও সরাসরি স্তন ক্যানসারের সঙ্গে এর কোনও শক্তিশালী প্রমাণ নেই।
ডা. নির্মল রাউত বলেন, “বর্তমান বৈজ্ঞানিক প্রমাণ যথেষ্ট নয় যাতে আমরা স্পষ্টভাবে কারণ এবং ফলাফলের সম্পর্ক স্থাপন করতে পারি। জীবনধারা, বংশগত বিষয় এবং হরমোনের মাত্রা অনেক বেশি প্রভাব ফেলে।”

ডা. অরবিন্দ বাদিগের জানান, আধুনিক চুলের রং কঠোর পরীক্ষা ও নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে যায়। তিনি বলেন, “এফডিএ, ইউরোপীয় কমিশন এবং বিসিআইএসের মতো নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলি কঠোর নিরাপত্তা মানদণ্ড অনুসরণ করে, তাই কোনও সম্ভাব্য ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকলেও তা ক্ষতিকর মাত্রার অনেক কম।” তিনি আরও জানান, গবেষণা চলমান রয়েছে যাতে নিরাপত্তা প্রোফাইল ও ফর্মুলেশন আরও উন্নত করা যায়।

নিরাপদ চুল রং করার জন্য ব্যবহারিক পরামর্শ
বিশেষজ্ঞরা বলেন, চুলের রং সাধারণত নিরাপদ হলেও সঠিক ব্যবহারের জন্য কিছু সাবধানতা জরুরি। ডা. সনোদিয়া পরামর্শ দেন—
হারবাল বা অ্যামোনিয়া-মুক্ত চুলের রং ব্যবহার করা।
প্রতি ছ’থেকে আট সপ্তাহে একবার চুল রঙ করা, প্রতি মাসে না করা।
ব্যবহার করার সময় হাতগ্লাভস পরা এবং ভাল বায়ুচলাচল নিশ্চিত করা।
রং করার পরে ভালভাবে ধোয়া, যাতে রাসায়নিকের সংস্পর্শ কম হয়।
ডা. রাউত বলেন, নিরাপদ ব্যবহারের সঙ্গে স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, সীমিত মদ্যপান এবং নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করা অনেক বেশি কার্যকর স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে।

মাঝেমাঝে চুল রং ব্যবহার নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই। বর্তমান গবেষণায় দেখা গিয়েছে, স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি থাকলেও তা অল্প এবং অসঙ্গতিপূর্ণ। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিরাপত্তা মানদণ্ড ব্যবহারকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। বিশেষজ্ঞরা একমত, মহিলারা সতর্কভাবে চুল রং করতে পারেন এবং প্রমাণিত প্রতিরোধমূলক পদ্ধতির দিকে মনোযোগ দিতে পারেন।
সংক্ষেপে চুল রং স্তন ক্যানসারের প্রধান কারণ নয়। স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন, জীবনধারার সঠিক নির্বাচন এবং নিয়মিত চিকিৎসা পরীক্ষা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক তথ্য এবং সচেতন ব্যবহারের মাধ্যমে চুল রং করা নিরাপদ।