মর্নিং ওয়াকে যাবেন? আকাশটা বড্ড কালো হয়ে আছে। ঝমঝমিয়ে নামল বলে! 
ইভনিং ওয়াক? ছিঁচকাঁদুনে বৃষ্টি শুরু আবার, কিংবা জলে-কাদায় প্যাচপ্যাচ।
ছাদে এক্সারসাইজ করবেন? বড্ড পিছল যে!
আর এমন মেঘ-বৃষ্টির দিনে আলসেমির ছোঁয়াচ তো আছেই!

অগত্যা শরীরচর্চায় ভাটার টান, মেঘলা দুপুরে বাড়ি থাকলে জমিয়ে ভাতঘুম  এবং ঝমঝমে বৃষ্টির সন্ধেয় কফি-সহ ভাজাভুজির অমোঘ টান। ব্যস! তারপর ‘আমাকে মোটা বোলো না’ বলে কান্নাকাটি! তা হলে উপায়? কী ভাবে আষাঢ়-শ্রাবণে বশে থাকবে ওজন? আর থাকবেন সুস্থ এবং ঝরঝরে? তারই পরামর্শ মিলল ওবেসিটি এবং ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডঃ আশিস মিত্রের কাছে। 

চিকিৎসক মিত্রের মতে, বর্ষার দিনগুলোয় বাইরে গিয়ে হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়ামের সুযোগ অনেকটা কমে যায় আবহাওয়া এবং জল-কাদার কারণে। এদিকে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে কোনও না কোনও উপায়ে শরীরচর্চা জরুরি। তাঁর কথায়, “এমন অনেক এক্সারসাইজ আছে, যা বাড়িতেই করা যায়। যেমন লাফদড়ি অর্থাৎ স্কিপিং করা যায় ঘরে, বারান্দায় বা ছাদে। আবার জগিং করার কায়দায় অল্প একটু জায়গা জুড়ে সামনে-পিছনে তিন ফুট করে দৌড়নো যায়। হাল্কা কিছু ওজন, ধরা যাক পাঁচ-ছ’পাউন্ডের কিছু নিয়ে হাতের ব্যায়াম করতে পারেন। কিংবা সিটআপ বা সাইক্লিং এর মতো করতে পারেন বিছানায় শুয়েই। বৃষ্টিবাদলের দিনে এই ধরনের হাল্কা এক্সারসাইজগুলো জারি রাখতে পারলেই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।”

বৃষ্টিভেজা দিনগুলোয় মনটা আরও খাই খাই করতে থাকে যেন! সন্ধে হলেই মুচমুচে স্ন্যাকস, কুড়মুড়ে ভাজাভাজি হাতছানি দিতে থাকে কমবেশি সকলকেই! বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলছেন, “ওবেসিটি অর্থাৎ স্থূলতা থেকে নিস্তার পেতে হলে এমনিতেই ভাজাভুজি খাওয়া চলবে না। অনেকেই মনে করেন, মিষ্টি খাওয়া বন্ধ করলেই ওজনের সমস্যা মিটে যায়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ওবেসিটি বা ডায়াবেটিসে প্রধান শত্রু কিন্তু তেল। বাইরে ভাজাভুজি, ফাস্ট ফুড বারবার গরম করা হয় বাসি তেলে। তার জন্যই সেগুলো খেতে সুস্বাদু লাগলেও তা ভীষণ অস্বাস্থ্যকর। যদি ভাজাভুজি খেতেই হয়, বাইরে থেকে আনিয়ে নয়, বাড়িতে তৈরি ঘরোয়া স্ন্যাকস খান। কম তেলে বা অলিভ অয়েলে ভাজুন। তেলবিহীন অনেক রেসিপি আছে অনেক। তেল ছাড়াও কিন্তু সিঙারা বানানো যায়। এয়ারফ্রায়ার ব্যবহার করতে পারেন। এতে তেলটা শরীরে ঢুকবে না। খাওয়াদাওয়ায় যতটা তেলের পরিমাণ কমাতে পারবেন, ওবেসিটি বা ডায়াবেটিস, ততটাই দূরে থাকবে।”

শুধু ওজন বৃদ্ধি বা মোটা হয়ে যাওয়াই নয়। বর্ষার দিনগুলোয় অনেকেই ভোগেন নানারকম পেটের সমস্যায়। চিকিৎসক মিত্রের মতে, পেটের সমস্যা এড়াতে এই মরসুমে খাওয়াদাওয়ার ক্ষেত্রে বাড়তি সাবধানতা ভীষণ জরুরি। তাঁর পরামর্শ, “এই সময়টায় বাজার থেকে শাকসব্জি, ফল যা-ই কিনুন, ভাল করে ধুয়ে নিন। ভাল করে না ধুয়ে খেলে বমি বা ডায়েরিয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। তাতে খাওয়াদাওয়ার রুটিনে আরও বেশি সমস্যা হবে। শাক-সব্জি সবই তাই ভাল করে ফুটিয়ে খেতে হবে। বর্ষাকালে খাবারদাবারে ফাঙ্গাস হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। এই সময়টায় বিভিন্ন রকম জীবাণুর সংক্রমণও বেশি হয়। ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, ডেঙ্গির মতো রোগ এই সময়টায় বাড়ে। আর তার সঙ্গী হয়ে আসে পেটের সমস্যা, যা শরীরের সুস্থতা বা ওজন, দুয়ের উপরেই প্রভাব ফেলে। এই মরসুমে তাই ফ্রিজে বেশিদিন খাবার রাখা, বারবার ফ্রিজ থেকে খাবার বার করে গরম করে খাওয়ার মতো অভ্যাসও এড়িয়ে যেতে হবে।”