যখন তখন বাতকর্মের বেগ আসার কারণে অনেকেই লজ্জায় পড়েন। আপনাকেও কি বাতকর্মের জন্য বিড়ম্বনায় পড়তে হয়? তাহলে জেনে রাখবেন, বাতকর্ম কিন্তু আদতে সুস্থতার লক্ষণ। বাতকর্ম কেমন হচ্ছে, তার উপর নির্ভর করে আপনি কতটা সুস্থ রয়েছেন। চিকিৎসকদের মতে, এই স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া আসলে আমাদের শরীরের পক্ষে উপকারী! এমনকী সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত গ্যাস নির্গমন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করতে পারে এবং হজমপ্রক্রিয়াকে আরও উন্নত করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, খাবার হজমের সময় অন্ত্রে স্বাভাবিকভাবেই কিছু গ্যাস তৈরি হয়। যখন শরীর সেই গ্যাস বাইরে বার করে দেয়, তখন তা হজমতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এই গ্যাস শরীরে জমে থাকলে পেট ফেঁপে যাওয়া, অস্বস্তি, এমনকী রক্তচাপও বাড়তে পারে। তাই শরীর যখন নিজে থেকেই এই বাড়তি গ্যাস নির্গমন করে, সেটি আসলে একধরনের ‘রিলিফ প্রক্রিয়া’।

আরও পড়ুনঃ শিশু কি অতিরিক্ত ঘামছে? সাবধান! উপেক্ষা করলেই হৃদরোগের বিপদে শেষ হতে পারে খুদের জীবন

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বাতকর্মের এই রহস্যের মূলে রয়েছে হাইড্রোজেন সালফাইড (এইচ২এস) নামে একটি গ্যাস। বায়ুত্যাগের সময় যে দুর্গন্ধ তৈরি হয়, তার প্রধান কারণ এই গ্যাসটি। হজম প্রক্রিয়ার সময় অন্ত্রের কিছু ব্যাকটেরিয়া খাবারের ফাইবার ভাঙার সময় এই গ্যাসটি তৈরি করে। 

গবেষণায় দেখা যায়, এইচ২এস আমাদের রক্তনালী এবং ধমনীর উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এটি ধমনীর পেশিগুলিকে শিথিল করে বা প্রসারিত করে দেয়, যা ভাসোডাইলেশন নামে পরিচিত। রক্তনালী প্রসারিত হলে রক্ত সঞ্চালন অনেক সহজে হয় এবং রক্তনালীর দেওয়ালে চাপ কমে আসে। এই চাপ কমার ফলস্বরূপ, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই গ্যাসটি কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের মধ্যে আন্তঃকোষীয় যোগাযোগের অণু হিসেবে কাজ করে। বিশেষত, যে এনজাইমটি শরীরে এইচ২এস তৈরি করে, তা রক্তনালীর মসৃণ পেশিগুলির শিথিলকরণে সাহায্য করে যা রক্তচাপ এবং রক্তনালীর প্রতিরোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক।

হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের সঙ্গে অন্ত্রের স্বাস্থ্যের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। গবেষকরা বলছেন, এইচ২এস গ্যাস তৈরি হওয়া সম্পূর্ণটাই নির্ভর করে অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম-এর ভারসাম্যের উপর। অর্থাৎ অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় থাকলে হাইড্রোজেন সালফাইডের মতো প্রাকৃতিক যৌগ তৈরি হয় যা হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা বজায় রাখতে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে পরোক্ষভাবে সাহায্য করতে পারে। 

চিকিৎসকদের মতে, গ্যাস নির্গমন হজমতন্ত্রকে সচল রাখে, অতিরিক্ত অ্যাসিড বা টক্সিন জমা হতে দেয় না এবং রক্তপ্রবাহে আরাম দেয়। এর ফলে মানসিক চাপও কিছুটা কমে যেতে পারে, যা পরোক্ষভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

তবে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, যদি অতিরিক্ত বাতকর্ম শুরু হয় বা গন্ধ, ব্যথা, অস্বস্তি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ সেটি কোনও হজমজনিত সমস্যার ইঙ্গিতও হতে পারে।