অগ্ন্যাশয় বা প্যানক্রিয়াস আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। খাবার হজম থেকে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ, সবেতেই প্রধান ভূমিকা পালন করে অগ্ন্যাশয়। তাই এই অঙ্গটি ঠিকমতো কাজ করা বন্ধ করে দিলে নানা বিপদের সংকেত দিতে শুরু করে শরীর। যা অনেকেই উপেক্ষা করে থাকেন। চিকিৎসকদের মতে, শরীরে বেশ কয়েকটি লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে সতর্ক হওয়া উচিত। যেমন- 

১. পেট বা পিঠে স্থায়ী ব্যথা: অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহের সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ হল পেটের উপরের অংশে ব্যথা যা পিঠ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই ব্যথা সাধারণত খাওয়ার পর বাড়ে, বিশেষ করে ফ্যাটযুক্ত খাবার খেলে বেশি হয়। অনেকেই একে সাধারণ গ্যাস-অম্বল ভেবে ভুল করেন। কিন্তু এটি অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ বা প্যানক্রিয়াটাইটিসের প্রাথমিক সংকেত বহন করতে পারে। 

আরও পড়ুনঃ বাতকর্মে কমে উচ্চ রক্তচাপ, শরীর থাকে তরতাজা! লজ্জা না পেয়ে জানুন বায়ুত্যাগ করলে পাবেন আর কী উপকার

২. হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া ও তৈলাক্ত মলঃ অগ্ন্যাশয় হজমের জন্য প্রয়োজনীয় উৎসেচক তৈরি করে। সেটি কমে গেলে খাবার ঠিকভাবে হজম হয় না। ফলে শরীর পর্যাপ্ত পুষ্টি শোষণ করতে পারে না। এর ফলেই হঠাৎ ওজন কমে যায় এবং মল তৈলাক্ত, হালকা রঙের বা দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে ওঠে।

৩. বমিভাব ও হজমে অস্বস্তি: অগ্ন্যাশয় দুর্বল হয়ে পড়লে খাবার হজমে সমস্যা হয়। অল্প খাওয়ার পরই অস্বস্তি, বমি ভাব বা ফাঁপাভাব দেখা দিতে পারে। যা অনেকেই সাধারণ অ্যাসিডিটির সমস্যা ভেবে এড়িয়ে যায়। কিন্তু এই সমস্যা নিয়মিত হলে চিকিৎসা প্রয়োজন।

৪. রক্তে শর্করার ভারসাম্য নষ্ট হওয়া: অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন তৈরি করে। যা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। এটি ঠিকভাবে কাজ না করলে হঠাৎ শরীরে সুগারের মাত্রা বেড়ে যেতে বা কমে যেতে পারে। এতে ক্লান্তি, দুর্বলতা বা ঘন ঘন খিদে পাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। দীর্ঘমেয়াদে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

৫. ত্বক ও চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া: চামড়া বা চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে গেলে এটি জন্ডিসের লক্ষণ হতে পারে। যা অগ্ন্যাশয়ের সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। বিলিরুবিন জমে গেলে গাঢ় রঙের মূত্র, হালকা মল ও ত্বকে চুলকানিও হতে পারে।

অতিরিক্ত মদ্যপান, ধূমপান, ফ্যাটযুক্ত খাবার, গলস্টোন বা উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইড অগ্ন্যাশয়ের ক্ষতি করে। তাই অগ্ন্যাশয় সুস্থ রাখতে মদ্যপান ও ধূমপান এড়িয়ে চলা, হালকা ও সুষম খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত জলপান, নিয়মিত ব্যায়াম ও ওজন নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। উপরেরর উপসর্গগুলির কোনও একটি খেয়াল করলে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। কারণ অগ্ন্যাশয়ের সমস্যা যত দ্রুত ধরা যায়, চিকিৎসাও তত বেশি কার্যকর হয়।