আজকাল ওয়েবডেস্ক: আধুনিক কর্মজীবন মানেই ডেস্ক-এর সামনে চেয়ারে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকা। সকাল থেকে সন্ধ্যা, কম্পিউটারের পর্দার দিকে তাকিয়েই কেটে যায় আট থেকে ন’ঘণ্টা। কর্মব্যস্ততার এই দৌড়ে কখন যে নিঃশব্দে মেরুদণ্ড তার স্বাভাবিক গঠন হারাতে শুরু করে, তা টের পাওয়া যায় না। ঘাড়, পিঠ বা কোমরের হালকা ব্যথা যখন অসহনীয় হয়ে ওঠে, ততক্ষণে অনেকটাই দেরি হয়ে যায়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অল্প বয়স থেকেই স্পন্ডিলাইটিস, স্লিপ ডিস্ক বা পিএলআইডি-র মতো গুরুতর সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণই হল দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করার অভ্যাস এবং ভুল দেহভঙ্গি।

কিন্তু পেশার প্রয়োজনে যাঁদের বসে কাজ করা ছাড়া উপায় নেই, তাঁরা কী করবেন? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। কয়েকটি সহজ নিয়ম ও অভ্যাসই পারে আপনার মেরুদণ্ডকে সুস্থ রাখতে। এর জন্য প্রয়োজন শুধু একটুখানি সচেতনতা।

১। সঠিক ভঙ্গি মূল চাবিকাঠি
সমস্যার গোড়া হল বসার ভুল ভঙ্গি। চেয়ারে বসার সময় কোমর থেকে পিঠ সোজা রাখুন। কাঁধ দুটো রিল্যাক্সড বা শিথিল অবস্থায় রাখুন, সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে নয়। চেয়ারে এমনভাবে বসুন যাতে আপনার পা মাটির সঙ্গে সমান্তরাল থাকে এবং পায়ের পাতা পুরোপুরি মাটি স্পর্শ করে। প্রয়োজনে পায়ের তলায় একটি ছোট টুল বা ফুটরেস্ট ব্যবহার করতে পারেন। কম্পিউটার বা ল্যাপটপের মনিটর চোখের সোজাসুজি রাখুন, যাতে ঘাড় বেশি ঝুঁকাতে বা উঁচু করতে না হয়।
২। সঠিক চেয়ার ও ডেস্ক নির্বাচন
একটি ‘আর্গোনমিক’ বা স্বাস্থ্যসম্মত চেয়ার আপনার মেরুদণ্ডের সবচেয়ে বড় বন্ধু হতে পারে। এমন চেয়ার বাছুন যেখানে কোমরের কাছে সাপোর্ট বা ‘লাম্বার সাপোর্ট’ রয়েছে। চেয়ারের উচ্চতা এমন রাখুন যাতে আপনার কনুই ডেস্কের সঙ্গে প্রায় ৯০ ডিগ্রি কোণে থাকে।
৩। নিয়মিত বিরতি নেওয়া আবশ্যক
একটানা বসে থাকা মেরুদণ্ডের উপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করে। চিকিৎসকদের মতে, প্রতি ৩০-৪০ মিনিট অন্তর অন্তত পাঁচ মিনিটের জন্য বিরতি নিন। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান, একটু হাঁটাচলা করুন বা হালকা স্ট্রেচিং করুন। এই সামান্য বিরতিতেই মেরুদণ্ডের উপর থেকে চাপ অনেকটা কমে যায় এবং রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে।
আরও পড়ুন: ৭ কোটি শুক্রাণু চাই! চাহিদা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ৫০ সঙ্গীর সঙ্গে একটানা সঙ্গম রানিমার! কোথায় থাকে এই রানি?
৪। ডেস্কের ব্যায়াম ও শরীরচর্চা
কাজের ফাঁকেই কিছু সহজ ব্যায়াম পেশিকে সচল রাখতে পারে। বসে বসেই ঘাড় ডান দিক থেকে বাঁ দিকে বা উপর-নীচ করুন। কাঁধ ঘোরান। এছাড়াও দৈনন্দিন জীবনে অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়ামের জন্য বরাদ্দ করুন। হাঁটা, সাঁতার বা যোগাসন মেরুদণ্ডের পেশিকে শক্তিশালী করে তোলে এবং নমনীয়তা বাড়ায়। বিশেষ করে, পেটের ও পিঠের পেশি (কোর মাসল) শক্তিশালী হলে তা মেরুদণ্ডকে সোজা রাখতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন: অন্য জাতের সঙ্গে সঙ্গম, তাতে জন্মানো সন্তানরাই বদলে দিচ্ছে বংশের স্বভাব-চরিত্র! এ কী দেখলেন গবেষকরা?
৫। জীবনযাত্রায় পরিবর্তন
শুধুমাত্র কাজের জায়গাতেই নয়, বাড়িতেও কীভাবে বসছেন সেদিকে নজর দিন। সোফায় বা বিছানায় বসে দীর্ঘক্ষণ ধরে মোবাইল ঘাঁটা বা ল্যাপটপে কাজ করা এড়িয়ে চলুন। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন এবং ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবার খাদ্যতালিকায় রাখুন। এগুলি হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের সাফ কথা, প্রযুক্তি নির্ভর জীবনে শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা বাড়ছে। তাই নিজের শরীরের প্রতি অবহেলা নয়। সামান্য সচেতনতাই যদি ভবিষ্যতের বড় বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে, তবে সেই চেষ্টা করতে ক্ষতি কী?