আজকাল ওয়েবডেস্ক: ফুরিয়ে আসছে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিমাণ। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দূষণ। বিশ্বজুড়ে যখন জ্বালানির খরচ এবং দূষণের মাত্রা নিয়ে মাথাব্যথা নিত্যদিনের, ঠিক তখনই পরিবেশবান্ধব এক রান্নার পদ্ধতি তৈরি করে অনন্য নজির গড়ল ভারত। রাজস্থানের মাউন্ট আবুতে নির্মিত হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সৌরচালিত রান্নাঘর। একটিও গ্যাস সিলিন্ডার বা বৈদ্যুতিক হিটার ছাড়াই প্রতিদিন এখানে রান্না হয় প্রায় ৫০,০০০ জনের খাবার। অপ্রচলিত শক্তির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে এই রান্নাঘর।
রাজস্থানের মাউন্ট আবুতে অবস্থিত ব্রহ্মা কুমারী স্পিরিচুয়াল হেডকোয়ার্টার্স-এ এই সৌরচালিত রান্নাঘর গড়ে তোলা হয়েছে। পাহাড়ি অঞ্চলের মনোরম পরিবেশে নির্মিত এই রান্নাঘর প্রযুক্তি ও আধ্যাত্মিকতার অপূর্ব সংমিশ্রণ।
আরও পড়ুন: শুক্রাণু দান করে কত টাকা আয় হয়? ভারতে বীর্য দাতা হতে গেলে কোন কোন নিয়ম জানতে হবে?
আরও পড়ুন: ৮৫ বছর বয়সে মাধ্যমিকে বসেও ফের অকৃতকার্য! ইনিই পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক স্কুলছাত্র
কীভাবে কাজ করে?
এই বিশাল রান্নাঘরটির মূল চালিকাশক্তি হল এর ১,২০০-রও বেশি সৌর প্রতিফলক (বা সোলার রিফ্লেক্টর)। এই প্রতিফলকগুলি কিছুটা বড় বড় আয়নার মতো কাজ করে। এই প্রতিফলকগুলিকে এমন কোণে স্থাপন করা হয়, যাতে সেগুলি সূর্যের আলোকে এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত করে ফেলতে পারে। এবার সেই আলোর কেন্দ্রে বড় বড় স্টিলের পাত্রে চাপিয়ে দেওয়া হয়। সূর্যের তাপ এক জায়গায় পড়লে তাপমাত্রা পৌঁছাতে পারে ৬৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। এই তাপেই রান্না করা হয় ছাতু, সবজি, ডাল, চিড়া, রুটি, এবং আরও বহু নিরামিষ পদ। শুধু হাড়ি কড়াই নয়, এই সৌর উনুনে স্টিম কুকারও ব্যবহার করা হয়। পুরোপুরি সৌরতাপে টগবগ করে ফোটে জল। অথচ গ্যাস, ডিজেল বা বিদ্যুতের কোনও প্রয়োজনই পড়ে না। একারণেই এই ব্যবস্থাটিকে ‘কমপ্লিটলি এমিশন-ফ্রি’ (দূষণমুক্ত) রান্নার ব্যবস্থা বলা হয়।
কতটা জ্বালানি বাঁচে?
সংস্থার প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে বছরে প্রায় ২ লাখ কেজি এলপিজি গ্যাস সাশ্রয় হচ্ছে। শুধু তাই নয়, গড়ে ৭৫ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন কমানো সম্ভব হচ্ছে প্রতি বছর। শুধু ভারতের জন্যই নয়, গোটা বিশ্বের ক্ষেত্রেই পরিবেশ রক্ষায় এটি একটি বড় মাইলফলক।

কাদের জন্য রান্না হয়?
ব্রহ্মা কুমারী আশ্রমে প্রতিদিন হাজার হাজার সাধক, পর্যটক এবং কর্মচারী ভোজন করেন। এছাড়াও, আশেপাশের গ্রাম ও দরিদ্র অঞ্চলে খাবার সরবরাহের ব্যবস্থাও করা হয়। এই রান্নাঘর থেকে প্রতিদিন অন্তত ৫০,০০০ মানুষের খাবার তৈরি ও বিতরণ হয়।
বিশ্বজুড়ে স্বীকৃতি
এই প্রকল্প ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে এটি একটি মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সৌর শক্তির যথাযথ ব্যবহার, বিশাল পরিসরে বাস্তব প্রয়োগ এবং ধর্মীয় কেন্দ্রের সঙ্গে টেকসই প্রযুক্তির সংমিশ্রণ, সব মিলিয়ে এটিকে এক নজিরবিহীন উদ্যোগ হিসাবেই দেখছেন পরিবেশবিদেরা।
মাউন্ট আবুর এই সৌর রান্নাঘর প্রমাণ করে, চাইলেই প্রযুক্তি এবং পরিবেশের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে ভাল কাজ করা যায়। এটি কেবল রান্নাঘর নয়, বরং ভবিষ্যতের টেকসই সমাজ গঠনের এক উজ্জ্বল দিশা। গ্যাস, বিদ্যুৎ ছাড়াও যে এত বড় পরিসরে রান্না সম্ভব, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল সংস্থাটি। আগামী দিনে এই মডেল অনুসরণ করে আরও অনেক প্রতিষ্ঠান এই ধরনের কাজে উদ্যোগী হবে, এমনটাই আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।