কথায় বলে, মা হওয়া মুখের কথা নয়। বাস্তবে ঠিক তাই। শুধু শিশুকে বড় করে তোলা নয়, মা হওয়ার পর প্রতিটি মেয়ের জীবনে আসে অনেক পরিবর্তন। গর্ভাবস্থা একজন মহিলার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পরিবর্তন ঘটে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে যদিও বলা হয়, সন্তান প্রসবের ৬ সপ্তাহ পরে মহিলাদের শরীর সুস্থ হয়ে যায়। কিন্তু এই তথ্য পুরোপুরি ঠিক নয়। কারণ সকলের ক্ষেত্রে একরকম হয় না। এমনকী ছয় মাস পরেও এই পরিবর্তনগুলি অদৃশ্য নাও হতে পারে। শারীরিক গঠনের সঙ্গে পাল্টে যায় মানসিক চিন্তাধারাও। 

গর্ভাবস্থা প্রত্যেক মহিলার জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সময়। গর্ভবতী হওয়ার পর থেকে সন্তান প্রসবের পর পর্যন্ত, প্রতিটা মুহূর্তই একজন নারীর জন্য খুব চ্যালেঞ্জিং হয়। আসলে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর থেকেই প্রত্যেক মহিলার শরীরে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে। তবে এর পাশাপাশি তাঁদের জীবনে আরও অনেক পরিবর্তন আসে। গর্ভস্থ সন্তানে ভালো-মন্দ সবকিছু মাথায় রেখে তবেই একজন হবু মা তাঁর প্রতিটা পদক্ষেপ নেন। সন্তানের জন্য আগে থেকেই নানা রকম পরিকল্পনা করা শুরু করেন তিনি। তবে শুধু প্রেগনেন্সির সময়ই নয়, প্রসবের পরেও বহুদিন মহিলাদের শরীরের কোন কোন বিষয় স্বাভাবিক হতে সময় লেগে যায়, দেখে নিন- 

*স্তনের আকার পরিবর্তনঃ সন্তান জন্মানোর পরে তাকে স্তন্যপান করানোর কারণে মহিলাদের স্তনের আকার বৃদ্ধি পায়। এই সময় মহিলাদের শরীরে দুধ উত্‍পাদন হয়। তবে বাচ্চাকে স্তন্যপান করানো বন্ধ করার পরে স্তনের আকার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আবার কমে যায়।

আরও পড়ুনঃ আপনি কতটা সুস্থ জানান দিতে পারে নখ! কোন কোন লক্ষণ দেখলে বুঝবেন শরীরে বাসা বেঁধেছে মারাত্মক রোগ?

*চুল পড়াঃ গর্ভাবস্থায় ইস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাবে মহিলাদের চুল খুব একটা পড়ে না। কিন্তু প্রসবের পরেই ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা শরীরে কমে যাওয়ায় অনেক মায়েরাই চুল পড়ার সমস্যায় ভোগেন। 

*যৌন ইচ্ছে কমে যাওয়াঃ প্রেগনেন্সির পরে মহিলাদের মধ্যে যৌন ইচ্ছা কমতে থাকে। সমীক্ষা বলছে, সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরে মহিলাদের মধ্যে যৌন আকাঙ্ক্ষা ফিরে আসতে প্রায় এক বছর পর্যন্ত সময়ও লাগতে পারে। আসলে, গর্ভাবস্থায় মহিলাদের মধ্যে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং প্রসবের পরে তা দ্রুত কমে যায়, ফলে যৌন ইচ্ছার অভাব ঘটে। 

*পায়ের আকারে পরিবর্তনঃ গর্ভাবস্থায় অনেক মহিলার পা ফুলে যায়। একজন গর্ভবর্তী থাকাকালীন মহিলাদের ওজন তাঁর গড় ওজনের থেকে ২০-২৫ কেজি পর্যন্ত বেড়ে যায়। এই ভার পায়ের ওপর পড়ে। তাই পায়ের আকার বাড়তে পারে। পাশাপাশি শরীরে হওয়া হরমোনের পরিবর্তনের কারণেও এটি হয়ে থাকে।

*পেটের আকারঃ গর্ভাবস্থায় মহিলাদের পেট অনেকটা স্ফীত হয়ে যায়। তা আবার আগের মতো হতে ছয় থেকে আট সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

 আর যা যা পরিবর্তন হয়-


* শরীরে আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ফ্যাটি অ্যাসিডের মতো পুষ্টি উপাদানগুলি পুনরুদ্ধার করতে বছরের পর বছর সময় লাগতে পারে।

* মাতৃমস্তিষ্কে কাঠামোগত পরিবর্তন ঘটে যা মনোযোগ, সহানুভূতি এবং সতর্কতাকে পুনরুজ্জীবিত করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, গর্ভাবস্থায় মস্তিষ্কের পরিবর্তন ২ থেকে ৬ বছর পর্যন্ত থাকে। 
* হৃদরোগ এবং বিপাকীয় চাপ প্রসবের পরেও দীর্ঘ সময় ধরে থাকে।
* ঘুমের অভাব স্মৃতিশক্তি, মেজাজ এবং মানসিক নিয়ন্ত্রণকে ব্যাহত করে।

এই ধরনের শারীরিক পরিবর্তন সংস্কৃতি, জীববিজ্ঞানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলে পার্থক্য দেখা যায়। যেমন নর্ডিক দেশ অর্থাৎ উত্তর ইউরোপ ও উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের অন্তর্গত অঞ্চলগুলোতে গর্ভাবস্থায় বর্ধিত ছুটি দেওয়া হয়। সেইসব দেশে মাতৃত্বকালীন বিষণ্ণতার হার কম থাকে। অন্যদিকে, বিশ্বজুড়ে অনেক মায়েরাই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কাজে ফিরে আসেন। ফলে তাদের শরীর এবং মস্তিষ্ক আগের মতো হতে পর্যাপ্ত সময় পায় না। এক্ষেত্রে নতুন মায়েদের পরিবার-পরিজনদের মানসিক সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি।