আজকাল ওয়েবডেস্ক: মানসিক চাপ, টেনশনের সমস্যা এখন ঘরে ঘরে। ছেলেমেয়ের পড়াশোনা থেকে অফিসের সমস্যা, হঠাৎ করে উদ্বেগ বা অ্যাংজাইটি পেয়ে বসলে কী করবেন? অনেকেই ওষুধ খাবেন, শ্বাসনালীর ব্যায়াম করবেন। কেউ কেউ দ্বারস্থ হবেন মনোবিদের। এর কোনওটিই ভুল নয়। কিন্তু জানেন কি এর চেয়েও বেশি সহজ একটি উপায় রয়েছে হাতের কাছেই? সেই পদ্ধতি অবলম্বন করলে  মাত্র কয়েক মিনিটে কমে যাবে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ? বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, বহুমূলের তলায় ঠান্ডা বরফ রাখালেই মুক্তি মিলতে পারে উদ্বেগ থেকে।
সম্প্রতি একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, হঠাৎ করে তৈরি হওয়া উদ্বেগ বা আতঙ্কজনিত শারীরিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে বগলের নিচে ঠান্ডা বরফ বা কোল্ড প্যাক চাপ দিয়ে ধরতে হবে। এতে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই উদ্বেগ হ্রাস পেতে পারে। নিছক কুসংস্কার নয়। এর নেপথ্যে রয়েছে ভেগাস নার্ভ নামের একটি স্নায়ু। এবং আমাদের দেহের প্রশান্তি-সংক্রান্ত স্নায়ুতন্ত্র।
প্রথমেই বলে রাখা দরকার, আমাদের দেহে দুইটি প্রধান অটোনমিক স্নায়ুতন্ত্র রয়েছে। সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম এবং প্যারাসিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম। প্রথমটি উত্তেজনার মুহূর্তে দেহকে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত করে, পেশিকে সজাগ রাখে। অন্যদিকে দ্বিতীয়টি কাজ করে ঠিক বিপরীতভাবে। হৃদস্পন্দন ধীর করে, শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করে এবং দেহকে শান্ত করে।
আরও পড়ুন: শুক্রাণু দান করে কত টাকা আয় হয়? ভারতে বীর্য দাতা হতে গেলে কোন কোন নিয়ম জানতে হবে?
আরও পড়ুন: ৮৫ বছর বয়সে মাধ্যমিকে বসেও ফের অকৃতকার্য! ইনিই পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক স্কুলছাত্র
যখন আমরা আকস্মিক দুশ্চিন্তা বা ভয় পেয়ে যাই, তখন সিম্প্যাথেটিক সিস্টেম সক্রিয় হয়। অর্থাৎ হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, রক্তচাপ বাড়ে, এবং দেহ সজাগ ও সতর্ক হয়ে যায়। বিজ্ঞানীদের দাবি, এই সময়ে বগলের নিচে কোল্ড প্যাক রাখলে তা ডাইভিং রিফ্লেক্স নামক এক বিশেষ প্রতিবর্ত ক্রিয়াকে সক্রিয় করে। ঠিক ঠান্ডা জলে পড়ে গেলে শরীর যেমন ভাবে কাজ করে, এটিও তেমন ভাবেই ভেগাস নার্ভকে সক্রিয় করে তোলে।
এবার জেনে নেওয়া যাক, ভেগাস নার্ভ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ। ভেগাস হল মস্তিষ্ক থেকে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের সাথে সংযোগকারী একটি দীর্ঘ স্নায়ু। এর কাজ হৃদপিণ্ড, শ্বাসযন্ত্র ও পাচনতন্ত্রের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করা। এটি যখন উত্তেজিত হয়, তখন দেহের “অ্যালার্ম মোড” বন্ধ হয়ে যায় এবং সারা শরীরে স্বস্তি আসে। বরফের সংস্পর্শে আসায় তখন ভেগাস নার্ভ স্তিমিত হয়ে পড়ে এবং দেহ শান্ত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক মানসিক স্বাস্থ্য গবেষণা কেন্দ্রে পরিচালিত পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই পদ্ধতিটি প্রয়োগ করলে মাত্র ১৫ থেকে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই হৃদস্পন্দন ধীর হয়ে আসে এবং শরীরের উদ্বেগজনিত অস্বস্তি হ্রাস পায়। এতে ওষুধ ছাড়াই অ্যাংজাইটি অ্যাটাক সামাল দেওয়া যেতে পারে।
কোন কোন ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি বিশেষ উপকারী?
১. আকস্মিক অ্যাংজাইটি অ্যাটাকের সময়
২. পরীক্ষা বা সাক্ষাৎকারের আগে
৩. বিমানযাত্রার ভয় কাটাতে
৪. অনেকের সামনে বক্তৃতা দেওয়ার উদ্বেগ কাটাতে

সব মিলিয়ে, জীবনের নানা মুহূর্তে হঠাৎ করে উদ্বেগ বা আতঙ্ক আমাদের পেয়ে বসে। এ সময় ওষুধ বা থেরাপির সুযোগ নাও থাকতে পারে। এমন সময় হাতের কাছের একটি কোল্ড প্যাক বা বরফের টুকরো হতে পারে সঞ্জীবনী। বাহুমূলে রাখলেই ভেগাস নার্ভকে সক্রিয় করে শরীরের ভিতরের অস্থিরতা কমিয়ে এনে দেয় প্রশান্তি।