চোখকে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে বাঁচাতে অনেকেই নিয়মিত সানগ্নাস ব্যবহার করেন। যুগের সঙ্গে দেখা মেলে নিত্যনতুন ফ্যাশনেবল সানগ্লাসের। কিন্তু এই সানগ্লাস পরার অভ্যাস কি আদৌ চোখের জন্য ভাল? এনিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজ্ঞানীরা। নতুন এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অতিরিক্তভাবে রোদচশমা পরলে উল্টো চোখ ও শরীরের প্রাকৃতিক ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, মানবদেহের চোখ প্রকৃতিগতভাবে সূর্যের আলোর সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার জন্য তৈরি। যখন আমরা নিয়মিতভাবে সেই প্রাকৃতিক আলোকে আটকাই, তখন শরীরের ভেতরে চলা বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। সূর্যালোক শুধু আমাদের দেখার ক্ষমতাকেই নয়, একইসঙ্গে শরীরের শক্তি, হরমোন নিঃসরণ ও ঘুমের ছন্দকেও নিয়ন্ত্রণ করে।
আরও পড়ুনঃ আপনি কি ‘পিস্ট্যানথ্রোফোবিয়া’র শিকার? জানেন কী এই রোগ? কী তার উপসর্গ?
বিশেষজ্ঞদের মতে, সূর্যের আলো আমাদের কোষের ভেতরে থাকা মাইটোকন্ড্রিয়াকে সক্রিয় করে, যা শক্তি উৎপাদনের মূল কেন্দ্র। এর ফলে শরীরে সতেজতা, মনোযোগ ও শক্তি ফিরে আসে। তাছাড়া সকালে সূর্যের প্রাকৃতিক আলো চোখে পড়লে শরীরের সার্কাডিয়ান রিদম বা জৈব ঘড়ি সঠিকভাবে কাজ করে। ফলে ঘুমের মান উন্নত হয় ও হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকে।

সূর্যালোকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হল মেলানিন উৎপাদন। এই উপাদানটি আমাদের ত্বক ও চোখের জন্য প্রাকৃতিক ইউভি সুরক্ষা দেয়। পর্যাপ্ত সূর্যালোক না পেলে মেলানিনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে যা চোখের সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং ত্বককে সহজে পুড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে ফেলে।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এ কথা মোটেই বলা হচ্ছে না যে সকলকে সারাদিন রোদে থাকতে হবে বা চোখ রক্ষার প্রয়োজন নেই। কিন্তু অতিরিক্তভাবে রোদচশমার উপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয়। বিশেষত সকাল ও বিকেলের নরম সূর্যালোক চোখে পড়লে তা শরীরের জন্য উপকারী।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, দিনের শুরুতে অন্তত ১০–১৫ মিনিট রোদে সময় কাটান। তবে দুপুরের তীব্র সূর্যালোক থেকে অবশ্যই চোখ ও ত্বককে সুরক্ষিত রাখুন। আসলে আমাদের শরীর ও প্রকৃতি একে অপরের পরিপূরক। সূর্যকে ভয় না পেয়ে তার আলোকে সঠিকভাবে ব্যবহার করলেই সুস্থ চোখ, ভাল ঘুম আর প্রাকৃতিক শক্তিতে ভরপুর এক জীবন পাওয়া সম্ভব।
