মদ্যপান শরীরের জন্য ক্ষতিকর। একথা সকলেরই জানা। কিন্তু অনেকেই ভাবেন, সপ্তাহে একদিন অল্প মদ খেলে হয়তো তেমন ক্ষতি হয় না। কিন্তু এমন ধারণা পুরোপুরি ভুল। কারণ সপ্তাহে একবার মদ্যপান করলেও শরীরের একাধিক ক্ষতিকর পরিবর্তন শুরু হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, মদ্যপান যতই সীমিত হোক না কেন, তা লিভার, হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক ও পাচনতন্ত্রের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। একবার মদ্যপানও নিরাপদ নয়। এই অভ্যাসও শরীরে বিষক্রিয়ার প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে যাঁরা ধূমপান করেন বা ওজন বেশি, তাঁদের জন্য এটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ। এমনকী কেউ একদিনেই অতিরিক্ত পান করলে তা লিভার ফেইলিওর, হৃদরোগ বা এমনকী স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়।
নিয়মিত মদ্যপান তো বটেই এমনকী সপ্তাহে একবার অ্যালকোহল পান করলেও লিভার চর্বি জমাতে শুরু করে। সময়ের সঙ্গে তা ফ্যাটি লিভার, সিরোসিস বা লিভার ক্যানসারের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। মদ্যপান রক্তচাপ বাড়ায় এবং হৃদস্পন্দন অনিয়মিত করে তুলতে পারে। যারা মদ ও ধূমপান একসঙ্গে করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে হৃদরোগ বা হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের আশঙ্কা অনেকগুণ বেড়ে যায়।
আরও পড়ুনঃ বয়স বাড়লেও মস্তিষ্ক থাকবে চাঙ্গা! ৭ অভ্যাস রপ্ত করলেই কখনও কাছে ঘেঁষবে না ডিমেনশিয়া
মধ্যপান ঘুমে প্রভাব ফেলে, মনোযোগ নষ্ট করে। অনেকে মনে করেন, মদ্যপান করলে ঘুম ভাল হয়, কিন্তু তা সাময়িক। চিকিৎসকরা বলেন, মদ ঘুমের গুণমান নষ্ট করে দেয়। রাতে একটানা ঘুম হয় না, ঘুমের গভীর স্তর নষ্ট হয়। ফলে সকালে ক্লান্তি ও মাথাব্যথা দেখা দেয়।
অ্যালকোহলে প্রায় কোনও পুষ্টিগুণ ছাড়াই প্রচুর ক্যালরি থাকে। ফলে মদ্যপান ওজন বাড়ায় এবং পেটে চর্বি জমতে শুরু করে। এছাড়া এটি হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, পাচনতন্ত্রে অম্লতা, গ্যাস, বা কখনও পেটে জ্বালা-পোড়ার কারণ হয়। দীর্ঘমেয়াদে এতে গ্যাস্ট্রিক আলসার বা অন্ত্রের প্রদাহ হতে পারে।
মস্তিষ্ক ও নার্ভে প্রভাব ফেলে অ্যালকোহল। মদ্যপানের পর প্রতিক্রিয়া ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ধীর হয়ে যায়। এমনকী সপ্তাহে একদিন অভ্যাসও মস্তিষ্কে নিউরোট্রান্সমিটার ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে, যা সময়ের সঙ্গে মানসিক অস্থিরতা, উদ্বেগ বা হতাশার ঝুঁকি বাড়ায়।

ওষুধের সঙ্গে মদ মিশলে হতে পারে বিপদ। যারা নিয়মিত ওষুধ খান বিশেষ করে ঘুমের ওষুধ, বিষণ্ণতার ওষুধ, বা পেইনকিলার তাঁদের জন্য অ্যালকোহল প্রাণঘাতী হতে পারে। এতে ওষুধের প্রতিক্রিয়া বেড়ে গিয়ে শ্বাসকষ্ট, বমি বা রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।
কারা একেবারেই মদ্যপান এড়িয়ে চলবেন? চিকিৎসকদের মতে, গর্ভবতী নারী, লিভার, হৃদরোগ বা মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হলে, যারা ডায়াবেটিস বা হরমোনজনিত সমস্যায় আছেন, যারা নিয়মিত ওষুধ খান, যাদের পাচন বা অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে তাঁদের একফোঁটা অ্যালকোহলও ক্ষতিকর হতে পারে।
আসলে অ্যালকোহল কোনওভাবেই স্বাস্থ্যকর নয়। অল্প ওয়াইন হৃদস্বাস্থ্যের জন্য ভাল, এমন ধারণাও প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি বিভ্রান্তিকর ধারণা। মদ্যপান থেকে যে ক্ষতি হয়, তার তুলনায় লাভ নগণ্য। পরিবর্তে নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, স্ট্রেস কমানো ও পুষ্টিকর খাবার-এই চার অভ্যাসই সুস্থতার জন্য যথেষ্ট।
