আজকাল ওয়েব ডেস্ক: বুধবার মহালয়া। পিতৃপক্ষের অবসান। মহালয়া মানেই দুর্গাপুজোর আগমনীর সুর বেজে ওঠে। কিন্তু সত্যি কি দেবী দুর্গার সঙ্গে মহালয়ার কোনও সম্পর্ক রয়েছে? আসুন জেনে নেওয়া যাক-
কৃষ্ণপক্ষ বা পিতৃপক্ষের অবসান এবং শুক্লপক্ষ বা দেবীপক্ষের সূচনায় অমবস্যার একটি নির্দিষ্ট ক্ষণকে সনাতন ধর্মে মহালয়া বলা হয়। আর এক্ষেত্রে প্রশ্ন আসে মহালয়া আসলে কী? মহালয়া শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল মহান যে আলয় বা আশ্রয়। অর্থাৎ মহা+আলয় জুড়ে এই শব্দ। যদিও সন্ধির নিয়ম মেনে শব্দটি‘মহালয়’ হওয়ার কথা। তবে‘মহালয়া’ বলার পিছনে কোনও ব্যকরণগত ব্যাখ্যা নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেবীপক্ষের শুভ সূচনা হয় বলে শব্দটিকে স্ত্রীলিঙ্গ করে ‘মহালয়া’ বলা হয়।
এক্ষেত্রে দেবী দুর্গাই হলেন, সেই মহান আলয়। পুরাণ থেকে মহাভারত, মহালয়া ঘিরে বর্ণিত আছে নানা কাহিনি। পুরাণ মতে, ব্রহ্মার বরে মহিষাসুর অমর হয়ে উঠেছিলেন। শুধুমাত্র কোনও নারীশক্তির কাছে তার পরাজয় নিশ্চিত ছিল। অসুরদের অত্যাচারে যখন দেবতারা অতিষ্ঠ, তখন ত্রিশক্তি ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর নারীশক্তির সৃষ্টি করেন। তিনিই মহামায়ারূপী দেবী দুর্গা। দেবতাদের দেওয়া অস্ত্র দিয়ে মহিষাসুরকে বধ করেন দুর্গা। সেইকারণে বিশ্বাস করা হয়, এই উৎসবে অশুভ শক্তির বিনাশ করে শুভশক্তির প্রতিষ্ঠা হয়।
যদিও মহালয়ার সঙ্গে দুর্গাপুজোর প্রত্যক্ষভাবে কোনও যোগ নেই। বরং মহালয়ার রয়েছে পৃথক মাহাত্ম্য। দুর্গাপুজোর সঙ্গে যুক্ত উৎসব নয় মহালয়া। আসলে এই দিনটি পিতৃপুরুষের উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানানোর দিন। সারাবছর কোনও সময় তর্পণ না করলেও মহালয়ার তর্পণে সর্বসিদ্ধি বলে মনে করা হয়।
মহালয়ার পরদিনই নবরাত্রি উৎসবের সূচনা। এই দিনেই অনেক বাড়িতে দুর্গার মূর্তিতে চোখ আঁকা হয়। রামায়ন অনুসারে, রাবণ বসন্তকালে দেবী দুর্গার পুজো শুরু করেন, যা বর্তমানে বাসন্তী পুজো নামে পরিচিত। শ্রীরামচন্দ্র পরবর্তীকালে শরৎকালে দুর্গাপুজোর আয়োজন করেন, যা অকালবোধন নামে পরিচিত। এরপর থেকেই যুগ যুগ ধরে শারদীয়া দুর্গাপুজো চলে আসছে। আগে রাজবাড়ি কিংবা জমিদার বাড়িতেই দুর্গাপুজো হত। রথের দিন কাঠামো পুজো হত এবং মহাসপ্তমীর দিন নবপত্রিকা প্রবেশের পর দেবীর চক্ষুদান পর্ব হত। যেহেতু মহালয়ার দিন দেবীপক্ষের সূচনা হয়, তাই পরবর্তীকালে মহালয়ার দিনই প্রতিমার চক্ষু আঁকার চল শুরু হয়।
